প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২১, ০৩:০১ পিএম
রাজনৈতিক সমীকরণে বহু ক্ষেত্রে তাদের একমঞ্চে হাজির করানো যায় না। সংসদে
তাদের একসঙ্গে পাওয়া গেলেও, সেখানে মিত্রতার আভাসই থাকে না। বরং পরস্পরের
বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করার কাজেই ব্যস্ত থাকেন তারা। কিন্তু তাদের এবার পুজোয়
নিজেদের মঞ্চে হাজির করতে চলেছে বেলেঘাটার একটি পূজা কমিটি। পুজোর ক’দিন ইস্ট
বেলেঘাটা জনকল্যাণ সংঘে একমঞ্চে হাজির হবেন মোদি, মমতা ও রাহুল গান্ধী। তবে সশরীরে নয়,
তাদের কাঠের পুতুলের
মূর্তি দিয়ে সাজানো হবে দেবী দুর্গার মণ্ডপ। ইস্ট বেলেঘাটা জনকল্যাণ সংঘের এবারের পুজোর থিম-কাঠের পুতুলের জীবন। শিল্পী সমর সাহার ভাবনায় সেজে উঠছে এই পুজো
মণ্ডপ। প্রায় দুই হাজার কাঠের পুতুল দিয়ে সাজানো হচ্ছে মণ্ডপ।
কলকাতা থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে পূর্ব বর্ধমান জেলার অগ্রদ্বীপের
নতুনগ্রাম। সেখানেই কারু শিল্পীদের বাস। যারা নিজেরা বলেন ‘দারু শিল্প’। ‘দারু’
অর্থ কাঠ।
কাঠের তৈরি রংবেরঙের পুতুল তৈরিতে বিশ্বখ্যাত এই গ্রামটি। গ্রামের ৫০টি পরিবার
শিল্পী। তারাই বাঁচিয়ে রেখেছেন দারুশিল্পকে। সেই দারুশিল্পীরা সাজিয়ে তুলেছেন
ইস্ট বেলেঘাটা জনকল্যাণ সংঘের পুজো। গত বছর থেকে শুরু হওয়া করোনা পরিস্থিতিতে
সরকারি বিধি নিষেধের কারণেই গোটা দেশে মেলা বন্ধ। ট্রেনে দেখা নেই ফেরিওয়ালাদের।
আয়ের সব পথ থেকে বিচ্ছিন্ন নতুনগ্রাম। এই অবস্থার কথা জানতে পেরে পুজো কমিটির
কর্তারা নতুনগ্রামে গিয়ে দারুশিল্পীদের পুজোর মণ্ডপ সাজানোর প্রস্তাব দেন। এককথায় রাজি হয়ে যান শিল্পীরা। দারুশিল্পীরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের
নেতা-নেত্রীদের কাঠের মূর্তি দিয়ে মণ্ডপ সাজানোর প্রস্তাব দেন পুজো উদ্যোক্তাদের।
ভাবনায় সম্মতি দেন তারা।
পৃথক রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য তৈরি করা হচ্ছে পৃথক মঞ্চ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী
মনমোহন সিংহর সঙ্গে একমঞ্চে থাকবেন সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধী। তাদের মূর্তি
গড়া হচ্ছে বক্তৃতা দেওয়ার আদলে। আবার রাজ্যের দুই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু
ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে থাকবেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। সেই
মঞ্চের সামনেই রাখা হচ্ছে বইয়ের সারি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থাকবেন একটি মঞ্চে, তার সামনে থাকবে
পেট্রোল পাম্প ও রান্নার গ্যাস। আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মূর্তির
জন্য তৈরি হচ্ছে একটি পৃথক মঞ্চ। যেখানে তার মূর্তির সঙ্গে থাকবে রাজ্য সরকারের
সব উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কথা। শিল্পী সমর সাহা বলেন, ‘লকডাউনে কর্মহীন হয়ে যাওয়া শিল্পীদের হাতে কাজ ফিরিয়ে দিতেই আমরা এই থিম
বেছে নিয়েছি। ওদের কাজের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক নেতাদের মূর্তি দিয়ে
মণ্ডপ কীভাবে সাজানো হবে, তাও তারা পরিকল্পনা করেছেন। দর্শকরা সব কিছু উপলব্ধি করতে পারবেন।’
নতুনগ্রামের ২০টি পরিবার গত তিন মাসের পরিশ্রমে গড়ে তুলছেন এই পুজোর মঞ্চ।
পারিশ্রমিক ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রীর থেকে পাওয়া ৫০ হাজার টাকা এই পরিবারগুলোর হাতে
তুলে দেবেন পুজো উদ্যোক্তারা।
শামীম/ডাকুয়া