• ঢাকা রবিবার
    ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

অবশেষে প্রকাশ্যে তালেবান সুপ্রিমো আখুন্দজাদা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০২১, ১২:৪১ এএম

অবশেষে প্রকাশ্যে তালেবান সুপ্রিমো আখুন্দজাদা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

দিন পনেরো আগেই জানা গিয়েছিল তালেবানের শীর্ষ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা বেঁচে নেই। তবে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে  প্রকাশ্যে এলেন এই তালেবান সুপ্রিমো। মিথ্যে হলো সব জল্পনা। শনিবার (৩০ অক্টোবর) কান্দাহারে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তিনি বক্তৃতা করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

গত আগস্টে তালেবানের আফগানিস্তান দখলের পর থেকে নানা ঘটনার মাঝেও একবারের জন্য জনসমক্ষে আসেনি আখুন্দজাদা। আর সে কারণে ক্রমেই বাড়ছিল জল্পনা। এরপর কিছুদিন আগেই শোনা যায়, আখুন্দজাদা আর বেঁচে নেই। কিন্তু সব সংশয় দূর করে তালেবানের এক সিনিয়র নেতার দাবি, কান্দাহারের এক ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শনিবার হাজির ছিল আখুন্দজাদা।

সূত্রের বরাত দিয়ে পাকিস্তানের ডন নিউজ জানিয়েছে, শনিবার কান্দাহারে দারুল উলুম হাকিমা মাদরাসা পরিদর্শন করেন তালেবানের শীর্ষ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা। সেখানে প্রায় ১০ মিনিট সমর্থকদের সামনে কথা বলেন তিনি। তবে বক্তব্যে তিনি কী বলেছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

গত ১৫ আগস্ট তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে। এরপর থেকে সংগঠনটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের দেখা মিললেও সর্বোচ্চ নেতা (সুপ্রিম লিডার) হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা এত দিন পর্দার আড়ালে ছিলেন।

তালেবানের এই সুপ্রিম লিডার কোথায় আছেন তা নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো একের পর এক রিপোর্ট প্রকাশ করছে।

তালেবান নেতারা শুরু থেকেই জানিয়েছেন, আখুন্দজাদা আফগানিস্তানেই আছেন। শিগগিরই তিনি জনসম্মুখে আসবেন।

আখুন্দজাদা পাকিস্তানের সেনা হেফাজতে রয়েছেন বলে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা তাদের অভ্যন্তরীণ তদন্তে জানিয়েছিল।

তালেবান নেতা আখতার মানসুর মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হওয়ার পর ২০১৬ সালের ২৫ মে থেকে তিনি তালেবানের সুপ্রিম কমান্ডারের দায়িত্বে রয়েছেন হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা।

আশির দশকে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তবে সামরিক নেতার তুলনায় একজন ধর্মীয় নেতা হিসেবে তার পরিচিতি বেশি।

আখুন্দজাদা ১৯৯০-এর দশকে আফগানিস্তানের শরিয়া আদালতের প্রধান ছিলেন। আখুন্দজাদার বয়স ৬০ বছর বলে ধারণা করা হয় এবং জীবনের বেশির ভাগ সময় তিনি আফগানিস্তানে কাটিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তিনি কোয়েটা শূরার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে চলেন। এরা মূলত পাকিস্তানের কোয়েটাভিত্তিক আফগান তালেবান নেতা।

দলের সুপ্রিম লিডার হিসেবে রাজনৈতিক, সামরিক ও ধর্মীয় বিষয়ের প্রধান আখুন্দজাদা। উচ্চশিক্ষিত আখুন্দজাদা সেই অর্থে তালেবানের হয়ে কার্যকলাপে অংশ নেয় না। বরং ইসলামের নানা ব্যাখ্যার কাজ করে থাকেন তিনি।

সোভিয়েত পতনের পর ১৯৯২ সালে কাবুলের দখল নেয় মুজাহিদিনরা। বুরহানুদ্দিন রব্বানি হন নতুন প্রেসিডেন্ট। রব্বানির সময় মুজাহিদিনদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ধীরে ধীরে কাবুলের দখল নেয় তালেবান।

১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানে তালেবানের-শাসন শুরু হয়। তারা ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তান ঘোষণা করে। কিন্তু এই রাষ্ট্র আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি। 

আমেরিকার টুইন টাওয়ারে হামলাকে কেন্দ্র করে ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে হানা দেয়। তারা তালেবান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে। 

দীর্ঘ দুই দশক যুদ্ধের পর ২০২০ সালে কাতারের রাজধানী দোহায় যুক্তরাষ্ট্র এবং তালেবান আফগানিস্তানে শান্তি ফিরিয়ে আনতে এক চুক্তিতে সই করে। যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো ১৪ মাসের মধ্যে সব সেনা প্রত্যাহারে রাজি হয়।

গত মে মাসে আফগানিস্তান থেকে আমেরিকা ও ন্যাটো সেনা প্রত্যাহার শুরু করে। এরপর তালেবান হামলা চালিয়ে একের পর এক এলাকা দখল করতে থাকে। গত ১৫ আগস্ট তারা রাজধানী শহর কাবুল করে নেয়। এরপর তারা ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তান ঘোষণা দেয়। 

জেডআই/এম. জামান

আন্তর্জাতিক সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ