প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২১, ০৫:০৮ পিএম
ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথ নৌমহড়ায় অংশ নিয়েছে আরব আমিরাত এবং বাহরাইন। উপসাগরীয় কোনো দেশের নৌবাহিনী, মার্কিন নৌবাহিনীর সমন্বয়ে পরিচালিত ইসরায়েলি
রণতরির সঙ্গে যৌথ নৌমহড়া চালাচ্ছে এমন ঘটনা এই প্রথম। ইরানকে হতবাক করে
ইসরায়েলের সঙ্গে আরব আমিরাত ও বাহরাইন মহড়ায় অংশ নিচ্ছে। কয়েক বছর আগেও এই ঘটনা
চিন্তাই করা যায়নি।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, লোহিত সাগরে পাঁচ
দিনের নৌমহড়ায় অংশ নিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, ইসরায়েল এবং মার্কিন রণতরি।
এই মহড়া শুরু হয়েছে গত বুধবার এবং জাহাজের মুক্ত চলাচল নিশ্চিত করতে জাহাজে
ওঠা, অনুসন্ধান চালানো এবং তা জব্দ করার কৌশল এই
মহড়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
মার্কিন নৌবাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ড বলছে, আঞ্চলিক
নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বাড়াতে যৌথভাবে কাজ করতে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর
নৌবাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধি এই প্রশিক্ষণের লক্ষ্য।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে আরব আমিরাত এবং বাহরাইন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক
স্বাভাবিক করতে আব্রাহম অ্যাকর্ড নামে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পর এই যৌথ মহড়ায়
দেশগুলো অংশ নিচ্ছে।
ওই চুক্তি স্বাক্ষরের পর ইসরায়েল এবং উপসাগরীয় দেশ দুটির মধ্যে কূটনৈতিক, সামরিক এবং গোয়েন্দা যোগাযোগের ব্যাপারে ব্যাপক ভিত্তিতে আলাপ-আলোচনা হয়।
বিশেষ করে ইরানের বিষয়ে দেশগুলো একমত প্রকাশ করে।
ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান বাহরাইনে গেছেন এবং অক্টোবর
মাসে আমিরাতের বিমানবাহিনীর অধিনায়ক প্রথমবারের মতো এধরনের একটি সফরে ইসরায়েলে
গেছেন।
ইরানও সম্প্রতি হরমুজ প্রণালিতে তাদের নিজস্ব নৌমহড়া চালানোর ঘোষণা দিয়েছে।
উপসাগরীয় এলাকায় যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা নৌবাহিনীর উপস্থিতির ঘোর
বিরোধিতা করছে ইরান।
১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর ইরান উপসাগরীয় আরব দেশগুলো থেকে মার্কিন
সেনাবাহিনীকে বহিষ্কারের জন্য প্রায়ই আহ্বান জানিয়ে আসছে।
ইরান আরব দেশগুলোকে বলার চেষ্টা করে যাচ্ছে যে, উপসাগরীয় এলাকার
নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণের জন্য স্বাভাবিকভাবেই ইরানের সঙ্গে জোটে তাদের অংশীদার
হওয়া উচিত।
কিন্তু ইরানের এই আহ্বানে তারা কর্ণপাত করেনি। ছয়টি আরব রাষ্ট্রের প্রত্যেকেই
যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের দেশে সামরিক ঘাঁটি তৈরির কাজ চালিয়ে যেতে দিয়েছে।
সৌদি আরব, বাহরাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ইরান এবং এর
ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের (আইআরজিসি) বিষয়ে গভীরভাবে সন্দিহান। ইরান
আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা সফলভাবেই অগ্রাহ্য করে যেভাবে মধ্যপ্রাচ্যে শক্তিশালী
বিকল্প মিলিশিয়া বাহিনীর নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে, তার ওপরেও তারা
উদ্বেগের সঙ্গে নজর রেখেছে।
এদিকে, সৌদি নেতৃত্বে ইয়েমেনের ওপর ছয় বছরের বেশি
সময় ধরে চালানো বিমান হামলা ইরানের সমর্থনপুষ্ট হুথি বিদ্রোহীদের হারাতে পারেনি।
এছাড়া লেবাননে হিজবুল্লাহ আগের চেয়ে আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।
ইরাক এবং সিরিয়ায় মিলিশিয়াদের অর্থ ও অস্ত্রের যোগান দিয়ে এবং সিরিয়ায়
নিজস্ব বাহিনী পাঠিয়ে ইরান প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ প্রশাসনের হাত শক্ত করে এই
দুটি দেশে তাদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করেছে।
ইরান তার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সম্ভার আরও উন্নত করেছে এবং এসব
ক্ষেপণাস্ত্র উপসাগরের যেকোন জায়গায় আঘাত হানতে সক্ষম। রেভল্যুশনারি গার্ডের
নৌবাহিনীও দ্রুত তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে তাদের নৌ-অস্ত্রসম্ভারে যুক্ত করেছে
দ্রুত আঘাত হানার এবং মাইন পাতার উপযোগী জাহাজ।
উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর উদ্বেগের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেছে ইসরায়েল। ইরানের
পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে তারা ক্রমশই আরও বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে। বিশেষ করে ২০১৫
সালে তথাকথিত যৌথ সার্বিক কর্ম পরিকল্পনা (জেসিপিওএ) নামে যে পরমাণু চুক্তি
হয়েছিল প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র এবং পরে ইরান সেই চুক্তির প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসার
পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
ইসরায়েল সন্দেহ করে ইরান পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে। যা
ইরান অস্বীকার করে আসছে। ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যে অঘোষিত একটা চাপা নৌসংঘাতও
চলছে সাম্প্রতিক সময়ে।
এমনকি লোহিত সাগর এবং ওমান উপসাগরেও জাহাজের ওপর রহস্যজনক হামলা হয়েছে। জুলাই
মাসে ওমান উপকূলের অদূরে ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি তেলবাহী জাহাজের ওপর
একটি বিস্ফোরক ভর্তি ড্রোন হামলায় এক ব্রিটিশ নিরাপত্তারক্ষী এবং একজন রোমানিয়ান
নাবিকের মৃত্যুর জন্য ইরানকে দায়ী করা হয়েছে। ইরান এই ঘটনায় তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ
অস্বীকার করেছে।
মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের কার্যকলাপের নিন্দা জানানোর ব্যাপারে ঐতিহাসিকভাবে
সবচেয়ে সোচ্চার দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে সৌদি আরব। বিশেষ করে সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ
বিন সালমান ২০১৫ সালে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর সৌদি
ইরানের সমালোচনায় আরও মুখর হয়েছে।
শামীম/ডাকুয়া