• ঢাকা সোমবার
    ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১

১২৩ বছর আগে গ্রেফতার হওয়া সেই বট গাছটি আজও বন্দী

প্রকাশিত: জুন ১০, ২০২১, ০১:৪২ এএম

১২৩ বছর আগে গ্রেফতার হওয়া সেই বট গাছটি আজও বন্দী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

গাছ আমাদের পরম বন্ধু। ছোটবেলায় পাঠ্যবইতে এ কথা সবাই পড়েছি আমরা। মানবজীবনে গাছের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করারও উপায় নেই। শ্বাস প্রশ্বাস থেকে শুরু করে খাদ্য, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা সবকিছুতেই গাছের গুরুত্ব অপরিসীম। এই উপকারী বন্ধুটিই জেল খাটছে! তাও আবার ১২৩ বছর ধরে। কী অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন গাছের আবার জেল হয় কি করে? 

১৮৯৮ সালের কথা। তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা জেমস স্কুইড বোধহয় গাছকে বন্ধু ভাবতেন না। তাইতো, এই ব্যক্তি একটি গাছকেই দেন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আজও পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের ল্যান্ডি কোটাল সেনানিবাসে, গায়ে শিকল জড়িয়ে বন্দি হয়ে আছে সাজা পাওয়া বটগাছটি।

স্বভাবতই মনে প্রশ্ন আসবে, গাছ কি অপরাধ করতে পারে? কেন তাকে পেতে হলো সাজা? জানা যায়, একদিন মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফিরছিলেন জেমস স্কুইড। পথের ওপর হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ দাঁড়িয়ে যান তিনি। দেখেন, গাছটি তার দিকে এগিয়ে আসছে। বারবার গাছটিকে এগিয়ে আসতে মানা করলেও তা নাকি এগিয়ে যায় তার দিকে। ব্যস, গাছটিকে দেওয়া হয় শাস্তি। সারাজীবনের জন্য তাকে করা হয় শেকলবন্দি।

যদিও জেমসের এই গল্প বিশ্বাস করেনি কেউ। কারণ, পুরোটাই ছিল নেশার ঘোর। তবুও গাছটির মুক্তি মেলেনি। বটগাছটিকে যাবজ্জীবন দিয়েই থেমে যাননি জেমস। স্থানীয় বাসিন্দাদের হুমকি দেয়া হয়, কেউ গাছকে মুক্ত করলে শাস্তি পেতে হবে তাকেও।

কেউ কেউ অবশ্য দাবি করেন, পাকিস্তান-আফগান সীমান্তের লান্ডি কোটালের উপজাতি সম্প্রদায়কে ভয় দেখাতেই বটগাছকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেয় ব্রিটিশরাজ। যাতে ওই এলাকার উপজাতিরা বুঝতে পারেন, কোনও রকম বিরুদ্ধাচারণ করলে, দরকারে এমন শাস্তি তাদেরও দেওয়া হবে।

শতবর্ষ পার করেও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে এখনো ল্যান্ডি কোটাল সেনানিবাসে বন্দি অবস্থায় রয়েছে গাছটি। এখনো হয়তো গায়ে শেকল জড়িয়ে দিন গুণছে মুক্তির। আর তার গায়ে লেখা রয়েছে, ‘আই অ্যাম আন্ডার অ্যারেস্ট’।

ওই এলাকার ৬০ বছর বয়সী আদিবাসী ইসলাম খান সিনওয়ারি বলেন, আমার দাদা ফাতেহ খান সিনওয়ারি আমাকে জানিয়েছেন, ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা জেমস একজন নিষ্ঠুর প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। তিনি ১৮৯৮ সালে গাছটিকে শেকলে বন্দি করেন। 

তিনি আরও জানান, এ গাছ তাদের পারিবারিক সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। কিন্তু ব্রিটিশরা জোরপূর্বক তাদের কাছ থেকে এটি দখল করে রেখেছিল। বর্তমানে এটি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দখলে আছে। পর্যটকরা প্রায়ই গাছটি দেখতে আসেন।  
পেশোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মুখতিয়ার দুরানি জানিয়েছেন, ঘটনাটি মর্মান্তিক হলেও এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। ব্রিটিশ শাসনের সময় উপজাতি বহুল এই এলাকায় আইন কানুন কতটা ভয়াবহ ছিল, তার উদাহরণ হয়েই রয়েছে এই বন্দী বটগাছ। 

জেডআই

আন্তর্জাতিক সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ