প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৯, ২০২৪, ০৮:২৮ পিএম
উত্তরের হিমেল হাওয়ার সঙ্গে ঘন কুয়াশা। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত কুয়াশার আবরণে পথঘাট ঢাকা থাকছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমেছে। এতে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। শীত বাড়ায় রাজশাহীতে শীতজনিত নানা রোগে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতালগুলোতে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগী স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দুই-তিনগুণ বেড়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দুই থেকে তিনগুণ বেড়েছে। প্রতিদিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল, উপজেলা হাসপাতাল ও বেসরকারি ক্লিনিকে রোগীরা চিকিৎসার জন্য আসছেন।
রামেক হাসপাতালের দেওয়া তথ্যমতে, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২৩ জন শিশু হাসপাতালের ১০ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে এ দুই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি আছে ৫৫১ জন। গত কয়েক দিনে তারা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। কোনো কোনো বেডে দুইজনকে রাখা হয়েছে। শয্যা সংকটের কারণে অনেক শিশুকে হাসপাতালের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর বেশিরভাগ শিশু জ্বর-সর্দি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত।
শিশু ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, রোববার রোগী ভর্তি হয় ৪৬ জন। সোমবার সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ৭২ জন। এভাবেই প্রতিদিন ঠাণ্ডাজনিত কারণে রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই।
শীতজনিত রোগী দিন দিন বাড়ছে উল্লেখ করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘এর মধ্যে শিশুদের সংখ্যা বেশি। ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে তারা। এছাড়া বয়স্কদের পাশাপাশি বিভিন্ন বয়সিরাও আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন। আক্রান্তদের বেশিরভাগই ডায়রিয়া, জ্বর-সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছেন।’
শীত বাড়ায় শিশু ও বয়স্কদের প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না করার পরামর্শ দিয়ে ডা. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘এ সময়ে যে কেউ ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এসব রোগ থেকে রেহাই পেতে গরম কাপড় ব্যবহার, যতটা সম্ভব ঠাণ্ডা পরিবেশ এড়িয়ে চলা জরুরি। শিশুদের ঠাণ্ডা বাতাস থেকে দূরে রাখা, সেই সঙ্গে ধুলাবালু থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে হবে। শৈত্যপ্রবাহ চলাকালে শিশুদের ঘর থেকে কম বের করতে হবে। ঘরের মধ্যে ঠাণ্ডা বাতাস যেন না প্রবেশ করে, সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে অভিভাবকদের।’
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে ভর্তি রোগীর চেয়ে বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা বেশি। পরিস্থিতি খুব খারাপ, এমনটি নয়। প্রতি বছর এ সময়ে রোগী বাড়ে। সে রকম ব্যবস্থাপনাও আছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ রোগীকে বহির্বিভাগে চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যাদের অবস্থা গুরুতর তাদের ভর্তি নেওয়া হচ্ছে।’
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, ‘শুক্রবার সকাল ৯টায় রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।’