আন্তর্জাতিক ডেস্ক
রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেন আক্রমনের ষষ্ঠ দিন পেরিয়েছে। ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশগুলোতে ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে শরণার্থীদের চাপ। একটু শান্তি ও নিরাপত্তার আসায় প্রিয়জনকে যুদ্ধের ময়দানে রেখে পোল্যান্ড, রোমানিয়া, মলদোভা সহ আরো অনেক দেশে পারি জমিয়েছে ইউক্রেনীয়রা। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন জানিয়েছে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৬,৭০,০০০ ইউক্রেনীয়রা দেশ ছেড়েছে।
কোথাও কোনো দম ফেলার সময় নেই। আছে শুধু দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। নিজের সন্তান ও বাবা মায়ের নিরাপত্তায় নিরন্তর ছুটে চলা। হয়ত তাদের শরীর টা এসেছে কিন্তু মন পরে আছে সুদূর ইউক্রেনে যেখানে সম্মুখ সমরে লড়ে যাচ্ছে তাদের বাবা ও সন্তান। আর বাবা মায়েদের নিরাপদ আছে বলে আস্বস্ত করতে পেরে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে দেশত্যাগ করা বিদেশি শিক্ষার্থীরা।
দিনিপ্রো অধিবাসী আলেক্সান্দ্রা । তিনি দেশ ছাড়তে মোটেও চাচ্ছেন না। ইউক্রেনে ফেলে আসা মানুষদের সঙ্গে যুদ্ধ করে দেশ রক্ষা করতে চান। আলজাজিরার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন 'আমি দিনিপ্রো ছাড়তে চাইনা। আমি অস্ত্র হাতে নিয়ে আমার মাকে (দেশ) বাঁচাতে চাই। কিন্তু আমার মা আমাকে বারণ করে বলেছে আলেক্স তোকে যে তোর অবুঝ মেয়েটাকে যে দেখভাল করতে হবে।'
৩৭ বছর বয়সী এক কন্যার জননী আলেক্সান্দ্রা আরো বলেন 'আমি ভালোমতোই বুঝেছি পুতিন পুরো ইউরোপকে চাইছে। তাই সবার উচিত ইউক্রেনীয়দের পাশে দাঁড়ানো।'
ফেব্রুয়ারী ২৪ তারিখ পর্যন্ত হাঙ্গেরিতে পৌঁছেছে ৮৫০০০ জন ইউক্রেনীয়। ১৩৫ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত সীমান্তে প্রচন্ড ঠান্ডায় কষ্ট পাওয়া ইউক্রেনীয়দের গরম চা, স্যান্ডউইচ এমনকি তাদের সন্তানদের সঙ্গে খেলে সান্তনা দিচ্ছে হাঙ্গেরিওয়রা।
'কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। যখন আমি জানলাম পুতিন আমাদের সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ করছে। আমি আমার ২ সন্তানদের বলেছিলাম আমাদের দেশ ছাড়ার সময় হয়ে এসেছে।' অশ্রুসজল চোখে আলজাজিরায় বলছিলেন নাটায়েল। 'ইউক্রেন আক্রমন অপ্রত্যাশিত ছিল।' যুদ্ধে কিয়েভে বাবা কে শেষ বিদায় দিয়ে ইউক্রেন ছাড়লেন নাটায়েল।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন জানিয়েছে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৬,৭০,০০০ ইউক্রেনীয়রা দেশ ছেড়েছে। এজেন্সি আরো বলেছে এ সমস্যা সমাধান না করা গেলে এই পরিস্থিতি শতাব্দীর ভয়াবহ শরণার্থী সংকটে পড়বে গোটা বিশ্ব। তারা বলেছে মানুষের এতো চাপে পোল্যান্ডে প্রত্যেক শরণার্থীদের ৬০ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়, সে তুলনায় হাঙ্গেরি সহজ হওয়ায় এখানেই তাদের লক্ষ্য থাকে।
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অর্বান বলেছেন 'আমারা ইউক্রেনীয়দের গ্রহণ করবো ও যত্ন নেবো এবং আমরা ভালোভাবেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে চাই।' সরকার হাঙ্গেরিও সীমান্তে মানবিক সহায়তায় সেনা মোতায়ন করেছে। তবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞায় সমর্থন থাকলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রী পিটার ঝিজারতো সোমবার বলেছে 'আমাদের সরকার ইউক্রেনীয়দের কোনো অস্ত্র সরবরাহ করবেন।'
সূত্রঃ আলজাজিরা
এইচএ
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন