• ঢাকা রবিবার
    ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১

সীমান্তের ৭ জেলা লকডাউনের সুপারিশ স্বাস্থ্য অধিদফতরের

প্রকাশিত: মে ৩০, ২০২১, ০১:৩৭ পিএম

সীমান্তের ৭ জেলা লকডাউনের সুপারিশ স্বাস্থ্য অধিদফতরের

লাইজুল ইসলাম

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ বাড়ার কারণে ভারতের সীমান্তবর্তী সাত জেলায় লকডাউনের সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিশেষজ্ঞ কমিটি।

রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্য–বিষয়ক কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, গতকাল শনিবার এক বৈঠকে বিশেষজ্ঞ কমিটি নওগাঁ, নাটোর, সাতক্ষীরা, যশোর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও খুলনা জেলায় লকডাউনের সুপারিশ করেছে। এসব জেলায় সংক্রমণ বেশি। এ ছাড়া নোয়াখালী ও কক্সবাজারের সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে কমিটি। আজ এই সাত জেলায় লকডাউনের সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানা গেছে। 

বিশেষজ্ঞ কমিটি এ সুপারিশ আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানাবে। মন্ত্রণালয়ে আজ বিকেলে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে সাত জেলার লকডাউনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। ইতোমধ্যে করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ২৪ মে রাত থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় এক সপ্তাহের লকডাউন দেয়া হয়েছে।

উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে। সঙ্গে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কাও রয়েছে। এসব এলাকার মানুষের অসচেতনতা ও ভ্রান্ত ধারণার কারণেই এটি একরকম আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রয়োজনীয় সচেতনতা কার্যক্রম ও প্রস্তুতি ছাড়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জকে ‘বিশেষ লকডাউনে’র আওতায় আনায় ওই এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এরই মধ্যে সেখানকার অনেক মানুষকে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় যেতেও দেখা গেছে। রুট রাজশাহীমুখী এবং চিকিৎসার ক্ষেত্র রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হওয়ায় সংক্রমণ ঝুঁকিতে পড়েছে রাজশাহীও।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার প্রধান কারণ ওই দেশে তাদের যাতায়াত। দেশের অনেক সীমান্তে এখনও সেইভাবে কড়াকড়ি নেই। অনেক জায়গায় কাঁটাতাতের বেড়াও নেই। এতে তারা ভারতে অবাধে যাতায়াত করেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর কয়েকটি উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকা ভারতের সীমান্তবর্তী। সেখান দিয়ে বিভিন্ন উপায়ে চোরাচালনও বন্ধ নেই। এসব মাধ্যমেই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

তারা আরও বলছেন, সাধারণ মানুষ এখনও তেমন সচেতন নয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্ক ও কঠোর লকডাউন দেয়ায় সেখানকার মানুষ এক ধরনের আতঙ্কিত হয়েই কিছুটা সচেতন হচ্ছে। আবার এখনও অনেকেই সচেতন হচ্ছে না। মাস্কও ব্যবহার করছে না। এতে সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়ছে। নতুন করে আক্রান্ত ও মৃত্যু হচ্ছে। অন্যদিকে, যাদের মাঝে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। তারা বাসায় আইসোলেশনে আছেন। সেখানে তারা আসলেই আইসোলেশনে আছেন কিনা? কার্যকরভাবে তাদের মনিটরিং করা হচ্ছে কিনা? এমন অনেক বিষয় নিয়ে প্রশ্ন আছে।

এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের অনেক মানুষ করোনা আক্রান্ত ও লক্ষণসহ সাধারণ চিকিৎসা নিতে রাজশাহীতে যাচ্ছেন। কিন্তু রোগীদের মাঝে তেমন সচেতনতা দেখা যাচ্ছে না। ডাক্তাররা বলেও অনেক রোগী ও দর্শনার্থীদের মাস্ক পরাতে পারেন না। আর হাসপাতালগুলোকে এমনিতেই করোনা সংক্রমণের হটস্পট বলা হয়। সুতরাং সাধারণ মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন করতে হবে। কেনো না এই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট খুবই শক্তিশালী।

জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৭ জনের শরীরে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে চারজন পৌরসভার বাসিন্দা। এদের সবাই বাসায় আইসোলেশনে আছেন। তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। রোববার (৩০ মে) তাদের আবার করোনা পরীক্ষা করা হবে। তিনি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে কঠোরভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন হচ্ছে। ১০০ শতাংশ না হলেও প্রায় ৯৬ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমণের যে শঙ্কা ছিল তাও ছড়িয়ে পড়েছে। রাজশাহীতে ভারতীয় সংক্রমণ যেন ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য সামনে হয়তো কঠোর লকডাউন আসতে পারে। এছাড়া রাজশাহী জেলার যে কয়েকটি উপজেলার পাশে ভারতের সীমান্ত আছে, সে এলাকাগুলোর প্রতি বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে।

এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শেষ প্রান্ত ও রাজশাহী জেলার পশ্চিম প্রান্তে গোদাগাড়ীর বালিয়াঘাটা চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে খুব কম মানুষ আসছে। তবে গোদাগাড়ী উপজেলার পাশঘেঁষে মহানন্দা ও পদ্মা নদী। আর নদীর ওপরের অংশটুকু চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার। তাই অনেকে গোদাগাড়ীর বিভিন্ন পয়েন্টে নৌকা করে রাজশাহীতে প্রবেশ করছে।

রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শনিবার পর্যন্ত হাসপাতালের করোনার ওয়ার্ড ও আইসিইউয়ে চিকিৎসাধীন আছেন ১৯১ জন। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জেরই রোগী চিকিৎসাধীন আছেন ৯৪ জন। গত ১৬ মে থেকে ২৯ মে শনিবার দুপুর পর্যন্ত এ হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩৩ জন, চাঁপাইনবাগঞ্জের সীমান্তবর্তী উপজেলা গোদাগাড়ীর ১০ জনসহ রাজশাহী জেলার ২৪ জন, পাবনার দুই জন, কুষ্টিয়ার একজন ও নাটোরের একজন।

লাইজুল/নির্জন
আর্কাইভ