প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৩, ০১:৫৯ পিএম
বাংলাদেশে ১৫ লাখের মতো মানুষ ক্যান্সারের জীবাণু বয়ে বেড়াচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর ক্যান্সার (আইএআরসি) বলছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর নতুন করে দেড় লাখ মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের মধ্যে মৃত্যু হচ্ছে ১ লাখ ৮ হাজার মানুষের। তাদের চিকিৎসার জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় শয্যা আছে মাত্র ৫০০।
আক্রান্তদের মধ্যে মাত্র ৫০ হাজার রোগীকে চিকিৎসা সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে। অন্যরা চিকিৎসার বাইরে থাকছে। অথচ দেশে কতসংখ্যক মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে। এ অবস্থায় শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ‘বৈষম্য কমাই,ক্যান্সার সেবায়’ প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী, ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশে ১৭০টি ক্যান্সার চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রয়োজন। কিন্তু সরকারি পর্যায়ে মাত্র নয়টি এবং বেসরকারি পর্যায়ে ছয়টি হাসপাতালে ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রতিবছর রোগী বাড়লেও ক্যান্সার চিকিসার পরিধি বাড়ছে না। সরকারি পর্যায়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট হাসপাতাল, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যান্সারের চিকিৎসা হয়। এগুলোর মধ্যে ক্যান্সার হাসপাতাল ছাড়া অন্যগুলোতে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা নেই। বেসরকারিভাবে রাজধানীর ইউনাইটেড, স্কয়ার, ডেল্টা, আহছানিয়া মিশন ক্যানসার হাসপাতাল এবং ঢাকার বাইরে খাজা ইউনুস, নর্থ-ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যান্সারের চিকিৎসা দেওয়া হলেও তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। দরিদ্র মানুষের পক্ষে এসব হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া অসম্ভব। দেশে ক্যানসার চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। সারা দেশে মাত্র দেড়শ চিকিৎসক রয়েছেন। আটটি বিভাগে ১০০ শয্যার ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার কথা ছিল বর্তমান সরকারের মেয়াদে। ২০১৯ সালে একনেকে আট বিভাগীয় শহরে একটি করে ১০০ শয্যার ক্যান্সার হাসপাতাল প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু চলতি বছরে তা শেষ হবে না বলে স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।
জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল সূত্র বলছে, সরকারি ৪৬টি বিশেষজ্ঞ এবং ৪২টি শিক্ষানবিশ পদের চিকিৎসক রয়েছেন। অর্থাৎ সরকারি পর্যায়ে ৩২ হাজার ৬০৮ রোগীর বিপরীতে একজন চিকিৎসক রয়েছেন। ক্যান্সার চিকিৎসায় সারা দেশে ৫০০ শয্যা রয়েছে। তার মানে তিন হাজার রোগীর বিপরীতে শয্যা আছে একটি। সরকারি পর্যায়ে কোনো অনকোলজিস্ট নার্স নেই। মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের দেওয়া জনবল নিয়ে রেডিওথেরাপি চিকিৎসা চলছে। রেডিওথেরাপি টেকনোলজিস্টদের ৬৫ পদের মধ্যে ৩৯টিই শূন্য পড়ে আছে।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোল্লা ওবায়েদুল্লাহ বাকী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, রাজধানীর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া দেশের অন্য হাসপাতালগুলোতে নামেমাত্র ক্যান্সার চিকিৎসা চালু আছে। যন্ত্রপাতি ও জনবলেরও যথেষ্ট অভাব রয়েছে। শুধু ঢাকামুখী নয়, জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে হলে ক্যান্সার চিকিৎসার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।
একই প্রতিষ্ঠানের অপর সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. শেখ গোলাম মোস্তফা গণমাধ্যমকে বলেন, দেশে ক্যান্সারের সর্বোচ্চ চিকিৎসা থাকলেও অপর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনার কারণে মানুষকে সুচিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না। সরকারকে এ বিষয়ে ভাবতে হবে। এজন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞ তৈরির পাশাপাশি সেবার পরিধি বাড়লে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য বিদেশগামিতা হ্রাস পাবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে ১০০ শয্যার ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পাস হয়েছে। এসব হাসপাতালে বিকিরণ চিকিৎসার জন্য সর্বাধুনিক টেলিথেরাপি ও ব্রাকিথেরাপি মেশিন, অস্ত্রোপচার, ইনডোর ও ডেকেয়ার কেমোথেরাপির ব্যবস্থা থাকবে। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের রোগীদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা আসার প্রয়োজন হবে না। এতে করে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে। দিবসটি উপলক্ষে রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আলোচনা সভা হবে।