সিটি নিউজ ডেস্ক
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত বেশ শান্তিপ্রিয় একটি দেশ। দেশটি বাংলাদেশিদের কাছে অন্যতম শ্রমবাজার হিসেবেই পরিচিত। তবে সেই দেশটির রাজধানী আবুধাবির বিমানবন্দরে রকেট হামলায় তেলের ট্যাঙ্কারে বিস্ফোরণ ঘটেছে। এতে তিনজন নিহত এবং আরও ছয়জন আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে দুইজন ভারতীয় এবং একজন পাকিস্তানি নাগরিক।
সোমবার (১৭ জানুয়ারি) কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরান-ইয়েমেনের মদদপুষ্ট হুতি বিদ্রোহীরা ওই হামলা চালিয়েছে। এদিকে হুতি বিদ্রোহীরা দাবি করেছে, তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতে হামলা চালিয়েছে। অপরদিকে আমিরাত কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাজধানী আবুধাবির দুই স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ড্রোন হামলার কারণে আগুন লেগে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আবুধাবি পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হামলায় বিমানবন্দরের কাছে মুসাফা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকায়। সেখানেই ছিল তেল উৎপাদন সংস্থা এডিএনওসি’র গোডাউন। বিস্ফোরণের ফলে বিমানবন্দরের কাছ ঘেঁষে থাকা একটি কনস্ট্রাকশন সাইটে আগুন লেগে যায়।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা ওয়াম দেশটির পুলিশের এক বিবৃতির বরাত দিয়ে বলেছে, ‘প্রাথমিক তদন্তে উভয় স্থানে ছোট বিমানের কিছু অংশ পাওয়া গেছে; যা সম্ভবত ড্রোনের এবং এ কারণে বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।’ তবে এ ঘটনায় উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়নি এবং পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু হয়েছে বলে পুলিশের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
এদিকে দুই ভারতীয় নাগরিক নিহত হওয়ার পর সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সঞ্জয় সুধীর বলেন, ‘যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য আমরা প্রস্তুত। আর আপনারা শান্ত থাকুন। সংযুক্ত আরব আমিরাত খুব শান্তিপূর্ণ জায়গা।’
এদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি জাহাজ ইয়েমেনে আটকে রেখেছে হুতি বিদ্রোহীরা। জাহাজটি ছেড়ে দেয়ার জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ থেকে আহ্বান জানানো হলেও তাতে রাজি হয়নি হুতিরা। চলতি মাসের প্রথম দিকে হুদাইদা বন্দরের কাছ থেকে ১১ ক্রুসহ জাহাজটি আটক করে হুতি যোদ্ধা ও ইয়েমেনি সেনারা।
হুতি যোদ্ধারা বলছে, আমিরাতি জাহাজে সামরিক সরঞ্জামাদি বহন করা হচ্ছিল। তবে আরব আমিরাত দাবি করছে, আটক জাহাজটি প্রকৃতপক্ষে একটি বেসামরিক কার্গো জাহাজ এবং আন্তর্জাতিক পানিসীমা থেকে হুতিরা তা আটক করেছে।
আমিরাত আরও বলছে, জাহাজটিতে একটি ফিল্ড হাসপাতালের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বহন করা হচ্ছিল।
আমিরাতের এ দাবি নাকচ করে হুতি নেতা হোসেইন আল-আজিজ বলেছেন, জাহাজটি সামরিক সরঞ্জামাদি বহন করছিল। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমিরাতের এ জাহাজ শিশুদের জন্য খেলনা বহন করছিল না, বরং উগ্রবাদীদের জন্য অস্ত্র বহন করছিল।’
সৌদি জোটের সদস্য হিসেবে ২০১৯ সালে ইয়েমেনে সামরিক উপস্থিতি অনেকাংশে কমিয়ে আনে সংযুক্ত আরব আমিরাত। তারপরও দেশটিতে সশস্ত্র ও প্রশিক্ষিত ইয়েমেনি বাহিনীর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে আমিরাত।
উল্লেখ্য, ইয়েমেনের হুতি হচ্ছে একটি শিয়া সম্প্রদায়, যারা দেশটির রাজধানী সানা ও উত্তরাঞ্চলে বসবাস করে থাকে। এই হুতিদের একটি অংশ ইয়েমেনের সীমান্তবর্তী সৌদি আরবের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা নাজরানেও বসবাস করে থাকে।
ইয়েমেনে ৯৯.৫ শতাংশ মুসলমান, যার মধ্য ৭০ শতাংশ সুন্নি ও ৩০ শতাংশ শিয়া। এই ৩০ শতাংশ শিয়ারাই মূলত হুতি সম্প্রদায়। এই হুতিদের ইরানের শিয়া সরকার, ইরাকের শিয়া সরকার ও লেবাননের হিজবুল্লাহর সহযোগী সংগঠন বলে মনে করা হয়।
এমএএন/এম. জামান
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন