প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২১, ০৫:৪২ পিএম
সমুদ্রের নিচের জগতের ছবিতে বিচিত্র উদ্ভিদ ও প্রাণী চোখে
পড়ে। বিচিত্র সব প্রাণীর বাস
সেখানে। এবার সেখানে ভাস্কর্যও
দেখা যাবে। ব্রিটিশ এক শিল্পী পানির
নিচে ভাস্কর্য তৈরি করেছেন।
ফ্রান্সের
দক্ষিণে কান শহরের উপকূলে
স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকেরা পানির
নিচে এই মিউজিয়াম ঘুরে
দেখতে পারেন। সেখানে পানির গভীরতা বেশি না হওয়ায়
স্নর্কেল নিয়েই সেই জগতে উঁকি
মারা যায়। সিমেন্টের তৈরি
আড়াই মিটার দীর্ঘ ছয়টি ভাস্কর্যের প্রত্যেকটি
১০ টনেরও বেশি ভারী ৷
নিজের
শিল্পসৃষ্টির সাহায্যে জেসন ডিকেয়ারেস টেলর
সামুদ্রিক প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য
নতুন বাসস্থান সৃষ্টি করেছেন। ব্রিটেনের এই শিল্পী চার
বছরেরও বেশি সময় ধরে
তার সর্বশেষ প্রকল্পের জন্য কাজ করেছেন।
নিখুঁত জায়গা খোঁজা থেকে শুরু করে
কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দীর্ঘ দরকষাকষি ছাড়াও সমুদ্রের নিচের মাটি থেকে জঞ্জাল
সরাতে হয়েছে৷
নিজের
কাজের সাহায্যে এই শিল্পী ও
পেশাদারি ডুবুরি সমুদ্রের সংবেদনশীল ইকোসিস্টেম সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে চান। সেই সঙ্গে
অনবদ্য অভিজ্ঞতার স্বাদও থাকছে। জেসন বলেন, ‘বহুকাল
ধরেই পানির নিচে শিল্প সৃষ্টির
স্বপ্ন ছিল। এমন জায়গায়
ইনস্টলেশন বা শৈল্পিক কার্যকলাপ
কখনও হয়নি। একেবারে নতুন এই জগতে
রঙ, আলো, মুভমেন্টসহ গোটা
অভিজ্ঞতাই একেবারে ভিন্ন।’
১৫
বছর ধরে শিল্পী হিসেবে
জেসন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পানির নিচে মিউজিয়াম সৃষ্টি
করে চলেছেন। এখন পর্যন্ত সমুদ্রের
নিচে এক হাজারেরও বেশি
ভাস্কর্য বসিয়েছেন তিনি। পানির নিচে সেগুলোর চরিত্র
বদলে যায়। সেই অভিজ্ঞতার
উল্লেখ করে জেসন বলেন,
‘কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ছোট ছোট পরিবর্তন
চোখে পড়ে।’
এক
সপ্তাহ পর গোটা ভাস্কর্যের
ওপর সবুজ শেওলার প্রলেপ
পড়ে যায়। তারপর স্পঞ্জ,
কোরাল সৃষ্টি হয়। ফাঁকফোকরের মধ্যে
মাছ লুকিয়ে থাকে। মানুষের পক্ষে এমন সব বিন্যাস
ও আকার সৃষ্টি কখনই
সম্ভব নয়। এত খুঁটিনাটি
কাজ, এমন উজ্জ্বল রঙের
প্যালেট আমরা এখনও উদ্ভাবন
করতে পারিনি।
কান
শহরের ছয়জন বাসিন্দার মুখচ্ছবি
এবারের ভাস্কর্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সোশ্যাল
মিডিয়া ও সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনের
মাধ্যমে তাদের খোঁজ চালানো হয়েছিল।
দোমিনিক রয়াল তাদের মধ্যে
একজন। তিনি বলেন, ‘কান
শহরের ৫০ জন বাসিন্দা
আবেদন করেছিলেন। জেসন ডিকেয়ারেস তাদের
মধ্যে ছয়জনকে বেছে নেন। আমাকেও
বাছাই করা হয়। ভেবে
দেখুন, যে আমি কখনও
পানির নিচে মাথা ডোবাইনি,
তাকেই কিনা সমুদ্রপৃষ্ঠের তিন
মিটার নিচে অমর করে
রাখা হবে! সত্যি অসাধারণ!’
জেসন
ডিকেয়ারেস টেলর লোহিত সাগর
বা মেরু অঞ্চলের মতো
জায়গায় পানির নিচে আরও মিউজিয়াম
গড়ে তুলতে চান। পৃথিবীর উপরিভাগের
তিন-চতুর্থাংশ জুড়ে পানি থাকায় জায়গার
কোনো অভাব নেই৷ জেসন
বলেন, ‘পানির নিচে কাজ করলে
আমরা একেবারে ভিন্ন চোখে আমাদের প্রাকৃতিক
পরিবেশ দেখতে পাই বলে আমার
আশা। আমরা সেই জায়গার
মালিক নয়, বাণিজ্যিক ব্যবহার
করতে বা সম্পদ হিসেবে
বিক্রি করতে পারি না।
এটা এমন এক প্রাকৃতিক
স্পেস, যা আমাদের গ্রহের
সব কিছুর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। পানির নিচে সীমানা বা
কৃত্রিম রেখার কোনো প্রাসঙ্গিকতা নেই৷’
শামীম/এম. জামান