প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২১, ১০:২৩ পিএম
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ঐতিহাসিক স্থল সীমানা চুক্তি পারস্পরিক আলোচনার
মাধ্যমে সীমান্ত বিরোধ মীমাংসার ক্ষেত্রে এমন এক সময়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যখন ‘কিছু’ দেশ বলপ্রয়োগের মাধ্যমে সেটি নষ্ট করার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য
করেছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মনোজ নারাভানে।
বুধবার নয়াদিল্লিতে সেন্টার ফর ল্যান্ড ওয়ারফেয়ার স্টাডিজের আয়োজিত
‘ভারত-বাংলাদেশ : বন্ধুত্বের ৫০ বছর’ শীর্ষক এক সেমিনারে এই মন্তব্য করেন তিনি।
দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় লাদাখে চীনের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ভারতের যখন উত্তেজনা
চলছে এবং এই উত্তেজনা প্রশমনে দফায় দফায় আলোচনা চললেও তা খুব বেশি ফলপ্রসূ হয়নি; তখন জেনারেল মনোজ নারাভানে প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্কের কথা বললেন।
সেমিনারে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ ইমরান ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের
দীর্ঘদিনের ঝুলে থাকা পানি বণ্টনের বিষয়টি ‘আবেগপ্রবণ সমস্যা’ বলে অভিহিত করেন।
একই সঙ্গে পুরনো এই সমস্যা সমাধানে মনোযোগ দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
জেনারেল নারাভানে বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের ঐতিহাসিক স্থল সীমান্ত চুক্তি
পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে কীভাবে বিবাদপূর্ণ সীমান্ত সমস্যার
সমাধান করা যায়, তার অনন্য উদাহরণ তৈরি করেছে। এটা এমন এক সময়ে
হয়েছে যখন নির্দিষ্ট কিছু দেশ বলপ্রয়োগের মাধ্যমে, প্রথাগত নিয়ম
এবং প্রটোকলকে উপেক্ষা করে এবং অন্যদের আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সম্পূর্ণ অবজ্ঞা
প্রদর্শন করে স্থিতাবস্থা বদলে দেয়ার চেষ্টা করছে।’
তিনি বলেছেন, ‘আমাদের মধ্যে এই চুক্তি তিনটি এমএস— পারস্পরিক
শ্রদ্ধা, (পারস্পরিক) বিশ্বাস এবং (পারস্পরিক)
প্রতিশ্রুতির প্রতীক।’
পারস্পরিক চুক্তির মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে স্থল ও সমুদ্রসীমা সমস্যার সমাধান
করেছে বাংলাদেশ ও ভারত। চলতি বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার হীরক জয়ন্তী এবং
ভারত-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পালিত হচ্ছে। এ বিষয়ে ভারতীয়
সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল নারাভানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর নিয়ে একটি বই
প্রকাশ করেছেন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা ও সৈন্যদের
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সংকলন এই বই।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ ইমরান বলেছেন, ‘দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরও সম্প্রসারিত হয়েছে। আমরা
৩০ বছরের চুক্তির মাধ্যমে গঙ্গার পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান করেছি। কিন্তু আমাদের
আরও কিছু অভিন্ন নদী রয়েছে, যেগুলোর দিকে মনোযোগ দেয়া দরকার। পানি বণ্টন
বাংলাদেশের জন্য একটি আবেগময় সমস্যা এবং সহানুভূতির সঙ্গে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের
ভিত্তিতে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ভারতের অনুরোধে ত্রিপুরার জনগণের স্বার্থে ফেনী
নদীর পানি প্রত্যাহারে নয়াদিল্লিকে বাংলাদেশ অনুমতি দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে দুই
দেশের মধ্যে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি ঝুলে আছে।’
অতীতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে সমস্যা ছিল উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অগ্রগতি হয়েছে।
ভারতে রফতানি নিয়ে বাংলাদেশের কিছুটা অস্বস্তি থাকলেও বাণিজ্য ১০ বিলিয়ন ডলারে
পৌঁছেছে। বাংলাদেশের মোট রফতানির মাত্র ১ দশমাংশ ভারতে করা হয় এবং ভারতের সঙ্গে
বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতা রয়েছে।’
স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রাণ হারানো ভারতীয় সৈন্যদের শ্রদ্ধায় ত্রিপুরা সীমান্তের
কাছে আশুগঞ্জে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ। হাইকমিশনার বলেন, ‘আমাদের মাতৃভূমিকে মুক্ত করার জন্য ভারতীয় সৈন্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে
পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে।’
দ্বিপক্ষীয় পারস্পরিক সামরিক সহযোগিতার বিষয়ে ভারতের সেনাবাহিনীর প্রধান
জেনারেল নাভারানে বাংলাদেশ এবং ভারত একত্রে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সবচেয়ে
বেশিসংখ্যক সৈন্য পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসবিরোধী
লড়াইয়ের ক্ষেত্রে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি
পেয়েছে।’
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থানের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমরা ভারতের বিরুদ্ধে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে এমন সন্ত্রাসী
গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রচেষ্টা সম্পর্কে অবগত। বাংলাদেশের স্বার্থের
বিরুদ্ধে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে আমাদের মাটি ব্যবহার করতে দেবো না।’
শামীম/এম. জামান