নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
কে শোনে কার কথা। এই প্রবাদটি এবার সত্যি প্রমাণ করেছেন রাজধানীবাসী। গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে শত বাধার মধ্যেও ফিরে গেছেন। আবার ফিরতে শুরু করেছেন একইভাবে। এতে সংক্রমণ বাড়বে বলে ধারণা করছেন সংশ্লীষ্টরা। কিন্তু ঈদযাত্রা বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রী, রোগতত্ত্ব ও স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা আহ্বান করেছিলেন। বলেছিলেন কর্মস্থলে নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই থাকবে। তবে তাতে তেমন সাড়া দেননি সাধারণ মানুষ। সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করেই প্রাইভেটকার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, ট্রাকে একজন আরেকজনের গায়ে ঘেষে ঘেষে বসে ফিরেছে মানুষ। এই পরিস্থিতিতে সংক্রমণ বাড়বে বলে ধারণা করছেন সংশ্লীষ্টরা।
ঈদের দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা দেখতে গিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. এবিএম খুরশিদ আলম। তিনি বলেন, যারা স্বাস্থবিধি অমান্য করে বাড়ি গিয়েছেন, তারা যেন কিছুটা দেড়ি করে ঢাকায় আসে। এতে তীব্রভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পরার শঙ্কা কমবে।
সংক্রমণ বাড়লে আপনাদের প্রস্তুতি কি? এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থের ডিজি বলেন, দেশের প্রতিটি জেলায় আমাদের আইসোলেশন সেন্টার আছে। করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল আছে। পর্যাপ্ত সাধারণ সিট আছে। বিভাগীয় শহরগুলোর হাসপাতালে আইসিইউ, আইসিইউ সমতুল্য শয্যা, হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা, অক্সিজেন কনসেনট্রেটরসহ নানান প্রস্তুতি রয়েছে। রাজধানীতেও একই ব্যবস্থা আছে। তবে আমাদের বুঝতে হবে, চিকিৎসা ব্যবস্থায় আমাদের কিছুটা সীমাবদ্ধতা আছে। যেহেতু স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে সবাই গাদাগাদি করে বাড়ি গেছেন, তাতে সংক্রমণ ও মৃত্যু বৃদ্ধির শঙ্কা আছে।
তবে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। ঈদের পর স্বাস্থ্যবিধি না মানলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু যারা সংক্রমিত হয়ে ঢাকায় আসছে তাদের কী হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে মেয়র বলেন, যদি পরিস্থিতি খারাপ দিকে যায় তবে রাজধানী উত্তরের সব কমিউনিটি সেন্টারকে আইসোলেশন সেন্টারে রূপান্তর করা হবে। এগুলোকে হাসপাতালে পরিণত করা হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক বলেন, দেশে যথেষ্ট পরিমাণ অক্সিজেন মজুদ আছে। এ ছাড়াও বেশ কয়েকটি বেসরকারি কারখানা নিশ্চিত করেছে তারা অক্সিজেন প্রয়োজনে সরবরাহ করবে। আর বেসরকারি দাতা সংস্থাও অক্সিজেন সরবরাহ করেছে। তাই চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। কিন্তু যদি পরিস্থিতি বেশি খারাপ হয় তবে তা সামাল দেয়া কঠিন হয়ে যাবে। তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে বলেও মনে করিয়ে দেন মন্ত্রী।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঠিক এক মাস আগে (১৪ এপ্রিল) প্রথম রমজানের দিনের আগে ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার ১৮৫ জন। একই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ৯৬ জনের। একমাস পর গত ১৪ মে ঈদের দিনের আগে ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা ছিল ৮৬৪ জন, মৃত্যু ২৬ জন এবং সুস্থ রোগীর সংখ্যা ছিল ৮৫২ জন। ১৪ এপ্রিল থেকে ১৪ মে পর্যন্ত সময়ে মোট ৭৬ হাজার ৩৬৫ জন আক্রান্ত, ২ হাজার ১১৫ জনের মৃত্যু এবং ১ লাখ ২৯ হাজার ১৭২ জন সুস্থ হন।
এদিকে, সরকার চীন থেকে ইতোমধ্যে পাঁচ লাখ ভ্যাকসিন ডোজ হাতে পেয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। সেখান থেকেও ভ্যাকসিন পাওয়ার সুযোগ আছে। তবে যতদিন টিকা না আসে ততদিন মানুষকে সংক্রমণমুক্ত থাকতে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি (ঘরের বাইরে বের হলে মাস্ক পরা,ভিড় এড়িয়ে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলা, ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, স্যানিটাইজার ব্যবহার করা ইত্যাদি) মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এলআই/এএমকে/১৫ মে/২০২১
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন