• ঢাকা রবিবার
    ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মসনদে বসার আগেই রক্তপাতে তালেবান

প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২১, ১১:২৭ পিএম

মসনদে বসার আগেই রক্তপাতে তালেবান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মসনদে বসার আগেই নিজেদের হাত রক্তে রাঙাল তালেবান গোষ্ঠী। ক্ষমতা নেয়ার আগেই তারা বিশ্ববাসীর সামনে নিজেদেরকে নেতিবাচক রূপে তুলে ধরল। আফগানিস্তানে জার্মানির সম্প্রচার মাধ্যম ডয়েচে ভেলের এক সাংবাদিকের পরিবারের সদস্য  হত্যার শিকার হয়েছেন তাদের হাতে। সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় এ সময় আরও একজন আহত হন। সিএনএন এ তথ্য জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সমর বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্বনেতাদের ধারণাকে অসার প্রমাণ করে অল্প দিনেই পুরো আফগানিস্তানের দখল নেয় তালেবান। পশ্চিমা সমর্থিত আফগান সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিরোধ গড়তে পারেনি। রক্তপাতহীনভাবে কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর তারা সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের অবস্থান বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরে। সেখানে তারা সবাইকে ক্ষমা করে দেয়ার ঘোষণা দেয়। অন্য আর কিছু প্রতিশ্রুতির মধ্যে নারীদের শরিয়া আইনের মধ্যে থেকে কাজ করার সুযোগের কথাও জানায়। কিন্তু মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে তালেবানরা তাদের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসেছে।

কাবুল দখল করার পর কিছুদিন যেতে না যেতেই তারা যেন প্রতিশোধের নেশায় মেতে উঠেছে। তাদের আচরণে মার্কিন বাহিনীর হয়ে কাজ করা আফগানদের ভবিষ্যৎ আতঙ্কময় করে তুলেছে। এ কারণে তাদের ভয়ে অনেকে দেশ ছেড়ে পালাতে চাইছেন, কিন্তু যেতে চাইলেও তারা পারছেন না। পদে পদে তালেবানরা তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যদিও সংবাদ সম্মেলনে তারা দেশ ছেড়ে যেতে কাউকে বাধা না দেয়ার কথা জানিয়েছিল, কিন্তু  সে পথে তারা হাঁটছে না। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও তারা অনেককেই দেশত্যাগে বাধা দিচ্ছে।

প্রতিশোধের নেশায় উন্মত্ত হয়ে থাকা তালেবান গোষ্ঠী একটা তালিকাও তৈরি করেছে। সে তালিকায় বিশ্ববাসীর সামনে সত্য ঘটনা তুলে ধরা সাংবাদিকদের নামও রয়েছে। 

সাংবাদিক তালিকায় তাদের প্রথম শিকারে পরিণত হয়েছেন ডয়েচে ভেলের এক সাংবাদিকের পরিবারের সদস্য। বেশ কিছুদিন ধরে ডয়েচে ভেলের তিনজন সাংবাদিককে তারা হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে। পালিয়ে থাকতে পারে এমন স্থানে তাদের সন্ধানে তালেবানরা বিভিন্ন বাড়িতে হানা দিয়েছে। একসময় সাংবাদিকদের বাড়িতেও পৌঁছে যায় তারা। কিন্তু সেখানে কাঙ্ক্ষিত সাংবাদিককে পায়নি। তালেবানেদের আতঙ্কে তিন সাংবাদিকের পরিবারের বেশির ভাগ সদস্য ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তারপরও কেউ কেউ বাড়িতে ছিলেন। কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে না পেয়ে উন্মত্ত তালেবান সদস্যরা এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে করে একজন নিহত হন। আহত হন একাধিক।

তালেবানদের এমন আচরণ বিশ্ববাসীকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। তালেবানরা এখন শাসন ব্যবস্থায় বসতে পারেনি, এখনও কোনো দেশ তাদের স্বীকৃতি দেয়নি। এরই মধ্যে এমন আচরণ বিশ্ববাসীকে ২০ বছর আগের আফগানিস্তানে নিয়ে যাচ্ছে। সে সময় তালেবান শাসনের কথা শুনলে অনেকে আঁতকে উঠত। আফগানিস্তানে স্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না, বিশেষ করে নারীদের তো এক প্রকার ঘরবন্দি হয়ে থাকতে হতো। ঘরের বাইরে বের হলে নানা ধরনের নিয়ম মানতে হতো। সাংবাদিক পরিবারের সদস্য হত্যায় সেই সময়কেই যেন স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে তালেবান মুখপাত্রের কথায় অনেকে আফগানিস্তান নিয়ে আশাবাদী হয়েছিলেন। শরিয়া আইন মেনে নারীদের কাজের সুযোগ দেয়ার কথা জানিয়েছিলেন তালেবান মুখপাত্র। কিন্তু সেখানেও তারা কথা রাখছে না। এক নারী সাংবাদিক সব নিয়ম মেনেও তালেবানদের ছাড়পত্র পাননি। তিনি শবনম দাউরান। 

আফগানিস্তানের জনপ্রিয় এক সংবাদ পরিবেশক তিনি। গত ছয় বছর সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে কাজ করেছেন। তিনি তালেবানের নিয়ম মেনে হিজাব পরে অফিস করার জন্য গিয়েছিলেন। অফিসের পরিচয়পত্রও সঙ্গে ছিল। তারপরও কাজ হয়নি। তাকে অফিসে ঢুকতে দেয়নি তালেবান সদস্যরা। অথচ তার পুরুষ সহকর্মীরা ঠিকই অফিসে গেছেন। অফিস করছেন। 

ডয়েচে ভেলের ডিরেক্টর জেনারেল পিটার লিমবুর্গ এসব ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি জার্মান সরকারকে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) তার লেখা এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আমাদের এক এডিটরের পরিবারের সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। এর থেকে বোঝা যায়, আফগানিস্তানে আমাদের কর্মী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা কী ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে আছেন। এই ঘটনা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তালেবান সাংবাদিকদের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করছে। আমাদের হাতে আর সময় নেই, দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া দরকার।’

একই কথা জানিয়েছেন শবনম দাউরান। ভিডিও বার্তায় তিনি সাহায্যের আবেদনও করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের জীবন সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। পরিস্থিতি বদলের পরও আমি আশা ছাড়িনি। অফিসেও গিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য। হিজাব পরে অফিসের পরিচয়পত্র দেখানোর পরও আমাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। আমার যেসব পুরুষ সহকর্মীর পরিচয়পত্র রয়েছে, তাদের অফিসে ঢুকতে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমাকে বলা হয় ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তাই আমি আর কাজ করতে পারব না। যারা আমার কথা শুনছেন, তাদের কাছে আমার কাতর অনুরোধ, দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমাদের জীবন বিপন্ন।’

শামীম/এম. জামান

আন্তর্জাতিক সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ