প্রকাশিত: জুন ২, ২০২১, ০৮:০৮ এএম
তাপ ও আলোর প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল হওয়ায় রাজধানী ঢাকার মাত্র চারটি
কেন্দ্রে দেয়া হবে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা। এই টিকা কোনোভাবেই আলো ও তাপের সংস্পর্শে
রাখা যাবে না বলে এই সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য অধিদফতরের।
অধিদফতর
এরই মধ্যে- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল,
শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে
ফাইজারের টিকা দেয়ার প্রস্তাব করেছে।
স্বাস্থ্য
অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানিয়েছে, এ টিকাও দুই ডোজ দেয়া হবে। প্রতি ডোজে শূন্য দশমিক
তিন এমএল সমপরিমাণ দেয়া হবে। প্রথম ডোজ প্রয়োগের ২৮ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ করা হবে।
সুরক্ষা অ্যাপসের মাধ্যমে নিবন্ধিত জনগোষ্ঠীকে এই টিকা দেয়া হবে।
টিকা
বৃত্তান্ত : ইন্ট্রামাসকুলার ইনজেকশন অর্থাৎ বাহুর উপরের মাংসপেশিতে প্রয়োগ করতে হবে।
সঠিকভাবে টিকা দিতে শূন্য দশমিক তিন এমএল এডি সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে হবে। যেহেতু ফাইজারের
টিকা জমানো, জীবাণুমুক্ত, প্রিজারভেটিভ এবং এডজুভেন্ট মুক্ত, মাল্টি-ডোজ কন্সেট্রেট
অর্থাৎ ঘনীভূত তাই মানবদেহে প্রয়োগের আগে অবশ্যই সংমিশ্রণ করতে হবে। এক্ষেত্রে এক ভায়ালের
সঙ্গে ডাইলুয়েট মিশ্রণের পর ছয় ডোজ টিকা প্রস্তুত হবে। সংমিশ্রণের জন্য দুই এমএলের সিরিঞ্জ
ব্যবহার করতে হবে।
যাদের
টিকা দেয়া যাবে না : ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা গর্ভবতী মা এবং দুগ্ধদানকারী মায়েদের
দেয়া যাবে না। অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়ার ইতিহাস (অ্যানাফাউল্যাক্সিস) থাকলে সেসব ব্যক্তিদের
টিকা দেয়া যাবে না। প্রথম ডোজ দেয়ার পরে যদি অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে তাহলে
দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যাবে না। কোনো ব্যক্তির শরীরে জ্বর থাকলে (৩৮.৫) ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের
বেশি টিকা দেয়া যাবে না। এমনকি গ্রহীতার কোভিড-১৯ রোগের লক্ষণ থাকলে সেরে না ওঠা
পর্যন্ত এ টিকা দেয়া যাবে না। এ ছাড়া অসুস্থ ও হাসপাতালে ভর্তি ব্যক্তিকেও এ টিকা দেয়া
যাবে না।
দ্বিতীয়
ডোজ দেয়ার আগে লক্ষণীয় : দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়ার আগে দেখতে হবে, প্রথম ডোজের পর কোনো
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছিল কিনা। বিশেষ করে ইনজেকশনের স্থানে ব্যথা, লাল হয়ে যাওয়া,
ইনজেকশনের স্থান ফুলে যাওয়া, ক্লান্তি, মাথাব্যথা, পেশির ব্যথা, সর্দি, আর্থালজিয়া,
জ্বর, বমি বমি ভাব ইত্যাদি। এ ছাড়া ম্যালেইজ, লিম্ফঅ্যাডিনোপ্যাথি, অ্যানফাউল্যাক্সিস
ইত্যাদি দেখা গেলেও ব্যবহার করা যাবে না। তাছাড়া টিকা প্রয়োগের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১৪
দিনের বিরতি থাকতে হবে।
সংরক্ষণের
তাপমাত্রা : ফাইজারের টিকা উৎপাদন পর্যায়ে হিমাঙ্কের নিচে ৯০ থেকে ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস
তাপমাত্রায় সংরক্ষণ হয়ে থাকে। বিমানবন্দরে একই তাপমাত্রায় এটি সংরক্ষণ ও পরিবহণ করা
হয়। ঢাকায় আসার পর কেন্দ্রীয় সংরক্ষণাগারে হিমাঙ্কের নিচে ৮০ থেকে ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস
তাপমাত্রায় রাখা হয়েছে। তবে নির্ধারিত টিকাদান কেন্দ্র দুই থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়
রাখা হবে।
টিকাদান
কেন্দ্র সরবরাহ পদ্ধতি : টিকা আল্ট্রা কোল্ড ফ্রিজার থেকে বের করার পর ছয় ঘণ্টা দুই থেকে আট ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেড তাপমাত্রায় আইএনআর ফ্রিজে রেখে গলিয়ে ব্যবহারের উপযোগী করে নিতে
হবে। শূন্য দশমিক ছয় লিটারের চারটি আইসপ্যাকসহ ফ্রিজ-প্রিভেন্টিভ অথবা ফ্রিজ ফ্রি ভ্যাকসিন
ক্যারিয়ারের মাধ্যমে টিকাদান কেন্দ্রর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সরবরাহ করা হবে।
ডাউলুয়েন্ট
মেশানোর আগে টিকার ভায়াল অবশ্যই কক্ষের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় পৌঁছাতে ১০ থেকে ১৫ মিনিট
টেবিলের ওপর রাখতে হবে। সংমিশ্রণের পর ভায়ালের লেবেলে সংমিশ্রণের তারিখ এবং সময় লিখে
রাখতে হবে। একবার গলানো ভায়াল পুনরায় জমানো যাবে না। সরাসরি আলোর নিচে টিকা রাখা যাবে
না। টিকার সঙ্গে সূর্যের আলো এবং আল্ট্রা ভায়োলেট আলোর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে।
সোমবার (৩১ মে) রাত ১১টা ১৩ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন
অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন-গ্যাভির কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি থেকে ফাইজার-বায়োএনটেক উৎপাদিত ১
লাখ ৬০২ ডোজ টিকা ঢাকায় পৌঁছায়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির
সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক এ তথ্য জানান। প্রাপ্ত টিকা বিমানবন্দর থেকে মহাখালীতে অবস্থিত
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির হিমাগারে রাখা হয়।
সবুজ/