প্রকাশিত: জানুয়ারি ৫, ২০২৩, ০৪:৩৪ এএম
শীতের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বয়স্ক ও শিশুদের ওপর। এই দুই শ্রেণির মানুষ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন নিউমোনিয়া ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে। ঢাকার বাইরের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে, শয্যার তুলনায় চারগুণ শিশু রোগী ভর্তি রয়েছে হাসপাতালে। এখন পর্যন্ত ঠান্ডাজনিত সংক্রমণে শুধু ডিসেম্বরে মৃত্যু হয়েছে ১০ শিশুর।
চিকিৎসকেরা বলছেন, শীত মৌসুম শুরুর পর থেকেই শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ বা অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন (এআরআই), গলাব্যথা থেকে শুরু করে ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া ইত্যাদি রোগের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই হঠাৎ করে জেঁকে বসেছে শীত। শুষ্ক ও দমকা বাতাসে এর প্রকোপ আরো বাড়ছে। শীতের এই সময়ে প্রায় সব বয়সের মানুষেরাই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. ফারহানা ফারুক তন্দ্রা বলেন, শীতের সময় দেখা যায় যে শিশুরা পোশাক ঠিক মতো পড়তে চায় না, কানটা হয়তো বাইরে থাকে, ঠাণ্ডা পানি খায়- ফলে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হেলেনা বেগম বলেন, "শীতের সময় কিছু কিছু ভাইরাস থাকে যা শুধু শীতের সময়েই মাল্টিপ্লাই হয় বা আক্রমণ করে। এছাড়া বাতাসও অনেক বেশি শুষ্ক থাকে। ফলে ইনহেলেশন বা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শ্বাসতন্ত্রে চলে যায়"।
কী কী রোগ হয়?
শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. ফারহানা ফারুক তন্দ্রা এবং অধ্যাপক ডা. হেলেনা বেগম বলেন, শীতের মৌসুমে শিশুদের সাধারণত সর্দি, ঠাণ্ডা, কানের সমস্যা, নাকে পানি পরা, হাঁচি-কাশি এবং ভাইরাস জনিত রোগ বেশি হয়। নবজাতকদের ক্ষেত্রে ডায়রিয়া এবং জ্বরও দেখা দিতে পারে। শীতকালে ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের ভাইরাল ডায়রিয়া হয় যাকে রোটা ডায়রিয়া বলে। এছাড়া যেসব রোগ দেখা যায় সেগুলো হল-
নিউমোনিয়া,ডায়রিয়া,গ্যাসট্রোএনটারাইটিস বা খাবারে বিষক্রিয়া,অ্যাজমা, আগে থেকে থাকলে এসময় সেটা আবার এ্যাটাক হয়,নসিলাইটিস,প্যারোটাইটিস বা মামস,ইনফ্লুয়েঞ্জা যেসব শিশুর এ্যালার্জী থাকে তাদের শ্বাসকষ্ট হয়
প্রতিকার কী?
এই সময়ে শিশুদেরকে রোগ থেকে দূরে রাখতে হলে সচেতনতা বেশি দরকার বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, বাবা-মা বা স্বজনদের খেয়াল রাখতে হবে যেন শিশু কোনভাবেই ঠাণ্ডা লাগিয়ে না ফেলে। এ সময় যেসব সতর্কতা নিতে হবে-
প্রথম যেটি করতে হবে তা হল শিশুদের গরম রাখতে হবে। ঘরের পরিবেশ গরম রাখতে হবে।
শিশুদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। শিশুদের ঠাণ্ডা লেগে গেলে অনেক সময় শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এসময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন নাক বন্ধ হয়ে না থাকে। নাক-মুখ ভাল ভাবে পরিষ্কার রাখতে হবে।
একটা বাচ্চা অসুস্থ হলে তাকে অন্য বাচ্চাদের থেকে একটু সরিয়ে রাখার চেষ্টা করতে হবে।এছাড়া পরিবারের অন্যদের রোগ হলে শিশুদের সামনে আসার সময় অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে।বাচ্চাদের উষ্ণ গরম পানি খাওয়াতে হবেপ্রতিদিন গোসল না দিয়ে দু-তিন দিন পর পর গোসল করাতে হবে এবং উষ্ণ গরম পানি দিয়ে গোসল করাতে হবে।
বাচ্চারা বাইরে বের হলে পুরো শরীরের সাথে সাথে কান ঢাকতে হবে, টুপি, হাত ও পা মোজা পড়াতে হবে যাতে বাতাস না লাগে
বাইরের খাবার খাওয়ানো যাবে না
বাচ্চাদের সামনে এ সময় ধূমপান করাটা উচিত নয়। এতে অ্যাজমার সমস্যা বেড়ে যাওয়া আশঙ্কা থাকে।
ঠাণ্ডা জাতীয় খাবার যেমন আইসক্রিম, কোমল পানীয় এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে
এ্যালার্জী যাদের নেই তাদের বয়স ৬ মাসের উপরে হলে তাদের এ্যালার্জীর প্রতিষেধক দিতে হবে।
কখন চিকিৎসকের কাছে নেবেন?
চিকিৎসকরা বলছেন, কিছু কিছু সময়ে দেখা যায় যে, সর্দি বা ঠাণ্ডা লাগলে তা বাসাতেই কিছু ব্যবস্থা নিলে সেরে যায়। আবার অনেক সময় এগুলো সহজে ভাল হতে চায় না। তারা বলছেন, শিশুদের মধ্যে নির্দিষ্ট ধরণের লক্ষণ দেখা দিলে তাদেরকে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। সেগুলো হল-
শিশু যদি খাওয়া কমিয়ে দেয়প্রস্রাব যদি কমে যায়ত্বকে বা অন্য কোথায় ব্লিস্টার বা চর্মরোগ দেখা দিলে
বাচ্চার ডায়রিয়া হলে যদি পানি শূন্যতা দেখা দেয়উচ্চ মাত্রায় জ্বর অর্থাৎ তাপমাত্রা যদি ১০০ বা ১০১ থাকে এবং সেটা না কমে শ্বাস কষ্ট দেখা দেয় এবং এর জন্য বাচ্চা ঘুমাতে না পারলে
অতিরিক্ত বমি করলে বাচ্চা যদি নেতিয়ে পড়ে বা দুর্বল হয়ে যায় বাচ্চা মায়ের বুকের দুধ টেনে খেতে না পারলে অথবা বাচ্চার যদি যেকোন কারণে খিচুনি হয়।