প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৯, ২০২১, ১২:৪১ এএম
করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট বিদ্যুতের গতিতে ইউরোপজূড়ে ছড়িয়ে পড়ছে
এবং আগামী বছরের শুরুর দিকে ধরনটি ফ্রান্সে আধিপত্যশীল হয়ে উঠতে পারে বলে সতর্ক
করে দিয়েছেন ফরাসি প্রধানমন্ত্রী জ্যঁ ক্যাসটেক্স।
শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্য থেকে ফ্রান্সে প্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর
ভ্রমণ বিধিনিষেধ আরোপের কয়েক ঘণ্টা আগে তিনি এই মন্তব্য করেন। ওই অঞ্চলে
যুক্তরাজ্যেই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ওমিক্রন রোগী পাওয়া গেছে। শুক্রবারও
দেশটিতে ১৫ হাজার মানুষের ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।
ইউরোপ জুড়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা করোনাভাইরাসের নতুন ঢেউ সামলানোর প্রস্তুতি
নিচ্ছেন। সংক্রমণের শঙ্কায় জার্মানি, রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডস সরকার শুক্রবার নতুন করে অতিরিক্ত
বিধিনিষেধ আরোপের ঘোষণা দিয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, ইউরোপে ইতোমধ্যে ৮ কোটি ৯০ লাখ মানুষ করোনায়
আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ১৫ লাখ।
শুক্রবার জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী কার্ল লটারব্যাচ সাংবাদিকদের বলেছেন,
দেশকে অবশ্যই এমন একটি
চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত হতে হবে, আমরা এখনও যার মুখোমুখি হইনি। সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় ফ্রান্স, নরওয়ে এবং ডেনমার্ককে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ
হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে জার্মানির জনস্বাস্থ্য সংস্থা।
যদিও শনিবার জার্মানিতেও ৪২ হাজারের বেশি মানুষের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
তবে নতুন করে করোনা আক্রান্তের এই সংখ্যা আগের দিন অর্থাৎ শুক্রবারের তুলনায়
সামান্য কম। শুক্রবার দেশটিতে ৫০ হাজার মানুষ করোনা সংক্রমিত হয়েছেন।
নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের কারণে আয়ারল্যান্ড সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের
মুখোমুখি হয়েছে। আয়ারল্যান্ডের নেতা মাইকেল মার্টিন বলেছেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত সংক্রমণের যে চিত্র দেখতে
পেয়েছি, তার চেয়েও অতিরিক্ত হারে
সংক্রমণ দেখা যেতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।’
যুক্তরাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৩ হাজারের বেশি মানুষের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত
হয়েছে। দেশটিতে সংক্রমণের এই উল্লম্ফনে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা রাখছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ১১টা থেকে যুক্তরাজ্য থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং
পর্যটন সংশ্লিষ্ট লোকজনের ফ্রান্স ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে প্যারিস।
নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার আগে ডোভার বন্দর এবং ইউরোস্টার টার্মিনালে মানুষের
দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। যারা সেখানে ফ্রান্সে প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন।
ইউরোপীয় অঞ্চলে শুধু ফ্রান্সই কঠোর ভ্রমণ বিধিনিষেধ আরোপ করেনি। বরং
চলতি সপ্তাহে ইতালি, গ্রিস এবং
পর্তুগাল ইউরোপ থেকে আগত পর্যটকদের জন্য করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ ফল দেখানো
বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এমনকি যারা করোনা টিকা নিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রেও এই
সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
নতুন বিধিনিষেধ কার্যকরের আগে ক্যাসটেক্স বলেছেন, ‘সংক্রমণের ঢেউ ঠেকাতে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের
অংশ হিসেবে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ফ্রান্স যেসব নতুন বিধিনিষেধ আরোপ
করেছে, তার মধ্যে রয়েছে
ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজের ব্যবধান কমানো এবং রেস্তোরাঁ ও দূরপাল্লার
গণপরিবহনে টিকার পূর্ণ ডোজ নেয়া থাকতে হবে।’
এছাড়া আসন্ন নববর্ষের আগের দিন উদযাপন এবং আতশবাজি নিষিদ্ধ করা হয়েছে ফ্রান্সে। শনিবার ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওলিভার ভেরান বলেছেন, ‘দেশে নতুন করে যারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের মধ্যে ৭ থেকে ১০ শতাংশ ওমিক্রনে সংক্রমিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।’ এদিকে, নেদারল্যান্ডসের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, দেশটিতে ‘কঠোর’ লকডাউন আরোপ করতে হতে পারে।
অর্ণব/এম. জামান