প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২২, ০৩:৫৬ এএম
দেশে হঠাৎ করেই বাড়তে শুরু করেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে নতুন করে কেউ মারা না গেলেও প্রায় প্রতিদিন বাড়ছে শনাক্তের সংখ্যা।করোনার বৃদ্ধি ঠেকাতে ছয় দফা সুপারিশ করেছে কোভিড সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। বুধবার (১৫ জুন) রাতে কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লার সই করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
সুপারিশগুলো হলো:
১. স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য জনসাধারণকে পুনরায় উদ্বুদ্ধ করতে সব প্রকার গণমাধ্যমে অনুরোধ জানাতে হবে। সব ক্ষেত্রে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা, ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নীতি প্রয়োগ করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম বর্জন করা প্রয়োজন। ধর্মীয় প্রার্থনার মান (যেমন- মসজিদ, মন্দির, গির্জা ইত্যাদি) গুলিতে মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা দরকার।
২. যাদের জ্বর, সর্দি, কাশি হচ্ছে তারাও অনেকে কোভিড টেস্ট করেছেন না। এতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না এবং এ কারণে সংক্রমণ বাড়ছে। এ জন্য যাদের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে এবং যারা কোভিড -১৯ আক্রান্ত মানুষের সংস্পর্শে আসছেন তাদের টেস্ট করার জন্য অনুরোধ করতে হবে।
৩. যে সব দেশে কোভিড- জীবাণুর variant & sub-variant সংক্রমণের হার বেশি সে সব দেশ থেকে আমাদের দেশে আগত আক্রান্ত মানুষের মাধ্যমে প্রবেশ করছে বলে মনে করা হয়। এ জন্য বিমানবন্দর ও নৌ-বন্দরসমূহে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ, টাকা সনদ আবশ্যক করতে হবে। বিশেষত অধিক আক্রান্ত দেশগুলো থেকে আগত যাত্রীদের জন্য। সন্দেহজনক ব্যক্তিদের র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করার ব্যবস্থা করতে হবে। সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
৪. কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজ যারা এখনও নিতে পারেননি তাদের এটা নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী করতে হবে ৫ থেকে ১৯ বছরের শিশুদের ভ্যাকসিন দেয়ার ব্যাপারে NITAG এর পরামর্শ অনুসরণ করা দরকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চতুর্থ ডোজ অনুমোদন করলে তা বিবেচনা করতে হবে। কোভিড-১৯ এর ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করার জন্য সম্ভাব্যতা বিবেচনা করা দরকার। ভ্যাকসিন পরবর্তী প্রতিরোধ ক্ষমতা কতদিন বজায় থাকছে যে সম্বন্ধে গবেষণা করা প্রয়োজন।
৫. কোডিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য যে বিশেষ রোগীদের চিকিৎসার জন্য যথাযথভাবে প্রস্তুত রাখা শয্যা, আইসিইউ ব্যবস্থা ও জনবল ছিল, তা বর্ধিত হারে আক্রান্ত প্রয়োজন।
৬. সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন হলে আন্তন্ত্রণালয় সভা করা যেতে পারে।
গত কয়েকদিনে দেশে করোনা সংক্রমণ আবার ঊর্ধ্বমুখী। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সবশেষ তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২৩২ জন। তবে আশার কথা, করোনায় আক্রান্ত হয়ে টানা ১৬ দিন কারো মৃত্যু হয়নি দেশে। ফলে মোট মৃতের সংখ্যা ২৯ হাজার ১৩১ জনে অপরিবর্তিত আছে। বুধবার (১৫ জুন) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়।
এনিয়ে টানা ১৩ দিন করোনা শনাক্তের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গত ২ জুন থেকে দেশে ক্রমাগত করোনা সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। ২ জুন ২২ জন, ৩ জুন ২৯ জন, ৪ জুন ৩১ জন, ৫ জুন ৩৪ জন, ৬ জুন ৪৩ জন, ৭ জুন ৫৪ জন, ৮ জুন ৫৮ জন, ৯ জুন ৫৯ জন, ১০ জুন ৬৪ জন, ১১ জুন ৭১ জন, ১২ জুন ১০৯ জন, ১৩ জুন ১২৮ জন ও ১৪ জুন ১৬২ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২৩২ জন।
এ নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৬৩৭ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হলো এবং তাদের মধ্যে মারা গেছেন ২৯ হাজার ১৩১ জন। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত ২৩২ জনের মধ্যে রাজধানীতেই ২১৬ জন।
জেডআই/