প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২২, ১২:০২ এএম
নানা অনিয়ম ও অভ্যাসজনিত কারণে অনেকেই অতিরিক্ত মোটা স্বাস্থের হয়ে থাকেন। অনেকেই আবার মোটা হওয়ার কারণে হীনমন্যতায় ভোগেন। তাই হতে হতে চান চিকন। এর জন্য করতে থাকেন অনেক চেষ্টা-তদবীর। কিন্তু এই চেষ্টা এক সময় পরিণত হয় রোগে। কেননা রোগা হওয়া ভালো লক্ষণ নয় বলে সতর্ক করেছেন ভারতের একজন বিশিষ্ট চিকিৎসক।
রোগা মানেই যে একজন সুস্থ তা কিন্তু নয়। অতিরিক্ত রোগা হলে অসুখের ঝুঁকি বাড়ে। আবার অসুখের কারণেও অনেকে রোগা হন। এমন ইঙ্গিত দিলেন ভারতের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায়।
তিনি জানান, মোটা হওয়ার পেছনে যেমন কারণ রয়েছে, রোগা হওয়ার পেছনেও কারণ রয়েছে।
বংশগত বা জেনেটিক কারণ তা হয়ে থাকে। অনেক সময় দেখা যায়, যে পরিবারে বাবা-মা রোগা তাদের সন্তানও রোগা হয়েছে। এরা প্রচুর খেলেও মোটা হতে পারে না। এর পিছনে হরমোন সংক্রান্ত গতিপ্রকৃতি দায়ী। যেসব হরমোন আমাদের ওজন বাড়ায় যেমন, সোমাটোট্রপিক হরমোন, অ্যাড্রিনালিন, কর্টিকোস্টেরয়েড, ইনসুলিন ইত্যাদি হরমোনের তারতম্যের কারণে বংশগতভাবে অনেকেই অতিরিক্ত রোগা হয়।
যাদের বংশগত কারণে গঠন রোগা রোগা, তারা রোগা থাকলে অসুবিধা নেই। কিন্তু যাদের গঠন মোটাসোটা তারা যদি অতিরিক্ত রোগা হয় তাহলে কিন্তু এই রোগার কারণে অনেকে রোগ ডেকে আনতে পারে। যেমন অতিরিক্ত মোটা হওয়া একটা সমস্যা, তেমনই অতিরিক্ত রোগা হওয়াও সমস্যা।
ইচ্ছে এবং জোর করে রোগা হলে কী হয়?
যাদের বিএমআই ১৮.৫-এর কম তাদের আমরা রোগা বলব। বেশি রোগা হলে বেশ কিছু সমস্যা হতে পারে।
প্রথমত, ত্বকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যায়, এতে ত্বকে সংক্রমণ দেখা দেয়। চামড়ার তলার ফ্যাট কম থাকায় ওয়েদার ইনটলারেন্স হয়। গরম কিংবা ঠাণ্ডা কিছুই বেশিক্ষণ ত্বক ধারণ করতে করতে পারে না। সামান্য ঠাণ্ডাতেই দুর্বল হয়ে পড়ে। এতে বিভিন্ন রকম সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। দাঁতের সমস্যাও হয়। শরীরে ভিটামিন ডি ও ক্যালশিয়ামের সমস্যা হয়।
দ্বিতীয়ত, পেটজনিত নানা সমস্যায় ভোগান্তি বাড়ে। এদের হজমশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।
তৃতীয়ত, শরীরে কোষ বিভাজন ঠিক মতো হয় না, ফলে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। মুখে, জিভে ঘা হতে পারে, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদান্ত্র ও পাকস্থলীর বিভিন্ন স্তরে ঘা হতে পারে।
চতুর্থত, খুব রোগা যারা তাদের শ্বাসপ্রশ্বাসের নানা সমস্যা হতে পারে। ফুসফুস খুব দুর্বল হয়ে যায়।
পঞ্চমত, অতিরিক্ত ওজন কম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে। এতে রোগের সম্ভাবনা বাড়ে।
এ ছাড়াও যাদের ওজন কম হয় তাদের অস্টিওস্পোরোসিস, বন্ধ্যাত্বের মতো সমস্যাও প্রবল আকার ধারণ করতে পারে।
এ ছাড়াও কিছু বিষয় রোগা হওয়ার জন্য দায়ী– যেমন, জন্মগত কিছু রোগের কারণে অনেকেরই ওজন ঠিকমতো বাড়ে না। কী কী রোগের কারণে এমন হতে পারে?
জন্মগত ত্রুটি থাকলে খাবার ঠিকমতো পরিপাক হয় না, খাবার হজম হয় না, পুষ্টি মলের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। এতে ওজন কমিয়ে যায়। এ ছাড়া হর্সপ্রাং ডিজিজ, ম্যালঅ্যাবজর্বসন সিন্ড্রোম ইত্যাদি জন্মগত অসুখের কারণেও রোগা হওয়ার প্রবণতা থাকে।
সংক্রমণের কারণেও এমন হতে পারে। টিউবারকিউলোসিস ইত্যাদি কারণে খাবার ঠিকমতো শরীরে দ্রবীভূত হতে পারে না। ফলে পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবে ওজন কম থাকে।
ডায়াবেটিস যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে তাহলেও ওজন কম হয়।
এ ছাড়া হার্টের রোগ, শরীরে কোনো ক্যানসার বাসা বাঁধলে অনেকেই রোগা হতে পারে। এইচআইভি আক্রান্ত হলেও দ্রুত ওজন কমতে পারে।
পরামর্শ: দ্রুত ওজন কমলে চিকিৎসকের কাছে যান –
হঠাৎ করে ওজন কমলে একেবারেই সেটা সাধারণ ব্যাপার ভাববেন না। এর পিছনে বিভিন্ন অসুখ দায়ী হতে পারে।
যদি রোগা হওয়ার কারণে কোনো অসুখ না হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে ডায়েট করা জরুরি।
ডায়েটে ক্যালোরির পরিমাণ বাড়াতে হবে। যেমন- একটু মিষ্টি খেতে হবে, প্রোটিনের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
যারা নিরামিষ খান তাদের ডায়েটে ডাল, সোয়াবিন, পনির রাখতে হবে। এতে পেশির শক্তি বৃদ্ধি পায়। শরীরে এনার্জি বাড়ে। ধীরে ধীরে ওজনও স্বাভাবিক হয়।
রোগাদের চেহারা ঠিক করার জন্যও কিন্তু নিয়মিত ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ করতেই হবে। অনেকের ধারণা ভুল যে রোগাদের ব্যায়াম করলে ওজন আরও কমবে। তবে এক্সপার্টের পরামর্শ মতো সব করতে হবে। আর কখনোই কোনো ওষুধ খেয়ে মোটা হওয়ার চেষ্টা করা চলবে না। কারণ এতে উপকারের চেয়ে উল্টোটাও হতে পারে।
কিউ/এআরআই