প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১, ১১:৩০ এএম
আফগানিস্তানের পাঞ্জশিরে তালেবানের বিপক্ষে কমপক্ষে ২০ বেসামরিক ব্যক্তিকে
হত্যার অভিযোগ উঠেছে। মাসুদ বাহিনী এ এলাকাতেই তালেবানের
বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে
তুলেছিল। পাহাড়ি ওই উপত্যকায় যোগাযোগব্যবস্থা
বন্ধ করে দেওয়ায় সেখানকার
সংবাদ জানা কঠিন হয়ে
পড়েছে। প্রতিশোধ না নেওয়ার অঙ্গীকার
সত্ত্বেও তালেবান হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
একটি
ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, পাঞ্জশিরের
একটি কর্দমাক্ত সড়কের পাশে সামরিক পোশাক
পরা এক ব্যক্তিকে তালেবান
যোদ্ধারা ঘিরে রেখেছে। এর
পর বন্দুকের গুলির শব্দ শোনা যায়
এবং সেই ব্যক্তিকে মাটিতে
লুটিয়ে পড়তে দেখা যায়।
ওই
ব্যক্তি কোনো সেনা সদস্য
কিনা তা পরিস্কার নয়।
কেননা ওই অঞ্চলে সামরিক
পোশাক পরা খুব সাধারণ
একটি ঘটনা। ভিডিও করার সময় পাশে
দাঁড়ানো একজন দাবি করেছেন,
ওই ব্যক্তি একজন বেসামরিক বাসিন্দা।
পাঞ্জশিরে এ রকম অন্তত
২০ জনকে হত্যার ঘটনা
ঘটেছে। তাদের একজন হচ্ছেন একটি
দোকানের মালিক ও দুই সন্তানের
জনক আবদুল সামি।
স্থানীয়
সূত্রগুলো জানিয়েছে, তালেবান যখন অগ্রসর হচ্ছিল,
তখন ওই ব্যক্তি পালিয়ে
যাননি। তিনি বলেছিলেন, আমি
সামান্য একজন দরিদ্র দোকান
মালিক, যুদ্ধের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক
নেই। কিন্তু তাকে গ্রেফতার করা
হয়, প্রতিরোধ গড়ে তোলা যোদ্ধাদের
কাছে সিম কার্ড বিক্রির
অভিযোগ তোলা হয়। কয়েক
দিন পর বাড়ির কাছাকাছি
একটি স্থানে তার মৃতদেহ পাওয়া
যায়। যারা তার মৃতদেহ
দেখতে পেয়েছেন, তারা জানিয়েছেন যে,
তার শরীরে নির্যাতনের ছাপ রয়েছে।
গত
মাসে তালেবান যখন আফগানিস্তানের ক্ষমতা
দখল করে, তখন শুধু
এই একটি অঞ্চল তাদের
নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। আফগানিস্তানে প্রতিরোধ
যুদ্ধে পাঞ্জশির উপত্যকার পুরোনো ইতিহাস রয়েছে। কমান্ডার আহমদ শাহ মাসুদের
নেতৃত্বে এ এলাকা সোভিয়েত
ও প্রথমবারের তালেবান শাসন ঠেকিয়ে দিয়েছিল।
উপত্যকার
চারদিকে ঘিরে রাখা পাহাড়ের
চূড়াগুলোর কারণে এই এলাকার নিয়ন্ত্রণ
নেওয়া যে কারও জন্যই
কঠিন। আহমদ শাহ মাসুদের
সন্তান আহমদ মাসুদ দ্বিতীয়
দফায় আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। তবে
গত সপ্তাহে তালেবান সেখানে বিজয় দাবি করেছে, তাদের
যোদ্ধারা তালেবানের পতাকা উত্তোলন করছে বলে ভিডিও
প্রচার করেছে।
প্রতিরোধ
যোদ্ধারা তাদের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে। তালেবানের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান
জানিয়েছেন আহমদ মাসুদ। তালেবান
আফগানিস্তানের ক্ষমতা নেওয়ার পর দেশের অন্যান্য
এলাকার মতো পাঞ্জশিরে কী
ঘটতে যাচ্ছে, সেদিকে সবার নজর রয়েছে।
তালেবান যখন উপত্যকায় প্রবেশ
করে, তখন তারা স্থানীয়
বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন করার আহ্বান জানিয়েছিল।
সেখানে
খাবার ও ওষুধের স্বল্পতাও
তৈরি হয়েছে বলে সতর্ক করে
দেওয়া হয়েছে। তবে বেসামরিক বাসিন্দাদের
লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ অস্বীকার
করেছে তালেবান। তবে সংখ্যালঘু হাজারা
সম্প্রদায়ের সদস্যদের গণহত্যা ও এক নারী
পুলিশ সদস্যকে হত্যার খবর সামনে আসার
পর বোঝা যাচ্ছে, প্রতিশোধমূলক
হামলা না করার জন্য
তালেবান যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল,
সেখানকার বাস্তব চিত্র তার চেয়ে আলাদা।
শামীম/এএমকে