• ঢাকা রবিবার
    ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১

সবার দৃষ্টি কাবুলে

প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২১, ১২:০৩ এএম

সবার দৃষ্টি কাবুলে

আবু রায়হান ইফাত

আবার কাবুলের মসনদে তালেবান। বিনা বাধায় তালেবানের হাতে রাজধানী তুলে দিয়েছেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। তালেবানদের একের পর এক শহর দখলের খবরে নিজের জীবন নিয়ে পালিয়েছেন তিনি। এখন সরকার গঠন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

ইসলামপন্থী সংগঠন তালেবানের হাতে ক্ষমতা আসায় সবার নজর এখন আফগানিস্তানের দিকে। এবার কি নতুন আইন প্রণয়ন করবে তালেবান? নাকি পুরনো শরিয়াহ আইনেই ফিরে যাবেন তারা? এই নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে সাধারণের মাঝে।

১৯৯৬ সালে প্রথম আফগানিস্তানের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে তালেবান। এ সময় গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে তৎকালীন ক্ষমতাসীন সংগঠন মুজাহিদিনকে পরাজিত করে ক্ষমতা দখল করে তারা। এরপর পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ২০০১ সালে বিধ্বংসী এক সামরিক অভিযানে তালেবানকে ক্ষমতাচ্যুত করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ন্যাটো মিত্ররা। এরপর টানা ২০ বছর আফগানিস্তানের সামরিক নিয়ন্ত্রণ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। 

কিন্তু মাত্র কয়েক দিবসেই বদলে গেছে দৃশ্যপট। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে রাতের অন্ধকারে কাবুলের নিকটবর্তী বাগরাম বিমানঘাঁটি ত্যাগ করে মার্কিন সৈন্যদের শেষ দল। তার মাত্র ৬ সপ্তাহ পার না হতেই আফগানিস্তানের অধিকাংশ ভূখণ্ড দখল করে নেয় তালেবান যোদ্ধারা।

হেরাত ও কান্দাহারের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরসহ দেশটির ১০টি প্রাদেশিক রাজধানী অল্পসময়েই দখল করে নেয় তালেবান। কিন্তু এতেই থেমে থাকেনি তারা। গত ১৫ আগস্ট আফগান রাজধানী কাবুলও দখল করে নেয় সংগঠনটি।
 
কাবুল দখলের পর ঘনিষ্ঠজনদের নিয়ে রাতেই কাবুল ত্যাগ করেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। ফলে রাতেই প্রেসিডেন্ট প্যালেস নিজেদের করে নেয় তালেবান। প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ থেকেই আফগানিস্তানকে আবার ‘ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তান’ ঘোষণা করাই কেবল বাকি তাদের। 

কাবুল দখলের পর তালেবান নেতারা নাগরিকদের ঘরে থাকার আহ্বান জানায়। কোনো ধরনের প্রতিশোধ না নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও পাকিস্তান সীমান্তে ঢল নামে আফগান নাগরিকদের। সংঘাত-সহিংসতার ভয়ে দলে দলে প্রতিবেশী দেশে চলে যেতে চাইছে তারা। 

১৯৯৬ সালে সোভিয়েত বাহিনী চলে যাওয়ার পর গৃহযুদ্ধের মধ্যে মোল্লা ওমরের নেতৃত্বাধীন তালেবান আফগানিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে। তবে আলকায়েদার শীর্ষনেতা ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দেয়ায় তাদের ক্ষমতা টলে যায়।

২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বহুজাতিক বাহিনী আফগানিস্তানে অভিযান শুরুর পর পিছু হটতে হয় তালেবানকে। যুক্তরাষ্ট্রের টানা অভিযানে কোণঠাসা হয়ে পড়ে তারা। গত ২০ বছরে কিছু আত্মঘাতী ও আচমকা হামলার মধ্য দিয়ে তারা কেবল নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিয়েছিল।

আফগানিস্তান যুদ্ধ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম অভিযান। এই অভিযানে আমেরিকার সরকারি হিসাব মতে, ৭৭ হাজার ৬০০ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ ব্যয় করেছে তারা। গত ২০ বছরের এই সংঘাতে নিহত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই হাজারেরও বেশি সৈন্য ও কর্মকর্তা। জখম হয়েছেন ২০ হাজারের বেশি সৈন্য। আর ৬৪ হাজারেরও বেশি আফগান সৈন্য ও পুলিশ নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া নিহত হয়েছেন লক্ষাধিক আফগান বেসামরিক নাগরিক। 

তবে এর মধ্যে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় বসা হামিদ কারজাই তার ১৩ বছরের শাসনে এবং এরপর আশরাফ গনি ছয় বছরের শাসনেও স্থিতিশীলতা আনতে পারেননি দেশটিতে।

অভিযানের বিশাল ব্যয় বহনের চাপে থাকায় ২০১৮ সালে আফগানিস্তান ত্যাগের পথ সুগমে তালেবানের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ভেঙে যায় তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্রের শান্তিচুক্তি। 

পরবর্তীতে কয়েক মাস ধরে আলোচনার পর ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবানের সঙ্গে চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র। আফগান যুদ্ধের অবসান ঘটানোই ছিল ওই চুক্তির লক্ষ্য।

চুক্তিতে বলা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো ১৪ মাসের মধ্যে তাদের সব সৈন্য প্রত্যাহার করে নেবে যদি তালেবান হামলা না করার ব্যাপারে তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি বজায় রাখে।

একই সঙ্গে তালেবানের পক্ষ থেকে তাদের হাজার হাজার বন্দিকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানানো হয়েছিল।

সমঝোতার পর তালেবান আন্তর্জাতিক সৈন্যদের ওপর হামলা বন্ধ রাখলেও আফগান সরকারের ওপর আক্রমণ অব্যাহত রেখেছিল।
সমঝোতা চুক্তির পরই আফগানিস্তান নিয়ে চিন্তার ভাঁজ তৈরি হয়েছিল নীতিনির্ধারকদের কপালে। 

জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবশিষ্ট সৈন্যরা আফগানিস্তান ছেড়ে যেতে না যেতেই একের পর এক শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে থাকে তালেবান যোদ্ধারা। সবশেষ গত ১৫ আগস্ট কোনো ধরনের লড়াই ছাড়াই রাজধানী কাবুল দখলের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে নেয় সংগঠনটি। 

তালেবান কাবুলে ঢুকে পড়ার পর ওইদিন সন্ধ্যায় দেশ ছেড়ে ওমানে পালিয়ে যান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। এরপর থেকে আফগানজুড়ে তালেবানের ভয়ে ভীত মানুষজন মধ্যে দেশ ছেড়ে পালানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। সোমবার (১৬ আগস্ট) দেশ ছাড়তে হাজার হাজার মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায় কাবুল বিমানবন্দরে।

এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর বিমানের ডানায় চড়ে দেশ ছাড়ার চেষ্টায় চলন্ত বিমান থেকে তিনজনকে মাটিতে আছড়ে পড়তে দেখা যায়। 

বিমানবন্দরে হুড়োহুড়ি করে উঠতে গিয়ে অন্তত পাঁচজনের প্রাণহানি ঘটে বলে পশ্চিমা গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়। তবে দেশটির সংবাদমাধ্যম তোলো নিউজের বরাতে জানা যায়, কাবুলের বিমানবন্দরে হুড়োহুড়িতে প্রাণহানি ঘটেছে কমপক্ষে ১০ জনের।

আফগানিস্তানের ক্ষমতা তালেবানের হাতে যাওয়ায় অনেকেই দায়ী করছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে। তালেবানের এমন অগ্রযাত্রা দেখেও ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণায় অটল থেকে আফগানিস্তানকে এই পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়ার জন্য এখন ঘরে-বাইরে সমালোচিত হচ্ছেন তিনি।

পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের কাবুল ত্যাগের বিষয়টি ১৯৭৫ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পরাজয়ের সঙ্গে তুলনা করছেন অনেকেই। 
তবে সায়গন পতনের সঙ্গে কাবুল ত্যাগের বিষয়টি তুলনা করতে নারাজ জো বাইডেন। 

এক নজরে আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি :
২০০১ সালের অক্টোবর থেকেই আফগানিস্তানে অভিযান পরিচালনা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। 

২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ন্যাটোর সদস্য দেশগুলো আফগানিস্তানে সামরিক শক্তি বৃদ্ধির অঙ্গীকার করে। যুক্তরাষ্ট্র আরও ১৭ হাজার সৈন্য পাঠানোর কথা ঘোষণা করে।

২০০৯ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মার্কিন সৈন্য সংখ্যা আরও ৩০ হাজার বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেন। এর ফলে মোট সৈন্য সংখ্যা দাঁড়ায় এক লাখে। সে সময় ২০১১ সালের মধ্যে সৈন্য প্রত্যাহার শুরু হবে বলেও জানান তিনি।

২০১৪ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন আফগানিস্তানে তাদের সরাসরি যুদ্ধ অবসানের কথা ঘোষণা করে।

২০১৫ সালের মার্চে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির অনুরোধের পর সৈন্য প্রত্যাহার বিলম্বিত করার কথা ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট ওবামা।

২০১৫ সালের অক্টোবরে ২০১৬ সালের শেষ পর্যন্ত ৯ হাজার ৮০০ মার্কিন সৈন্য আফগানিস্তানে অবস্থান করবে বলে ঘোষণা করেন ওবামা। 

২০১৬ সালের জুলাইয়ে নিরাপত্তাজনিত কারণে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৮ হাজার ৪০০ মার্কিন সৈন্য আফগানিস্তানে থাকবে বলে আবারও ঘোষণা করেন ওবামা। ন্যাটোও এ সময় সৈন্য মোতায়েন রাখার বিষয়ে সম্মত হয়।

২০১৭ সালের আগস্টে তালেবানের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও সৈন্য পাঠানোর কথা ঘোষণা করেন।

২০১৮ সালে তালেবানের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র। 

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শান্তিচুক্তি ভেঙে যায়। 

এরপর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দীর্ঘ দিন আলোচনার পর দোহায় তালেবানের সঙ্গে সমঝোতা সই হয়, যাতে আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা বলা হয়। 

২০২১ সালের ১ মে চুক্তি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র।

২০২১ সালের ২ জুলাই সেনাদের সর্বশেষ দলটি আফগান ত্যাগ করে। 

তালেবানের উৎপত্তি :
১৯৭৯ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে দীর্ঘ এক দশকের সোভিয়েত দখলদারির অবসানের পর সেনা প্রত্যাহারকালে গোলযোগপূর্ণ বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। সে সময় উত্তর পাকিস্তানে জন্ম হয় তালেবানের।

ধারণা করা হয়, মাদরাসাগুলোতে প্রথম এরা সংগঠিত হয়। এই মাদরাসাগুলো পরিচালিত হতো সৌদি অর্থে এবং সেখানে খুবই কট্টর সুন্নি মতাদর্শের ইসলামই প্রচার করা হতো।

পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান- এ দুই দেশের সীমান্তের দুই দিকেই আছে বিস্তীর্ণ পশতুন অধ্যুষিত অঞ্চল। তালেবান এসব অঞ্চলে খুব দ্রুতই প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। তালেবান নেতারা সে সময় প্রতিশ্রুতি দেন, ক্ষমতায় গেলে তারা শান্তি এবং স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবেন। এ ছাড়াও দেশটিতে কঠোর শরিয়া শাসন জারি করবেন বলে জানান তারা। 

দক্ষিণ-পশ্চিম আফগানিস্তান থেকে খুব দ্রুতই প্রভাব সম্প্রসারিত করে তালেবান। ১৯৯৫ সালের সেপ্টেম্বরে তারা ইরান সীমান্তবর্তী আফগান প্রদেশ হেরাত দখল করে নেয়। আর এর ঠিক এক বছর পর তারা আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখল করে নেয়।

১৯৯৮ সালে আফগানিস্তানের প্রায় ৯০ শতাংশ অঞ্চলে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে তালেবান।

সোভিয়েতরা আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাওয়ার পর অন্তর্দ্বন্দ্ব শুরু হয় মুজাহিদিনদের মধ্যে। তাদের বাড়াবাড়িও পছন্দ করছিল না নাগরিকগণ। এমন অবস্থায় তালেবানের আবির্ভাবকে স্বাগত জানায় আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষ। 

দুর্নীতি দমন, আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও তালেবান নিয়ন্ত্রিত রাস্তা দিয়ে এবং অঞ্চলে নিরাপদে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ করে দেয়ায় প্রথম দিকে বেশ জনপ্রিয়তা পায় তালেবান।

ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে তালেবান কঠোর শরিয়া শাসনের অধীনে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মতো শাস্তি চালু করে। অপরাধী কিংবা ব্যভিচারীদের প্রকাশ্যে হত্যা করা হতো। চুরির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের হাত কেটে নেয়া হতো। আর পুরুষদের দাড়ি রাখা এবং মেয়েদের পুরো শরীর ঢাকা তথা বোরকা পরা বাধ্যতামূলক করা হয়।

এ সময় দেশটিতে টেলিভিশন, সঙ্গীত এবং সিনেমা নিষিদ্ধ করে তালেবান। দশ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার দরকার নেই বলেও নিয়ম জারি করে তারা।

তালেবানের এমন কর্মকাণ্ডে তাদের বিরুদ্ধে বহু ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংসের অভিযোগ ওঠে। তাদের সবচেয়ে ভয়াবহ কাণ্ড ছিল ২০০১ সালে আফগানিস্তানের মধ্যাঞ্চলে বিখ্যাত বামিয়ান বুদ্ধের মূর্তি ধ্বংস করা। তখন তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে নিন্দার ঝড় ওঠে।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আলকায়েদার হামলার পর সারা বিশ্বের মনোযোগের কেন্দ্রে চলে আসে আফগানিস্তানের তালেবান। এই সন্ত্রাসী হামলার প্রধান সন্দেহভাজন ওসামা বিন লাদেন এবং তার আলকায়েদা আন্দোলনকে আশ্রয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে তালেবানের ওপর।

এরপর ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট আফগানিস্তান আক্রমণ করে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই তালেবানের পতন ঘটে। সে সময় তালেবানের তৎকালীন নেতা মোল্লাহ মোহাম্মদ ওমর, অন্যান্য সিনিয়র নেতা এবং আলকায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। 

পরবর্তীতে আফগানিস্তানে বিপুল পরিমাণ বিদেশি সৈন্যের উপস্থিতি সত্ত্বেও তালেবান আবারও সংগঠিত হয়। ক্রমাগতই বাড়িয়েছে তাদের শক্তি। আফগানিস্তানের নানা অঞ্চলে আবার তাদের প্রভাব বিস্তার করে। আফগানিস্তানের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে তারা বিপজ্জনক করে তোলে এবং সহিংসতার মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছে, যা ২০০১ সালের পর আর দেখা যায়নি।

কাবুলে তারা বহু হামলা চালায়। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে ন্যাটো জোটের ক্যাম্প বাস্টিয়ন ঘাঁটিতেও এক বিরাট দুঃসাহসিক অভিযান চালায় তালেবান।

সম্প্রতি তালেবানের ক্ষমতা দখল নেয়া আগের সেই আফগানিস্তানের শাসনামলের পুনরাবৃত্তি হবে কি না তা নিয়ে সংশয়ে বিশ্ববাসী। তবে দখলের পর পূর্বে কার্যকর করা তাদের আইনগুলো শিথিল করার আশ্বাস দেয় সংগঠনটির নেতারা। বিশ্ববাসীর নজর এখন আফগানিস্তানের দিকে। নতুন শাসনামলে আফগানবাসীর জন্য কেমন আইন প্রণয়ন করবেন তালেবান নেতারা- এই কৌতূহল আজ সারা দুনিয়ায়। 

ইফাত/সবুজ/এম. জামান

আন্তর্জাতিক সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ