• ঢাকা সোমবার
    ০৭ এপ্রিল, ২০২৫, ২৪ চৈত্র ১৪৩১

রাশিয়ার গ্যাস পাইপলাইন বন্ধ করার হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২২, ০১:০৪ এএম

রাশিয়ার গ্যাস পাইপলাইন বন্ধ করার হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের

হাসিব আবেদীন

রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে তাদের পশ্চিম ইউরোপে গ্যাস সরবরাহকারী পাইপলাইন বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) ওয়াশিংটন এ হুমকি প্রদান করে।


বার্লিনে সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে ‘নর্ড স্ট্রিম-২’ গ্যাস পাইপ প্রকল্পটি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে পারে।


পশ্চিমা মিত্ররা বলেছে, তারা রাশিয়ার অর্থনীতিকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবে। তাদের সাম্প্রতিক প্রতিক্রিয়া রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।


এদিকে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার সকল পরিকল্পনা অস্বীকার করেছে। পশ্চিমাদের কাছে তাদের প্রভাব থেকে অধিকতর নিরাপত্তা ও ইউক্রেনকে ন্যাটোর পূর্ণ সদস্য না করার দাবি জানিয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্র মস্কোর কাছে ‘গুরুতর কূটনৈতিক পথে এগিয়ে যাওয়ার’ প্রস্তাব দিয়ে রাশিয়ার এই মূল দাবিকে ‘পাশ কাটিয়ে’ যায়।


কী এই নর্ড স্ট্রিম প্রকল্প:


বাল্টিক সাগরের নিচে ১ হাজার ২২৫ কিলোমিটার (৭৬০ মাইল) দৈর্ঘ্যের নর্ড স্ট্রিম-২ পাইপলাইনটি তৈরি করতে রাশিয়ার সময় লেগেছিল পাঁচ বছর। খরচ হয়েছিল ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই জ্বালানি প্রকল্প জার্মানিতে রাশিয়ার গ্যাস রফতানি দ্বিগুণ করেছে। পাইপলাইনটি প্রতি বছর জার্মানিতে ৫৫ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস সরবরাহ করবে। রাশিয়ান রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গ্যাস ফার্ম গ্যাজপ্রম এই পাইপলাইনটি পরিচালনা করছে।


গত বছর সেপ্টেম্বরে পাইপলাইন নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। গ্যাজপ্রম ইউরোপীয় নিয়ন্ত্রকদের কাছ থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু করার অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু দেশের আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় জার্মান কর্তৃপক্ষ গত নভেম্বরে এই প্রকল্প চালু করার অনুমোদন দেয়নি।


সমালোচকরা বলছেন, পাইপলাইনটি রাশিয়ার পররাষ্ট্র নীতির একটি হাতিয়ার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন এবং পোল্যান্ড শুরু থেকে তীব্র বিরোধিতা করে আসছে। ইউক্রেনও চাইছে এই পাইপলাইন বন্ধ হোক।


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আশঙ্কা করছে- এই পাইপলাইনটি গোটা ইউরোপকে রাশিয়ার জ্বালানির ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল করে তুলবে। এই পাইপলাইন দিয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন বার্লিন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর ক্ষমতার ছড়ি ঘুরাতে পারবে।


রাশিয়া ইউক্রেন দিয়ে ইউরোপে তার বেশিরভাগ গ্যাস পাঠায়। এবার নর্ড স্ট্রিম-১ এবং ২ দেশটির ভেতর দিয়ে যায়নি। এতে কিয়েভ "ট্রানজিট ফি বাবদ" ১.৮ বিলিয়ন ইউরো হারায়। ইউক্রেন দাবি করেছে, পশ্চিমাদের সঙ্গে তার উষ্ণ সম্পর্কের জন্য এমন শাস্তি পেতে হয়েছে। ইউরোপে রাশিয়ান গ্যাস সরবরাহের ট্রানজিট দেশ হিসেবে উপেক্ষা করায় পোল্যান্ডও অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েছে।


পাইপলাইনটিকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনে পশ্চিমারা পুতিনকে এই বার্তা দিতে চাইছে, ইউক্রেনকে আক্রমণ করলে রাশিয়াকে চরম মূল্য দিতে হবে।


যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা সচিব বেন ওয়ালেস পাইপলাইনটিকে মস্কোর বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের "চাল" হিসেবে অভিহিত করেছেন। ওয়ালেস বলেছেন- এই পাইপলাইনটি "খেলা ঘুরিয়ে" দিতে সক্ষম।


রাশিয়ার কাছে পাইপলাইনটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি সরাসরি ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ করছে। যা জ্বালানির জন্য ইউরোপকে তাদের ওপর নির্ভরশীল করছে।


রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা পাইপলাইনের নিষেধাজ্ঞাকে মস্কোর জন্য একটি আঘাত হিসেবে দেখছে। একদিকে দেশটি রাজস্ব হারাবে আর ইউরোপকে রাশিয়ার শক্তির ওপর নির্ভর করতে হবে না।


তবে ইউরোপ ইতোমধ্যে ক্রমবর্ধমান জ্বালানির দাম এবং রাশিয়ান গ্যাসের স্বাভাবিকের চেয়ে কম সরবরাহের ধকল সইছে।


জার্মানিতে এই মুহূর্তে পাইপলাইনের গ্যাসের প্রচুর চাহিদা আছে। এই গ্যাস দেশের ২৬ মিলিয়ন পরিবারকে উষ্ণ রাখতে পারবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে দেশটির স্থানান্তর প্রক্রিয়া সহজ করবে।


জার্মানির অর্থনীতি বিষয়কমন্ত্রী রবার্ট হ্যাবেক বুধবার সতর্ক করে বলেছেন "নিষেধাজ্ঞা দিলে জার্মান অর্থনীতিকে সুরক্ষিত রাখার কেউ থাকবে না।"


কিন্তু পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাশিয়া ইউক্রেনের মধ্য দিয়ে বিদ্যমান পাইপলাইন থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিলে বড় বিপর্যয় নেমে আসবে।


কিছু দেশের জন্য গ্যাসের বিকল্প সরবরাহ আছে। জার্মানি নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস, ব্রিটেন এবং ডেনমার্ক থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করতে পারে।


তবে ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্যাস সরবরাহকারী নরওয়ে বলেছে, তারা  ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাস সর্বোচ্চ সরবরাহ করছে। তবে তারা রাশিয়ার সরবরাহ প্রতিস্থাপন করতে পারবে না।


ইউরোপের জন্য গ্যাস সরবরাহ সুরক্ষিত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের গ্যাস-উৎপাদনকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রাকৃতিক গ্যাস পরিবহনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে।


ডাকুয়া/


আর্কাইভ