প্রকাশিত: এপ্রিল ২৯, ২০২১, ০২:৩১ পিএম
করোনা
সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। মাত্র
এক সপ্তাহে ২০ লাখ নতুন
সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। সারিবদ্ধ লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সই বলে দিচ্ছে ভারতের
করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা।
কবরস্থান
ও শ্মশানে সাদা গাড়ির বহর।
হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের জন্য হাহাকার চলছে।
সেই সঙ্গে অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে
বলে মনে করছেন সাধারণ
মানুষ।
ভারতীয়রা
বলছেন, আমরা কেন ভয়
পাব না বলতে পারেন?
কী হচ্ছে তা তো দেখতেই
পাচ্ছি। অক্সিজেন নেই, হাসপাতালে বেড
নেই, অ্যাম্বুলেন্সেই রোগী মারা যাচ্ছে।
শ্মশানে চিতা জ্বালানোর মতো
কাঠও নেই।
ভারতের
রাজধানী নয়াদিল্লিকে ‘মৃত্যুনগরী’
বললেও কম বলা হবে।
কোভিডে দৈনিক মৃতের সংখ্যা ৭০০-তে পৌঁছে
গেছে। মহারাষ্ট্রের অবস্থা এর চেয়েও ভয়াবহ।
সেখানে দৈনিক মারা যাচ্ছে এক
হাজার মানুষ। দিল্লির বিভিন্ন শ্মশানের বাইরে রাস্তায় টোকেন নিয়ে লাশের দীর্ঘ
সারি। ২০ ঘণ্টা কেটে
যাচ্ছে আগুন পেতে। লাশ
ছিঁড়ে খাচ্ছে কুকুর। সে এক ভয়াবহ
দৃশ্য।
এক
শ্মশান থেকে আরেক শ্মশানে
ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত নিহতের
স্বজনেরা। কখনও জায়গা না
পেয়ে স্রেফ বরফ চাপা দিয়ে
৪৮ ঘণ্টাও বাড়িতেই শব রেখে দিচ্ছেন
অনেকে। কুকুরের দেহ পোঁতার জায়গা
এখন ব্যবহার করা হচ্ছে মানুষকে
দাহ করার জন্য। খবর
আনন্দবাজার পত্রিকার।
দিল্লির
সুভাষনগর শ্মশানে টিনের চালের নিচে সারি সারি
চিতা জ্বলছে। উড়ছে ছাই। এমনিতে নতুন
নয় এই দৃশ্য। কিন্তু
সেই ছাই উড়ে পড়ছে
পাশের যে চাতালে? সেই
চাতাল ধরেই এখন মৃতদেহের
সর্পিল রেখা। এক ঝলক তাকালেই
মাচার সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে
রাখা অন্তত ১৫-২০টি দেহ
চোখে পড়ছে।
পাশের
উঁচু বাঁধানো জায়গায় ঘি এবং প্রয়োজনীয়
সামগ্রী নিয়ে বসে রয়েছেন
স্বজনেরা। এক-দু’ঘণ্টা নয়, ১৬ থেকে
২০ ঘণ্টাও বসে থাকছেন কেউ
কেউ। যে প্লাস্টিকের ব্যাগে
মৃতদেহ মোড়া রয়েছে, তার ওপর নাম,
নম্বর লেখা। হাতছাড়া হওয়ার ভয় নেই। তাই
একটানা বসে না থেকে
পোড়া দেহের গন্ধ এবং ধোঁয়া
থেকে বেরিয়ে মাঝে মধ্যে বাইরে
ঘুরে আসছেন অনেকে।
করোনাভাইরাসের
ভয়াল থাবায় ‘বিপর্যস্ত’ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ভারত এখন দ্বিতীয়
সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। দেশটিতে প্রতিদিনই করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত ও
মৃত্যুর বিশ্ব রেকর্ড গড়ছে। টানা দ্বিতীয় দিনের
মতো দেশটিতে তিন হাজারের বেশি
লোকের মৃত্যু হলো।
মোট
মৃত্যু দুই লাখ ছাড়ানোর
পরদিনই নতুন আক্রান্ত ও
মৃত্যুতে রেকর্ড গড়ল ভারত। দেশটিতে
গত ২৪ ঘণ্টায় মারা
গেছে রেকর্ড তিন হাজার ৬৪৭
জন। আর আক্রান্ত হয়েছেন
তিন লাখ ৭৯ হাজার
৪৫৯ জন। ভারতে করোনার
ইতিহাসে এটিই সর্বোচ্চ আক্রান্ত
ও মৃত্যুর রেকর্ড।
বৃহস্পতিবার
(২৯ এপ্রিল) সকাল পর্যন্ত দেশটিতে
মোট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এক কোটি ৮৩
লাখ ৬৮৮ হাজার ৯৬৭
জন এবং মারা গেছেন
দুই লাখ চার হাজার
৮১২ জন। আক্রান্তের দিক
থেকে দেশটি বিশ্বে দ্বিতীয় ও মৃত্যুতে তৃতীয়
অবস্থানে রয়েছে।
এ
দিকে গেল কয়েকদিনের ধারাবাহিকতায়
বুধবারও (২৮ এপ্রিল) করোনায়
ভারতে তিন হাজারের বেশি
মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে তিন লাখ ৬২
হাজার। এর মধ্যে শুধু
মহারাষ্ট্রেই এক দিনে মারা
গেছে রেকর্ড এক হাজার মানুষ।
আর তাই রাজ্যটিতে নতুন
করে লকডাউনের মেয়াদ ১৫ দিন বাড়ানোর
সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
দেশটির
গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ভারতে আট দিন ধরে
তিন লাখের বেশি করোনা রোগী
শনাক্ত হচ্ছে। তার আগে ১৫
এপ্রিল থেকে দেশটিতে প্রতিদিন
দুই লাখের বেশি করোনা রোগী
শনাক্ত হচ্ছিল। আর ৯ দিন
ধরে ভারতে দুই হাজারের বেশি
মানুষ করোনায় মারা যাচ্ছে।
ভারতে
কয়েক দিন ধরেই করোনা
রোগী শনাক্তে বিশ্ব রেকর্ড হচ্ছে। বিশ্বের কোনো দেশে এক
দিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক করোনা রোগী শনাক্তের রেকর্ডটি
গত ২২ এপ্রিলের আগ
পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের দখলে ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে
গত জানুয়ারিতে এক দিনে সর্বোচ্চ
২ লাখ ৯৭ হাজার
৪৩০ জনের করোনা শনাক্ত
হয়েছিল।
জেডসি/এম. জামান