সিটি নিউজ ডেস্ক
২০১৯ সালে তাকে প্রথম শনাক্ত করা হয়। তার ভয়াল থাবায় বিপর্যস্ত বিশ্ব। তাকে দেখা যায় না। ছোঁয়া যায় না। খালি চোখে দেখা তো সম্ভব নয়ই। অথচ সে লন্ডভন্ড করে দিলো বিশ্বকে। মানুষের দৈনন্দিন জীবন প্রণালিকে। এ অদৃশ্য শক্তিশালী জীবাণুর নাম করোনাভাইরাস। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগটিকে বিজ্ঞানীরা বলছেন ‘কোভিড-১৯’। এই মহামারির চেয়েও ভয়ঙ্কর এখন বিশ্বে ‘পরিবেশ দূষণ’। সম্প্রতি বিভিন্ন দেশ এবং কোম্পানির পরিবেশ দূষণ বিশ্বজুড়ে বেশি মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী বলে জানানো হয়েছে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে।
মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক এই প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে। এতে কয়েকটি বিষাক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার বন্ধে ‘জরুরি ভিত্তিতে এবং উচ্চাভিলাষী ব্যবস্থা’ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘কীটনাশক, প্লাস্টিক এবং ইলেক্ট্রনিক বর্জ্যের কারণে বিশ্বজুড়ে যে দূষণ হচ্ছে, তাতে মানবাধিকার ব্যাপকভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। পাশাপাশি এই দূষণ বিশ্বজুড়ে এক বছরে অন্তত ৯০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটাচ্ছে। অথচ গুরুতর এই বিষয়টি বেশিরভাগ সময়ই এড়িয়ে চলা হয়।’
ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ মহামারিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৯ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
কত ভয়াবহ এ তথ্য-১ বছরে দূষণে মারা গেছে ৯০ লাখ মানুষ, সেখানে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৫৯ লাখ।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি ডেভিড বয়েড বলেন, ‘দূষণ এবং বিষাক্ত রাসায়নিকের কারণে মানুষ যে মৃত্যু ঝুঁকিতে রয়েছে, তা প্রতিরোধে বর্তমানে যেসব ব্যবস্থা আছে সেগুলো যে ব্যর্থ, তা পরিষ্কারভাবেই বোঝা যাচ্ছে। এর ফলে মানুষের একটি সতেজ, স্বাস্থ্যকর এবং স্থিতিশীল পরিবেশ পাওয়ার অধিকার বিশ্বজুড়েই লঙ্ঘিত হচ্ছে।’
আগামী মাসে পরিবেশবিষয়ক এই প্রতিবেদনটি জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে উপস্থাপন করা হবে। জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ স্বাস্থ্যকর পরিবেশকে মানুষের মানবিক অধিকার বলে ঘোষণা করেছে।
প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, সেখানে মানুষের তৈরি পরিবেশ দূষণকারী পদার্থ পলিফ্লুরোয়ালকাইল ও পারফ্লুরোঅ্যালকাইলের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। নন-স্টিক তৈজসপত্র তৈরিতে ওই দুই পদার্থ ব্যবহার করা হয়।
পলিফ্লুরোয়ালকাইল ও পারফ্লুরোঅ্যালকাইলের সঙ্গে মানুষের ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। এটিকে ‘আজীবনের রাসায়নিক’ বলা হয়। কারণ, এটি সহজে ভাঙে না, তাই এটি পরিবেশ থেকে নির্মূলও হয় না।
নতুন এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বাংলাদেশে ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫৪টি জেলারই বায়ুর মান আদর্শ মাত্রার চেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে। আদর্শ মাত্রার মধ্যে আছে মাত্র ১০টি জেলার বায়ুর মান।
এই অতিরিক্ত বায়ুদূষণের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব পড়ছে মানুষের প্রজনন ক্ষমতাসহ সার্বিক স্বাস্থ্যের ওপর।
বেসরকারি স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর জরিপে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
সর্বোচ্চ বায়ুদূষণ পরিমাপ করা হয়েছে গাজীপুরে, এরপরই রয়েছে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ, যেখানে বায়ুতে অতি ক্ষুদ্রকণার মাত্রা বাংলাদেশের আদর্শ মান প্রতি ঘনমিটারে ৬৫ মাইক্রোগ্রামের চেয়ে চার থেকে পাঁচগুণ বেশি।
আর বায়ুদূষণের জন্য দায়ী যে অতি ক্ষুদ্র কণা, সেটি আদর্শ মাত্রায় আছে কেবল ১০টি জেলায়। সর্বনিম্ন বায়ুদূষণ পরিমাপ করা হয়েছে মাদারীপুর, পটুয়াখালী ও মেহেরপুরে। এই অতি ক্ষুদ্রকণা বলতে ২.৫ মাইক্রন বা তার কম আকারের বস্তুকণার কথা বলা হচ্ছে।
একটি চুলের সঙ্গে তুলনা করলে এসব ধূলিকণার আকার চুলের প্রায় ২০ ভাগের এক ভাগের সমান, যা সহজেই মানবদেহে প্রবেশ করে নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে আক্রান্ত করতে পারে।
পরিবেশবিদদের ধারণা, দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশ বিশেষ করে ঢাকা, গাজীপুরসহ শিল্পাঞ্চল এলাকায় পরিবেশের ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দেবে।
ডাকুয়া/ফিরোজ
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন