• ঢাকা বুধবার
    ০৮ জানুয়ারি, ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১
রোড সেফটির প্রতিবেদন

২০২৪ সালে সড়কে প্রাণ ঝরেছে ৭২৯৪ জনের, ক্ষতি ২১ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২৫, ০১:০০ পিএম

২০২৪ সালে সড়কে প্রাণ ঝরেছে ৭২৯৪ জনের, ক্ষতি ২১ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বিদায়ী ২০২৪ সালে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ হাজার ৮৮৬ কোটি ৩২ লাখ টাকার মানবসম্পদের ক্ষতি হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ ঝরেছে ৭ হাজার ২৯৪ জনের। বুধবার (৮ জানুয়ারি) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। 

এতে বলা হয়, ২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ মানব সম্পদের ক্ষতি হয়েছে তার আর্থিক মূল্য ২১ হাজার ৮৮৬ কোটি ৩২ লাখ ৬৪ হাজার টাকার মতো। যেহেতু সড়ক দুর্ঘটনার অনেক তথ্য অপ্রকাশিত থাকে, সেজন্য এই হিসাবের সাথে আরও ৩০ শতাংশ যোগ করতে হবে। আন্তর্জাতিক সড়ক মূল্যায়ন প্রোগ্রামের (আইর‌্যাপ) পদ্ধতি অনুযায়ী হিসাবটি করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ যানবাহন বা সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার তথ্য না পাওয়ার কারণে সম্পদ ক্ষতিগ্রস্তের আর্থিক পরিমাপ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।

গণমাধ্যমে যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, প্রকৃত ঘটনা তার চেয়ে অনেক বেশি। এই বিবেচনায় এ বছর সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দেশের জিডিপি’র ১.৫ শতাংশের বেশি হতে পারে। এ সময় দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬ হাজার ৯২৭টি। নিহত হয়েছেন ৭ হাজার ২৯৪ জন এবং আহত হয়েছেন ১২ হাজার ১৯ জন।

নিহতের মধ্যে নারী ৮৯৩ (১২.২৪ শতাংশ), শিশু ১ হাজার ১৫২ (১৫.৭৯ শতাংশ)। ২ হাজার ৭৬১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ২ হাজার ৬০৯ জন, যা মোট নিহতের ৩৫.৭৬ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৯.৮৫ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৫৩৫ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২১.০৪ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৯৮৪ জন, অর্থাৎ ১৩.৪৯ শতাংশ।

এই সময়ে ১১৮টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৫২ জন নিহত, ১৬১ জন আহত এবং ৩৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ৩৪৭টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩২৪ জন নিহত এবং ২৭৭ জন আহত হয়েছেন। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম এবং সংস্থার নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে ভোরে ৩৮৭টি (৫.৫৮ শতাংশ), সকালে ১ হাজার ৮৭৪টি (২৭ শতাংশ), দুপুরে ১ হাজার ৩২৯টি (১৯.১৮ শতাংশ), বিকালে ১ হাজার ১১৪টি (১৬.০৮ শতাংশ), সন্ধ্যায় ৬৭৫টি (৯.৭৪ শতাংশ) এবং রাতে ১ হাজার ৫৪৮টি (২২.৩৪ শতাংশ)।

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২২.৮৩ শতাংশ, প্রাণহানি ২৫.২২ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৫ শতাংশ, প্রাণহানি ১৪.১৩ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৮.৭৩ শতাংশ, প্রাণহানি ১৯.৩৭ শতাংশ, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১২.১৫ শতাংশ, প্রাণহানি ১১.৭৬ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৬.৩৩ শতাংশ, প্রাণহানি ৬.২৬ শতাংশ, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৬.২৭ শতাংশ, প্রাণহানি ৬.০৭ শতাংশ, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ১০.৫০ শতাংশ, প্রাণহানি ৯.৮৫ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৮.০৯ শতাংশ, প্রাণহানি ৭.৩০ শতাংশ ঘটেছে।

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১৫৮২টি দুর্ঘটনায় ১৮৪০ জন নিহত হয়েছেন। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ৪৩৫টি দুর্ঘটনায় ৪৪৩ জন নিহত হয়েছেন। রাজধানীর সড়ক দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাজধানীতে ৩৯৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪৬ জন নিহত এবং ৪৮২ জন আহত হয়েছেন। পুরুষ ৭৬.৮২ শতাংশ, নারী ১৩.৪১ শতাংশ এবং শিশু ৯.৭৫ শতাংশ। নিহতদের মধ্যে পথচারী ৫১.৬২ শতাংশ, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ৩৯ শতাংশ এবং বাস, রিকশা, সিএনজি ইত্যাদি যানবাহনের চালক ও আরোহী ৯.৩৪ শতাংশ।

সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল ও তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোয় ঘটছে এসব দুর্ঘটনা। এছাড়া দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি ও গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজির কারণেও। 

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ১০ দফা সুপারিশও করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। এগুলো হলো: দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে, চালকদের বেতন-কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট করতে হবে, বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে, পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা রাস্তা (সার্ভিস লেন) তৈরি করতে হবে, পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে, গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে, রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়ক পথের উপর চাপ কমাতে হবে, টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন করতে হবে, ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ