প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২১, ০২:৫৯ পিএম
সুযোগ বুঝে দরিদ্র পরিবারের
মেয়েদের বিয়ে করতেন তিনি। তারপর সেই স্ত্রীদের অবৈধভাবে বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে
ভারতে পাচার করতেন মুনির হোসেন। এভাবে ৭৫টি বিয়ে করেছেন তিনি। বিয়ে করা বউদের
সীমান্ত পার করাতে ব্যবহার করা হতো অরক্ষিত সীমান্ত সংলগ্ন ড্রেনগুলোকে।
বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশের পরে তাদের কলকাতায় একটি গোপন ডেরায় নিয়ে যাওয়া হতো। সেখানেই পাচার করা নারীদের দেয়া হতো প্রশিক্ষণ, চৌকস করার পর মুম্বাইতে নিয়ে গিয়ে দ্বিতীয় দফায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। সবশেষে চাহিদা অনুযায়ী ভারতের বিভিন্ন শহরে তাদের সরবরাহ করা হতো। কেউ কেউ আবার হাত ঘুরে চলে যেতেন বিভিন্ন নিষিদ্ধপল্লীতে। আর এভাবেই চলে আসছিল দিনের পর দিন, মাসের পর মাস।
ভারতীয় পুলিশ সূত্রের খবর, গত ১১ মাসে ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১১ জন বাংলাদেশি নারীসহ ২১ জনকে উদ্ধার করা হয়। আটক করা হয় সাগর, আফরীন, আমরিন নামে ওই পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকা কয়েকজন ব্যক্তিকে। সেই সময় বিষয়টি সামনে আসে যদিও ওই চক্রের মূল পান্ডা বাংলাদেশি নাগরিক মুনির ওরফে মনিরুলের নাগাল কিছুতেই পাচ্ছিল না পুলিশ। আর মুনিরের খোঁজে মধ্যপ্রদেশ পুলিশের তরফে ১০ হাজার রুপি আর্থিক পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছিল।
অবশেষে গত বৃহস্পতিবার গোপন সূত্রে খবর পেয়ে গুজরাটের সুরাট থেকে যশোরের বাসিন্দা মুনিরকে গ্রেফতার করে ভারতের মধ্যপ্রদেশের ইন্ডোর পুলিশের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিমের সদস্যরা। পরে তাকে ইন্দোরে নিয়ে আসা হয়।
পুলিশি জেরায় বাংলাদেশি তরুণী এবং নারীদের ভারতে পাচার করার কথা স্বীকার করেছেন মুনির। পুলিশের কাছে মুনির আরও জানান- পাঁচ বছর ধরে এই কাজ করে আসছেন তিনি। তার হাত ধরে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক নারী কলগার্লে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে অবৈধ পথে ভারতে পাচারের জন্য সীমান্তে টহলরত বাহিনীর সদস্যদের রুপি দিতেন বলেও জানান মুনির।
মুনির জানান, এখন পর্যন্ত তিনি ৭৫টা বিয়ে করেছেন এবং তাদের অধিকাংশ গরিব এবং দরিদ্র পরিবারের নারী। আর দারিদ্র্যের সেই সুযোগ নিয়েই কাজের লোভ দেখিয়ে নিজের বিয়ে করা স্ত্রীদেরই ভারতে এনে বিক্রি করে দেওয়া হতো এবং এই পেশায় ঠেলে দেওয়া হতো।
পুলিশের দাবি মুনির আরও জানিয়েছেন- দালাল মারফত অরক্ষিত সীমানার ড্রেনগুলোকে ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে নারীদের ভারতে আনা হতো এবং পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদসহ গ্রামীণ এলাকায় সেসব নারীকে রাখা হতো। এরপর তাদের ভোপাল, ইন্দোরসহ ভারতের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হতো।
গত ১১ মাস ধরে মধ্যপ্রদেশের লাসুদিয়া এবং বিজয়নগর শহরে অভিযান চালিয়ে ১১ জন বাংলাদেশি নারীসহ ২১ জনকে উদ্ধার করা হয়। এরপর সেক্স র্যাকেটের বিষয়টি সামনে আসে। তবে কেবল মুনিরই নন, এর পেছনে একটি বড় চক্র রয়েছে বলেও অনুমান পুলিশের। তাই মুনিরকে জিজ্ঞেস করেই আরও বড় চক্রের হদিস পেতে চাইছে মধ্যপ্রদেশ পুলিশ।
জেডআই/এম. জামান