প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২২, ০৮:১৫ পিএম
দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটকে হিজাববিরোধী আন্দোলনে বজরং দলের এক কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় সেখানকার একটি জেলায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবার হার্ষা নামে নিহত সেই যুবকের মরদেহ নিয়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো অন্তিমযাত্রাপথে শহরের মুসলিম মহল্লাগুলোতে ব্যাপক হামলা চালায়। অনেক গাড়ি ও মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেয় তারা। অনেক মুসলমানের দোকানপাটে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় তারা। খবর বিবিসির।
উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একনিষ্ঠ কর্মী হার্ষা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের নাম দিয়েছিল ‘হার্ষা হিন্দু’। এই আইডি থেকে হিজাব, জিহাদ ইত্যাদি নিয়ে নিয়মিত ইসলামবিরোধী পোস্ট করত সে। রোববার রাতে শিবামোগা শহরের এন্ট্রি রোড এলাকায় জনা পাঁচেক অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতকারী হত্যা করে এই ২৬ বছর বয়সী উগ্র হিন্দু যুবককে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই হত্যাকাণ্ডের পর পরিস্থিতি দ্রুত অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। কর্ণাটকের বিজেপি মন্ত্রী কে ইশ্বারাপ্পা হত্যাকাণ্ডের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মুসলমানদের ওপর দোষ চাপিয়ে মন্তব্য করেন, মুসলমান গুণ্ডারাই হার্ষাকে খুন করেছে।
সোমবার সকাল থেকেই উগ্রপন্থি সংগঠন বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের শত শত কর্মী হার্ষার বাড়ির সামনে জড়ো হয়। এদিন বিকালেই কয়েকশ বাইক, গাড়ি আর গেরুয়া পতাকা নিয়ে শুরু হয় অন্তিমযাত্রার মিছিল। টানা ৫-৬ ঘণ্টা ধরে এই মিছিল চলে। আর মিছিলজুড়েই শিবামোগা শহরের সংখ্যালঘু নিরীহ মুসলমানদের ওপর নারকীয় তাণ্ডব চালায় উগ্র হিন্দুরা। তাদের কবল থেকে রক্ষা পাননি সাংবাদিকরাও।
মিছিল শেষে হিন্দুদের এই হামলায় অন্তত ২০ জন গুরুতর আহত হন। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে ও র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স ফ্ল্যাগ মার্চ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে।
শিবামোগা জেলার ভারপ্রাপ্ত বিজেপি মন্ত্রী কে.সি. নারায়ণ গৌড়া এরই মধ্যে ঘোষণা করেছেন, হার্ষা হত্যায় নাদিম ও কাসিফ নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা দুজনই দাগী অপরাধী এবং তাদের কঠিন শাস্তির আওতায় আনা হবে।
আসলাম পাশা নামে এক স্থানীয় ব্যবসায়ী হিন্দুস্তান টাইমসকে জানান, বিজেপি নেতাদের নানা উস্কানিমূলক বক্তব্যেই তারা আক্রমণের নিশানায় পরিণত হয়েছেন। মোহাম্মদ আলী নামের আরেক দোকানি জানান, হামলাকারীরা তার দুটি স্কুটার ও গাড়ি ভেঙে ফেলেছে। হামলা করেছে বাসভবনেও।
এদিকে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নিহত যুবক হার্ষার বিরুদ্ধেও হামলা ও হত্যা প্রচেষ্টার অন্তত পাঁচটি মামলা ছিল। যেসব হামলা চালানো হয় প্রতিদ্বন্দ্বী নানা মুসলমান সংগঠনের বিরুদ্ধে। তবে নিহতের পরিবারের দাবি, হার্ষা ছিল সৎ ও শান্তিপ্রিয় ছেলে। এই হত্যার বিচার চায় তারা।
অন্যদিকে হার্ষার মৃত্যু নিয়ে বিজেপি ও কংগ্রেস নানা বিবৃতি দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে তুলেছে। আবার হার্ষা হত্যার বিচার চেয়ে টুইট করেছেন কঙ্গনা রানাওয়াত, রাভিনা ট্যান্ডনসহ অনেক বলিউড তারকা।
এইচএ/এফএ