প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২৪, ১০:২৬ এএম
গত ৭ জানুয়ারি শরীরে জ্বর নিয়ে বাসা থেকে ক্যাম্পাসে ফেরেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আল জাবের আহমেদ। পরদিন থেকে ক্রমশ খারাপ হতে শুরু করে তার শরীর। এ অবস্থায় পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটলে ১৩ জানুয়ারি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেকে) ভর্তি হন তিনি। বিভিন্ন পরীক্ষা শেষে চিকিৎসক জানায় হেপাটাইটিস ‘এ’ অর্থাৎ জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছেন।
এভাবে জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন একই বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী রেদোয়ান-উল হক নাসিফ। শুধু তারাই নন এভাবে হেপাটাইটিস ‘এ’ অর্থাৎ জন্ডিসে আক্রান্ত সংখ্যা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। গত এক সপ্তাহে পরিসংখ্যানে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৮ শিক্ষার্থী আক্রান্ত হয়েছেন এই রোগে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হল, একাডেমিক ভবনসহ পুরো ক্যাম্পাসে সাবমার্সিবল পাম্পের সংখ্যা খুবই কম। এদিকে টিউবওয়েল ও মোটরের পানিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকায় এ রোগের সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান রাবির মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসকেরা। এদিকে শিক্ষার্থীদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল এবং একাডেমিক ভবনগুলোতে যেন বিশুদ্ধ পানির ব্যাবস্থা করা হয়।
রাবির মেডিকেল সেন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৫ জানুয়ারি থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৪৬ জন শিক্ষার্থীর পরীক্ষা করালে হেপাটাইটিস ‘এ’ অর্থাৎ জন্ডিস ধরা পড়ে ৬০ জন শিক্ষার্থীর শরীরে।
তাদের মধ্যে ১৫ তারিখ ১১ জন পরীক্ষা করালে জন্ডিস আক্রান্ত হন সাতজন, ১৬ তারিখে ১৩ জনের মধ্যে পাঁচজন, ১৭ তারিখ আটজনের মধ্যে ছয়জন, ১৮ তারিখ ২১ জনের মধ্যে ১২ জন, ২১ তারিখ ১৬ জনের মধ্যে ১০ জন, ২২ তারিখ ১৭ জনের মধ্যে আটজন, ২৩ তারিখ ১৫ জনের মধ্যে পাঁচজন, ২৪ তারিখ ১৮ জনের মধ্যে আটজন এবং ২৫ তারিখ ২৭ জনের মধ্যে সাতজন শিক্ষার্থীই জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান চিকিৎসক ডা. তবিবুর রহমান শেখ বলেন, শীতকালে ঠান্ডার কারণে মানুষ চলাচল কম করে যার ফলে রক্ত চলাচলও কম হয়। হেপাটাইটিস ‘এ’ ভাইরাসের কারণেই জন্ডিস হচ্ছে। এটি মূলত একটি পানিবাহিত রোগ। এ রোগ থেকে নিরাময় পেতে হলে সবার আগে প্রয়োজন শিক্ষার্থীদের সচেতনতা। যেসব শিক্ষার্থী হলে থাকে তারা সাবমারসিবলের পানি খেতে হবে। ক্যাম্পাসে হোটেল ও ক্যান্টিন মালিকদের উচিত বিশুদ্ধ টিউবওয়েল বা সাবমার্সিবল পাম্পে তোলা পানি দিয়ে রান্নার কাজ করা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা। লক্ষণ খারাপ মনে হলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে এসে ট্রিটমেন্ট নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, যেদিন থেকে জন্ডিস আক্রান্ত রোগী ধরা পড়েছে তারপর থেকেই আমরা মেডিকেল সেন্টারে বলে দিয়েছি এটা যেন সচেতনভাবে দেখা হয়। এছাড়া আমরা গণমাধ্যমের সাহায্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জানাতে চেষ্টা করেছি তারা যেন যেকোনো জায়গার পানি পান না করে। টিউবয়েল বা সাবমার্সিবল পাম্পে তোলা বিশুদ্ধ পানি পান করেন।