প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২১, ০৩:৩০ পিএম
তালেবানের হাতে কাবুল পতনের দিন কয়েক আগের ঘটনা। সে সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট
জো বাইডেনের সঙ্গে সবশেষ টেলিফোনে কথা হয় আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির। এ সময় তারা
কাবুলের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে সামরিক সহযোগিতা, নতুন রাজনৈতিক কৌশলসহ নানা বিষয়ে আলোচনা
করেন। ১৪ মিনিট কথা বলেন তারা। কিন্তু তাদের সেই কথাবার্তায় একবারের জন্যও মনে হয়নি,
কিছু দিনের মধ্যে তাদের এতসব পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে চলেছে তালেবান। বাইডেন-গনির সেই
ফোনালাপ ফাঁস করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বুধবার
(১ সেপ্টেম্বর) এক বিশেষ প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থাটি জানিয়েছে, সবশেষ গত ২৩ জুলাই টেলিফোনে
আলাপ হয় বাইডেন ও গনির। রয়টার্স সেই ফোনালাপের একটি প্রতিলিপি হাতে পেয়েছিল। পরে তার
অডিও রেকর্ডিং শুনে এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থাটিকে
এসব তথ্য ও উপকরণ সরবরাহ করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র, যার এসব তথ্য প্রকাশের অনুমতি নেই।
ফোনকলে
বাইডেন আশরাফ গানিকে জানান, তিনি আফগান প্রেসিডেন্টকে সহযোগিতা করতে রাজি আছেন, যদি
তিনি (গনি) প্রকাশ্যে বোঝাতে পারেন, আফগানিস্তানের জটিল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তার সুনির্দিষ্ট
পরিকল্পনা রয়েছে। বাইডেন বলেন, ‘পরিকল্পনাটা কী জানতে পারলে আমরা আকাশপথে সহযোগিতা
অব্যাহত রাখব।’
বাইডেন
গনিকে এ কথা বলার কিছু দিন আগেই আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে
বিমান হামলা চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। সে সময় তালেবান এটিকে দোহা শান্তিচুক্তির স্পষ্ট
লঙ্ঘন উল্লেখ করে তীব্র প্রতিবাদ জানায়।
ফোনালাপে
প্রেসিডেন্ট বাইডেন আশরাফ গনিকে তাদের সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিতে ক্ষমতাধর আফগানদের
সহযোগিতা নিতে পরামর্শ দেন এবং কোনো ‘যোদ্ধা’কে এই উদ্যোগের দায়িত্ব দিতে বলেন। রয়টার্সের
তথ্য মতে, বাইডেন ‘যোদ্ধা’ বলতে মূলত আফগান প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল
বিসমিল্লাহ খান মোহাম্মদির দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন।
এ
সময় পশ্চিমা অর্থ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আফগান সামরিক বাহিনীর প্রশংসাও করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
তিনি গনিকে বলেন, ‘স্পষ্টত আপনাদের সেরা সামরিক বাহিনী রয়েছে। ৭০ থেকে ৮০ হাজার তালেবান
যোদ্ধার বিরুদ্ধে লড়তে আপনার সুসজ্জিত তিন লাখ সৈন্য রয়েছে, যারা দারুণ যুদ্ধ করতে
সক্ষম।’
অবশ্য
বাইডেন আফগান প্রেসিডেন্টকে এই ভরসা দেওয়ার কয়েকদিন পরই আফগানিস্তানে একের পর এক প্রাদেশিক
রাজধানীর দখল নিতে থাকে তালেবান। তাদের বিরুদ্ধে বলার মতো কোনো প্রতিরোধই গড়তে পারেনি
অথবা গড়েনি বাইডেনের উল্লেখিত সেই ‘সুসজ্জিত আফগান বাহিনী’।
এর
জন্য অবশ্য ফোনালাপের বেশির ভাগ জুড়ে আফগান সরকারের ‘মনোভাব’কে
দোষারোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। গনির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, তালেবানদের
বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভালো যাচ্ছে না। এটি সত্য হোক বা না হোক, ভিন্ন
একটি ছবি সামনে আনা দরকার।’
বাইডেন
আফগান প্রেসিডেন্টকে বলেন, ‘আফগানিস্তানের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদেরা যদি একসঙ্গে নতুন
সামরিক কৌশলের পক্ষে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন, তাহলে সেটি দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেবে।’
দুই
রাষ্ট্রপ্রধানের ফোনালাপে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কোন্দলের বিষয়টিও উঠে
আসে। বাইডেন সাবেক আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইকেও সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত করার পরামর্শ
দিলে তাতে আপত্তি জানান আশরাফ গনি। তিনি বলেন, ‘কারজাই সাহায্য করবেন না। তিনি একগুঁয়ে,
আর এই সংক্ষিপ্ত সময়ে আমরা প্রত্যেককে আনতে পারব না… আমরা কয়েক মাস ধরে প্রেসিডেন্ট কারজাইয়ের
সঙ্গে (যোগাযোগের) চেষ্টা করেছি। শেষবার আমরা ১১০ মিনিটের জন্য দেখা করেছি; তিনি আমাকে
অভিশাপ দিচ্ছিলেন এবং মার্কিন ভৃত্য বলে তিরস্কার করছিলেন।’
এ
সময় বাইডেন গনিকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে পরে বিবেচনা করব। যুক্তরাষ্ট্রের
প্রেসিডেন্টের কথায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল, তিনি সে সময় ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি, তাদের ওই
কথোপকথনের মাত্র ২৩ দিন পরেই কাবুল সরকারের পতন হবে এবং আশরাফ গনি দেশ ছেড়ে পালাবেন।’
ফোনে
বাইডেন আফগান প্রেসিডেন্টকে বলেছিলেন, ‘আমরা কূটনৈতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকভাবে কঠিন
লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। আপনার সরকার যেন শুধু টিকেই না থাকে, বরং এটি স্থায়ী হয় ও বৃদ্ধি
পায়, আমরা তা নিশ্চিত করব।’
ফোনালাপের
আরেকটি চমকপ্রদ অংশ ছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গনির তোলা অভিযোগ। তিনি বাইডেনের কাছে
অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা একটি পূর্ণমাত্রার আক্রমণের মুখে রয়েছি, যা চালাচ্ছে তালেবান,
কিন্তু এর পুরো পরিকল্পনা ও রসদ সরবরাহ করছে পাকিস্তান। এতে যোগ দিয়েছে কমপক্ষে ১০
থেকে ১৫ হাজার আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী, যার বেশির ভাগই পাকিস্তানি।
গনির
এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে ওয়াশিংটনের পাকিস্তানি দূতাবাস। তাদের মুখপাত্র বলেছেন,
‘পাকিস্তান থেকে তালেবান যোদ্ধারা যাওয়ার খবর একটি অজুহাত এবং আশরাফ গনির নেতৃত্ব ও
শাসনে ব্যর্থতা ঢাকার প্রচেষ্টা।’
ফাঁস
হওয়া ফোনালাপের বিষয়ে মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের আহ্বানে সাড়া দেয়নি হোয়াইট হাউস। আর
আশরাফ গনির সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
শামীম/এম.
জামান