• ঢাকা শুক্রবার
    ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১

ডায়রিয়ার কারণ কলেরা নাকি মানুষের অসতর্কতা?

প্রকাশিত: মার্চ ৩১, ২০২২, ০৬:৪১ পিএম

ডায়রিয়ার কারণ কলেরা নাকি মানুষের অসতর্কতা?

দ্বীন অর্ণব

বাংলাদেশে ঋতু পরিবর্তনের সময়ে নানা ধরনের রোগব্যাধি বাড়তে দেখা যায়। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় গ্রীষ্মের শুরুতে যা প্রকট হয়ে ওঠে। সময়ে জ্বর, ঠান্ডাজনিত সমস্যা ছাড়াও দেখা যায় বিভিন্ন ধরনের পানিবাহিত রোগ। ছাড়া পানিশূন্যতা, ডিহাইড্রেশনসহ বিভিন্ন ধরনের স্কিন ডিজিসেসের সমস্যা দেখা যায় শরীরে।

কিন্তু বছরে গ্রীষ্ম না আসতেই সামান্য ঋতু পরিবর্তনের ছোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। এরই মধ্যে ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে উদ্বেগজনক হারে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। হঠাৎ ডায়রিয়া এমন প্রকট আকার ধারণ করায় শঙ্কা দেখা দিয়েছে দেশবাসীর মধ্যে।

চিকিৎসকরা বলছেন, গরমের সময় বিশেষ কয়েকটি রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে দেখা যায়। যদিও হুহু করে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বেড়ে যাওয়াটা উদ্বেগজনক। কিন্তু কিছুটা সতর্ক হলেই এসব রোগ থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখা সম্ভব।

আইসিডিডিআর,বি থেকে নেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বছর ডায়রিয়া সংক্রমণ অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। রাজধানীর মহাখালীর কলেরা হাসপাতালে গত ২২ মার্চ এক দিনে সর্বোচ্চ এক হাজার ২০০-এর বেশি ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। সেদিন প্রতি দেড় মিনিটে ভর্তি হয়েছেন একজন।

পরে গত ২৮ মার্চ সেই রেকর্ডও ছাড়িয়ে প্রতি ঘণ্টায় ৫৬ জন করে মোট এক হাজার ৩৩৪ রোগী ভর্তি হন। মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) দুপুর ২টা পর্যন্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন ৭৬৯ জন।

হাসপাতালে কর্তব্যরত এক চিকিৎসক জানান, হঠাৎ এত পরিমাণ ডায়রিয়া রোগী বেড়ে যাবে, কেউ কল্পনা করেনি। হাসপাতালে প্রতিদিনই আসছেন নতুন রোগী। এদিকে, হাসপাতালে শয্যা সংকট হওয়ায় বাইরে তাঁবু টানিয়ে দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা। একই সঙ্গে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এত চাপ থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছেন চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগীসহ ডায়রিয়া আক্রান্তরা।

ডায়রিয়ায় সারা বছর কমবেশি অনেকে আক্রান্ত হলেও হঠাৎ এটি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের অসতর্ক চলাফেরাকেই দুষছেন বিশেষজ্ঞরা।

চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতিবছরই গরম এলে পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়। এর কারণ, গরমের সময় রাস্তা-ঘাটে, হাট-বাজারে, যানবাহনে দূষিত পানি শরবত পানের প্রবণতা বাড়ে। ছাড়া এবার করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ার পর স্বাস্থ্যবিধি মানা, বিশেষ করে হাত ধোয়ায় অনীহা ডায়রিয়া বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

আইসিডিডিআর,বি বলছে, এবার ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ কলেরা। এতে সাদা চাল ধোয়া পানির মতো পাতলা পায়খানা হয়, দ্রুত পানিশূন্য হয়ে যায় শরীর। দূষিত পানি খাবারের মাধ্যমেই জীবাণু ছড়ায়। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, মাছি, হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবার প্রস্তুত পরিবেশনের সময় অপরিষ্কার হাতের ব্যবহার ধরনের প্রাদুর্ভাবের জন্য দায়ী।

ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে হলে যা মানতে হবে :ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। যেমন, পানি ফুটিয়ে খেতে হবে। পানি বলগ ওঠার পর - মিনিট ফুটাতে হবে, এরপর ঠান্ডা করে খেতে হবে। বাইরের পানি পরিহার করুন। রাস্তার ধারের শরবত, আখের রস, লেবুপানি পান করবেন না। বাইরে গেলে সঙ্গে পানির বোতল রাখুন।

হাত ধুতে হবে। অবশ্যই খাওয়ার আগে টয়লেট থেকে আসার পর সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুতে হবে।

ডায়রিয়া হলে করণীয়: শরীর থেকে যতটা লবণ পানি বেরিয়ে যাচ্ছে, তা পূরণ করা। জন্য রোগীকে ঘনঘন খাবার স্যালাইনসহ তরল খাবার খেতে হবে। ছাড়া যে কারণে ডায়রিয়া হয়েছে তার চিকিৎসা করতে হবে।

যতবার পাতলা পায়খানা বা বমি হবে, ততবারই সমপরিমাণ খাওয়ার স্যালাইন খেতে হবে।

রোগীকে স্বাভাবিক পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।

মনে রাখবেন, ডায়রিয়া হলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। পানিশূন্যতা তীব্র হলে তা বিপজ্জনক হতে পারে, বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের জন্য।

এফএ
আর্কাইভ