• ঢাকা শনিবার
    ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

চিনি নিয়ে যত ভ্রান্ত ধারণা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৩, ০৯:৩০ পিএম

চিনি নিয়ে যত ভ্রান্ত ধারণা

সংগৃহীত

সিটি নিউজ ডেস্ক

ফল থেকে চিনি মিলবে। তবে সেটা খারাপ নয় মোটেই। ফলেও রয়েছে চিনি। তাহলে কি ফল খাবেন না?
চিনি নিয়ে এই ধরনের নানান বিষয় প্রচলিত থাকা নতুন কিছু নয়। তবে এই ফেইসবুকের আমলে এসব তথ্যগুলো এখন বেশি চোখের পড়ে। এরমধ্যে অনেক বিষয়ই থাকে যা সঠিক নয়।
নিউ ইয়র্ক’য়ের পুষ্টিবিদ সামান্থা ক্যাসেটি বলেন, “ফ্যাট-ফ্রি ডায়েট’য়ের প্রচলন নব্বইয়ের দশক থেকে। খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সেই সময় থেকেই খাবারের স্বাদ বাড়াতে নানান পদ্ধতি অবলম্বন করে আসছে। বিস্কুট যদি খেতে মজা না লাগে তাহলে আর কিনবেন কেনো?”


ফলে চিনি পরিবর্তে ব্যবহার হতে থাকে ঘি-সহ নানান উপকরণ।
ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ক্যাসেটি আরও বলেন, “যে কারণে দেখা গেছে ‘লো ফ্যাট’ খাবারের মোড়কে লেখা থাকলেও সেখান থেকে মিষ্টি গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে।”
আর এই ধরনের খাদ্যাভ্যাসের কারণে বাড়তে পারে প্রদাহ, কোলেস্টেরল, হতে পারে ডায়াবেটিস, কমতে পারে ভালো কোলেস্টেরল ‘এইচডিএল’য়ের মাত্রা।
ক্যাসেটি জানান, এজন্য বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে বার বার উঠে এসেছে ভালো চর্বি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা। ‘মেডিটরিয়ান ডায়েট’কে এখন স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে অলিভ অয়েলের উপস্থিতি একটা কারণ।
তিনি বলেন, “মোড়কের গায়ে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ লেখা থাকে। খেয়াল করলে দেখা যাবে প্রায় প্রতিটা খাবারেই রয়েছে চিনির উপস্থিতি। সেটা প্যাকেটজাত সুপ পাউডার থেকে শুরু করে ওট মিল্ক পর্যন্ত।”
ক্যাসেটি ‘ইউএস ডায়েটারি গাইডলাইন্স’য়ের তথ্যানুসারে জানান, প্রতিদিন নারীর ক্ষেত্রে ছয় চা-চামচ এবং পুরুষের জন্য নয় চা-চামচের কম চিনি গ্রহণ করা উচিত।
মনে রাখতে হবে খাদ্য উপাদান ‘ভালো’ বা ‘খারাপ’ হয় না। এগুলো সবই খাবার। তাই চিনি নিয়ে প্রচলিত ধারণাগুলো সম্পর্কে পরিষ্কার থাকা দরকার।


ধারণা: ফলে রয়েছে চিনি, সে কারণে পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে


প্রাকৃতিক চিনি আর খাবারে আলাদাভাবে চিনিযুক্ত করার পেছনে আকাশ পাতাল ফারাক।
ক্যাসেটি বলেন, “ফলে থাকা চিনি আসে প্রাকৃতিকভাবে। পাশাপাশি থাকে ভিটামিন, খনিজ, আঁশ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।”
তরমুজে চিনি রয়েছে। তবে এতে ৯০ শতাংশই পানি থাকে। যা আর্দ্র থাকার জন্য জরুরি। এছাড়াও রয়েছে এল-সিট্রালাইন, যা ব্যায়ামের পর পেশির ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
সব ফল থেকেই মিলবে এরকম উপকার। এমনকি উচ্চ চিনি সমৃদ্ধ ফল কলা এবং আঙুরও ভালো। আর এসব ফল যদি বাদামসহ খাওয়া যায় তাহলে আরও ভালো।
কারণ ফল থেকে মিলবে ভিটামিন সি, আঁশ, অল্প প্রোটিন পাশাপাশি বাদাম থেকে আসবে ম্যাগনেসিয়াম ও উদ্ভিজ্জ ‘এএলএ ওমেগা থ্রিস’। এগুলো শরীরের জন্য উপকারী।


ধারণা: বিকল্প হিসেবে কৃত্রিম চিনি ভালো


‘ডায়েট সোডা’, কৃত্রিম চিনিযুক্ত মিষ্টি খাবার বা চা ও কফিতে কৃত্রিম চিনি মেশানো- আপাতদৃষ্টিতে স্বাস্থ্যকর মনে হলেও, ব্যাপারটা বরং উল্টো।
ক্যাসেটি বলেন, “আমি এই বিষয়ে আসলে নিশ্চিত না। কারণ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে কৃত্রিম চিনিও ক্ষতির কারণ হয়। তাই আমি এই ধরনের খাবার এড়িয়ে চলি।”
প্রাথমিকভাবে কৃত্রিম চিনি গ্রহণের ফলে চিনি গ্রহণের পরিমাণ কমলেও সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যকর নয়। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে এই ধরনের চিনি দেহের ইনসুলিনের প্রতিক্রিয়াতে বাজে প্রভাব ফেলে। যা থেকে টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার উচ্চ ঝুঁকি থাকে।
তাই যারা কোমল পানীয় এড়াতে পারছেন না তাদের ক্ষেত্রে মাঝে মধ্যে ডায়েট সোডা পান করার পরামর্শ দেন এই পুষ্টিবিদ। অবশ্যই প্রতিদিন না। আর সবচেয়ে ভালো হয় কৃত্রিম চিনি গ্রহণ একেবারে বাদ দেওয়া।


ধারণা: যেসব খাবারে প্রাকৃতিক চিনি থাকে, সার্বিক চিনি গ্রহণের ক্ষেত্রে সেগুলো গণনা করার দরকার নেই
প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম চিনি নিয়ে নানান ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। ম্যাপল সিরাপ, মধু বা খেজুর থেকে তৈরি সিরাপ- প্রক্রিয়াজাত চিনির স্বাস্থ্যকর বিকল্প।


ক্যাসেটি বলেন, “ওটমিল বা চায়ের সঙ্গে এসব মিশিয়ে খাওয়া স্বাস্থ্যকর। এখান থেকে মিলবে সামান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তবে এধরনের প্রাকৃতিক চিনিও সার্বিক চিনি গ্রহণের সঙ্গে গণনা করতে হবে। তাই খেতে হবে পরিমাণ মতো।”
বাজার থেকে এই ধরনের খাবার কেনার সময় মোড়কের গায়ে লেখা চিনির মাত্রা খেয়াল করতে হবে। ফল দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ‘বার’য়ে প্রাকৃতিক চিনিই থাকবে। তবে স্বাদ বাড়াতে যদি বাড়তি চিনি যোগ করা হয় তখন মিষ্টি গ্রহণের মাত্রা বেড়ে যাবে।
আবার বিস্কুটের প্যাকেটে গ্লুটেন ফ্রি লেখা থাকলেও চিনির পরিমাণটা দেখে নিতে হবে।
ক্যাসেটি বলেন, “আরেকটি প্রাকৃতিক চিনির কথা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই। সেটা হল ল্যাক্টোস।”
এই উপাদান প্রায় সব দুগ্ধজাত খাবারেই পাওয়া যায়। ফলের মতো এই চিনিও দেহে বাজে প্রভাব ফেলে না।
তবে এই পুষ্টিবিদ পরামর্শ দেন যে, “বাজারে রঙিন ও স্বাদ বৃদ্ধির উপাদান মিশিয়ে নানান ধরনের দই বিক্রি হয়। সেগুলোতে কী পরিমাণ চিনি মেশানো হয়েছে তা মোড়ক দেখেই বুঝে নিতে হবে। সেখানে চিনি বা চিনিজাতীয় উপাদান থাকবেই। আইসক্রিমের ক্ষেত্রেও একই বিষয় বিবেচনা করতে হবে।”


ধারণা: যে কোনো ধরনের চিনি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়


এই ধারণা সার্বিক অর্থে ঠিক নয়।
“প্রথমমতো, রক্তে শর্করার প্রতিক্রিয়া ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হয়”, বলেন ক্যাসেটি।
আরও বলেন, “সার্বিকভাবে মনে রাখতে হবে, ‘কার্ব’ দলবদ্ধভাবে ভালো কাজ করে। ওটমিল কিংবা ফল যাই খাওয়া হোক, এসবের সঙ্গে অন্যান্য পূর্ণ খাবার যেগুলোতে প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও আঁশ রয়েছে, সেগুলো খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে না।”
চিনির প্রতি আগ্রহ কমাতে করণীয়
গুনে গুনে চিনি খাওয়া সম্ভব হয় না। তাই ক্যাসেটির পরামর্শ হল, “যদি মনে করেন চিনি গ্রহণের মাত্রা কমাবেন তবে কোমল পানীয়, রেস্তোরাঁয় গিয়ে চিনিযুক্ত আইসড টি, ক্রিম দুধ চিনি দেওয়া কফি, মিষ্টি দই এসব খাওয়া বাদ দিন।”
তিনি আরও বলেন, “পাশাপাশি বাড়তি চিনি যুক্ত করা হয়নি এরকম শুকনা ফল কয়েকদিন চিবিয়ে দেখুন। জিহ্বাকে এই ধরনের খাবারের প্রশিক্ষণ দিন। কারণ আপনার স্বাদ যন্ত্র নিয়ন্ত্রিত হয় অভ্যস্ততায়। একদিনে সম্ভব হয় না। তাই ধীরে ধীরে মিষ্টি খাবার খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে আনলে দৈনিক অতিরিক্ত চিনি গ্রহণের পরিমাণ কমবে।”
আরও মনে রাখতে হবে, শুধু চিনি বাদ দিলেই হয় না সার্বিকভাবে সুষম খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত হওয়ার দরকার রয়েছে।
ক্যাসেটি বলেন, “শক্তি বৃদ্ধি আর অতিরিক্ত ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণের জন্য সারাদিন স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নেওয়ার পাশাপাশি অলস জীবন ত্যাগ করা, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ দূরে রাখার চেষ্টাও করতে হবে।”
কারণ অপর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ থেকেও মিষ্টি খাবার খাওয়ার ইচ্ছে জাগে।

 

আরিয়ানএস/

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ