প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২১, ১১:২৪ এএম
তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশটিতে বিদেশি সহায়তা বন্ধ হয়ে পড়েছে।
মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে, আফগানি মুদ্রার মান কমে গেছে। ফলে বৈদেশিক
সাহায্যের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল আফগান অর্থনীতি এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে।
পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে দেশটিতে আটার মতো প্রধান খাবারের দামও অনেকে বেড়ে
গেছে। মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। হাতে নগদ অর্থের অভাব। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য
কর্মসূচি সতর্ক করে দিয়েছে যে আফগানিস্তানের মাত্র ৫ শতাংশ পরিবারে প্রতিদিনের
যথেষ্ট খাবার রয়েছে।
তালেবান দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এ সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করলেও এর সূত্রপাত
ঘটেছিল আগেই। কারণ, তালেবান আসার বেশ কয়েক সপ্তাহ আগেই
আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নগদ রিজার্ভের বেশির ভাগ ডলার তুলে নিয়েছিল।
সম্প্রতি দেশটিতে চলমান চরম আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠীর জন্য
তৈরি এক মূল্যায়নপত্রে এ তথ্য উঠে আসে।
জ্যেষ্ঠ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক কর্মকর্তারা গত মাসের শুরুর দিকে দুই পৃষ্ঠার
এই গোপনীয় নথি তৈরি করে। সেখানে বলা হয়, তালেবান ক্ষমতা
দখলের আগেই দেশটির অর্থনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়েছিল। এই নথিতে সংকট মোকাবিলা করতে না
পারায় ব্যাংকের সাবেক নেতৃত্বকে দোষারোপ করা হয়। যেমন তখন বিপুল পরিমাণ মার্কিন
ডলার নিলাম করা হয়, এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রাদেশিক
শাখাগুলোতে মুদ্রা সরিয়ে নেওয়া হয়।
গোপন ওই নথিতে বলা হয়, কাবুলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে থাকা ফরেন
এক্সচেঞ্জের রিজার্ভ দিন দিন কমতে থাকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক
নগদ অর্থের চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয়। এই সমস্যার মূল কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
অব্যবস্থাপনা, যা তালেবান আসার আগে থেকেই শুরু।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান শাহ মেহেরাবি। তিনি তালেবান
ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই এ পদে আছেন। এ অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
পক্ষে সাফাই গান। তিনি বলেন, ব্যাংকটি স্থানীয় আফগান মুদ্রার সংকট কাটাতে
চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
অথচ প্রতিদিনই আফগান শহরগুলোতে ব্যাংকের সামনে গ্রাহকদের লম্বা সারি দেখা যায়।
তারা তাদের জমানো অর্থ তুলতে ভিড় করছেন সেখানে। অথচ সেখানেও সরকারের বেঁধে দেওয়া
নিয়ম আছে। নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি অর্থ তারা উত্তোলন করতে পারবেন না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে নগদ অর্থ ছাড়া এখন কিছুই নেই : আগের সরকারের সময়
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২৪ কোটি ৯০ কোটি মার্কিন ডলারের চালানের ওপর নির্ভরশীল ছিল। এ
কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত এমন তিনজন ব্যক্তি এ তথ্য জানিয়েছেন। প্রতি তিন মাস
পরপর বাক্সে করে ১০০ ডলারের সব নোট আসত। সেগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসের ভল্টে রাখা হতো।
আফগানিস্তানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কারণ, বিদেশ থেকে আসা সহায়তার অর্থ ব্যাংকটি বিতরণ করে থাকে। ব্যাংকটি ২৯ সেপ্টেম্বর
জানিয়েছে, তারা বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা পূরণে একটি
পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। তবে কী পরিকল্পনা, সে বিষয়ে কিছু
বলেনি।
৩ মাসে ১৫০ কোটি ডলার নিলাম করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক : প্রতিবেদন অনুযায়ী জুন থেকে
আগস্ট পর্যন্ত উচ্চ সুদে ১৫০ কোটি ডলার নিলাম করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। স্থানীয় ১৫ জন
ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার এসব ডলার কিনে নেয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৭০ কোটি মার্কিন ডলার ও ৫
হাজার কোটি আফগানি মুদ্রার দায় আছে। দেশটির অর্থভান্ডার খালি হয়ে যাওয়ার এটি
অন্যতম একটি কারণ।
তবে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা মেহরাবি দাবি করেন, ১৫০ কোটি ডলার নিলাম হওয়ার ঘোষণা থাকলেও মূলত ৭১ কোটি ৪০ লাখ ডলার বিক্রি
হয়েছে। মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও মূল্যস্ফীতি কমাতে ফরেন এক্সচেঞ্জ নিলাম অব্যাহত
রেখেছে।
অর্থ গায়েব : গোপন এই প্রতিবেদনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে
প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বলা হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের রিজার্ভ থেকে কিছু অংশ
প্রাদেশিক শাখাগুলোতে সরিয়ে নিয়েছে। এতে তালেবানের হাতে এই অর্থ চলে যেতে পারে বলে
আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের শেষ নাগাদ ব্যাংকের বিভিন্ন
শাখাগুলোতে ২০ কোটি ২০ লাখ ডলার ছিল। অথচ ২০১৯ সালে যা ছিল মাত্র ১ কোটি ২৯ লাখ
ডলার। অর্থাৎ, এই পরিমাণ অর্থ শাখাগুলোতে চলে গেছে। তালেবানের
হাতে প্রদেশগুলোর পতন শুরু হলে ওই অর্থ আর সরানো হয়নি।
শামীম/ডাকুয়া