• ঢাকা রবিবার
    ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১

কোনো ‘ভাঙচুর’ যেন আমাদের রুখতে না পারে : ডিআইজি শিপার

প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২১, ০৩:৫৯ পিএম

কোনো ‘ভাঙচুর’ যেন আমাদের রুখতে না পারে : ডিআইজি শিপার

রুহুল আমিন শিপার

বাংলাদেশ পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) রুহুল আমিন শিপার। তিনি একজন প্রতিভাবান লেখকও বটে। তার লেখার ভক্ত-অনুরাগীর সংখ্যাও কম নয়। তিনি বিভিন্ন সমসাময়িক বিষয় ও দেশ-বিদেশের নানা রকম অভিজ্ঞতার কথা নিপুণভাবে ফুটিয়ে তোলেন তার লেখনীর মাধ্যমে। 

এবার তিনি লিখেছেন ফরেন বডি সম্পর্কে। গত ২৬ জুলাই বেলা ১১টা ৩৯ মিনিটে তার ফেসবুক টাইমলাইনে লেখাটির প্রথম পর্ব পোস্ট করেন তিনি। যা ওই সময় সিটি নিউজ ঢাকার পাঠকদের জন্য প্রকাশও করা হয়। 

শুক্রবার (৬ আগস্ট) সকালে ফরেন বডি (শেষ পর্ব) নামে আরেকটি লেখা পোস্ট করেন ডিআইজি রুহুল আমিন শিপার। ফরেন বডি নিয়ে লেখা এই পর্বটিও সিটি নিউজ ঢাকার পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-

চোখ মেলতেই দেখি ফর্সা মতো অ্যাপ্রোন পরা এক ভদ্রলোক আমার দিকে ঝুঁকে আছেন। ক্লিনিকের চিকিৎসক। বয়স খুব বেশি নয়।

জিজ্ঞেস করলেন,
–আপনার বাড়ি কি পটুয়াখালী? 
–হ্যাঁ। আপনার?
–আমারও। কলাপাড়া।
–ও
–কাউকে দেখতে চান?
–আমার মেয়েকে। 

মোনামির বয়স তখন মাত্র চার মাস। বাবার কী হয়েছে বোঝার মতো বয়স তখনও হয়নি। অবাক হয়ে বড় বড় চোখে আমায় দেখছে। ওকে দেখে মনটা খুব আর্দ্র হয়ে গেল। আমি চোখ বুজে ফেললাম। 

দিন তিনেক পর ক্লিনিক থেকে ছুটির সময় হয়ে এলো। তো এখন কী করা? কুলাউড়া ফিরে যেতে পারি। অথবা চুপচাপ ঢাকার বাসায় বসে থাকা যায়। কিন্তু এর কোনোটাই শেষ পর্যন্ত করা হয়নি। কারণ খুব জিদ চেপে গিয়েছিল আমার। হাত যেহেতু ভেঙেছে তাই এ ট্রেনিংয়ের শেষ দেখতে ইচ্ছে হলো। অতএব হাত ভাঙার ঠিক আট দিনের মাথায় সবাইকে অবাক করে দিয়ে মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে ফিরে গেলাম। ব্যান্ডেজ বেঁধে ডান হাতখানা গলায় ঝুলিয়ে আমি অ্যাকাডেমিতে ফিরে যাব— এমনটা কেউ আশা করেনি। তাই আমার ফিরে যাওয়ায় সবাই খানিকটা অবাক হয়েছিল। 

এমন একটা কোর্স বাম হাতে পার করা আসলেই বেশ কঠিন। তবে কর্তৃপক্ষের বদান্যতায় মর্নিংওয়াক সেশনে আর যেতে হতো না। শুধু ক্লাসে যেতাম। বিএমএতে ফিরে না এলে আমি বুঝতাম না যে বাম হাত কোনো কাজের না। শরীরের দুটি হাত অবিকল একই রকম অথচ সমান দক্ষ নয়, এটা বুঝতে ডান হাত ‘বেহাত’ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হয়। এ দিকে মূল্যায়ন পরীক্ষা ঘনিয়ে আসায় বেশ চিন্তায় পড়ে গেলাম। ব্রায়ান লারা, সাঈদ আনোয়ার বাঁ হাতে বহুত খেল দেখালেও এক প্রস্থ কাগজ-কলম দিয়ে লিখতে বললে দেখবেন কেমন উচাটন হয়। এত দূরে যাওয়ার কী দরকার? এই শ্যামল বাংলায় যারা শুভকর্মে বাম হস্ত ‘ঢুকিয়ে’ দেয় অথবা বাঁ হাতের কারবারে ব্যাপক ‘ড্যাবরাত্ব’ লাভ করেছে তেমন কাউকে বাঁ হাতে দুই লাইন লিখতে বললে দেখবেন কেমন আপনার পা চেপে ধরেছে। ব্যাপারখানা এত সহজ নয়। 

সুতরাং চূড়ান্ত পরীক্ষা আমার জন্য প্রাণান্ত ব্যাপার হয়ে দাঁড়াল। তাই প্রতিদিন কলম নিয়ে বাম হস্তে ক্রমাগত প্রাকটিস চালিয়ে যাচ্ছিলাম। এভাবে মসি চালনা অশ্বচালনার চেয়ে মোটেও কম দুরূহ নয়। এমন অবস্থায় চূড়ান্ত পরীক্ষায় অবতীর্ণ হলাম। তাতে কাক এবং বকের পদযুগলের ন্যায় যা আঁকিবুঁকি করেছিলাম তা নিরীক্ষক মহোদয়ের ব্যাপার হলেও সে যাত্রায় পাস করে যাই। মিলিটারি অ্যাকাডেমির দিনগুলো এমনই আনন্দ-বেদনায় একসময় শেষ হয়ে গেল। এরপর চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি কর্মস্থল কুলাউড়া ফিরে গিয়েছিলাম। 

মৌলভীবাজারে গিয়ে আমার পুলিশ সুপার রওশন আরা বেগমের সঙ্গে দেখা করলাম। স্যালুট দেবার কোনো মওকা নেই। আমার দুর্দশা স্বচক্ষে দেখে তিনি খুব দুঃখ প্রকাশ করলেন। উপরন্তু ঢাকায় গিয়ে পরবর্তী চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শও দিলেন। সে মতে ঢাকায় এসে উত্তরার সেই ক্লিনিকে গেলাম। ব্যান্ডেজ খোলার পর দেখি ডান হাত অনেক খানি বাঁকা হয়ে গেছে। কিছুতেই সোজা হয় না।
 
অধ্যাপক সাহেব দুদিকে মাথা নেড়ে বললেন, 
–একটু দেরি হয়ে গেছে। আরও আগে খোলা দরকার ছিল। 
তিনি বলেই চলেছেন, 
–তবে সমস্যা হবে না। হাত সোজা হয়ে যাবে। আপনি ছোট বালতিতে পানি নিয়ে একটু একটু করে লিফটিং করবেন। ফিজিওথেরাপিও লাগবে কিন্তু। 

এসব উপদেশ আমার মাথায় না ঢুকে বরং আশ্বিনের মেঘমালার ওপর দিয়ে গেল। কোন বস্তু কোথায় কতটুকু আঁকা অথবা বাঁকা তা নিয়ে এখন আমার মোটেও ভাবনা নেই। কারণ, এক্স-রে বলছে হাতের ভেতরে একটি ছোট্ট হাড়ের টুকরো রয়ে গেছে। হাড়ের ভগ্নাংশ থেকে যাওয়ার বিষয়টা মন থেকে কিছুতেই তাড়াতে পারছি না। তাই ডাক্তার সাহেবের দিকে জিজ্ঞাসু নয়নে তাকিয়ে বললাম,
–স্যার, হাড়ের টুকরো রয়ে গেল যে। সমস্যা হবে না?
এক্স-রে দেখতে দেখতে অর্থোপেডিকসের বিখ্যাত অধ্যাপক বললেন, 
–না। সমস্যা হবে না। ওটা এখন আর আপনার দেহের অংশ নয়। ওটা ফরেন বডি। সারাজীবন এভাবেই থেকে যাবে। 

কী অদ্ভুত! ওনার দয়ায় আমার ‘বডির’ একটা অংশ মাঝখান দিয়ে ‘ফরেন’ হয়ে গেল। তার এলান অনুসারে ওটা এখন আর আমার নয়; বিলকুল লাওয়ারিশ। কারও মালিকানা নেই। স্বাধীন সার্বভৌম অকরদ অস্থিরাজ্য। আমার মেজো ভগ্নিপতি মামুন চিকিৎসক। ওরা তখন নিউজিল্যান্ডে থাকত। আমার ‘ফরেন বডির’ কেচ্ছা শুনে সে বেজায় ক্ষেপে গেল। বলল, 

–মাল্টিপল ফ্রাকচার হলে সার্জারি শেষে অপারেশন থিয়েটারেই এক্স-রে করে দেখার নিয়ম। সলিড কিছু না পেলেই কেবল ক্লোজ করা যায়। প্রফেসর হয়েও উনি এটা কী করলেন? 
‘উনি এটা কী করলেন’ তা মিলিয়ন ডলার কোয়েশ্চেন হলেও উক্ত অধ্যাপকের তা শোনার সময় কই? তিনি অতিশয় ব্যস্ত। ঢাকার উত্তর-দক্ষিণে দু-দুটো ‘প্রাইভেট’ এবং বিখ্যাত ‘পঙ্গু’ সামলানোর পরেও তিনি নিজে পঙ্গু না হয়ে যে ‘আস্ত ও খাড়া’ আছেন সেটাই ঢের। রোগী, রোগীর আত্মীয়স্বজন, ক্লিনিকের চেলা-চামুণ্ডারা সবাই তাকে যেমন তোয়াজ করে তাতে অমন বেরসিক প্রশ্ন করে বাঁকা হস্ত ‘সোজা’ না হওয়ার রিস্ক কে নেয় বলুন? তা ছাড়া  চামুণ্ডাদের হাতে চেলা কাঠ থাকাও বিশেষ আশ্চর্যের নয়। ‘বিশেষজ্ঞের’ ভুল হলেও এ মড়ার দেশে অমন ‘অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি’ ধরতে নেই। যারা ‘অজ্ঞ’ কেবল তারাই ও পথে যায় এবং নিষ্ফল যজ্ঞ করে। তাই ভগ্নিপতির ‘উস্কানিতে’ কান না দিয়ে আমি কুলাউড়া ফিরে গেলাম। 

কুলাউড়া এই প্রথম কোনো হাত ভাঙা এএসপির দেখা পেল। জীবন কত রঙই না দেখায়! অথচ ডান হাত অমন ‘অকেজো’ হওয়ার বছর কয়েক আগে চা বাগানে আমি ও কাজী স্বাধীন ঝাড়া টেনিস খেলতাম। সঙ্গে ছিল কালাম। আমরা সাধারণত ঘাসের কোর্টে খেলতাম। একটু কম গতির বল পেলে তাতেই স্বাধীন এমন স্পিন শট মারত যে বল খাড়ার ওপর জায়গায় বসে যেত, দৌড়ে এসে আর পেতাম না। তার ‘মারা’ দেখে মনে হতো স্পিন বোলার হলে সে পাকিস্তানি স্পিন জাদুকর আব্দুল কাদিরের পিতামহ হতে পারত। এমন দুর্দান্ত! তবে সেসব সোনালি স্মৃতি হয়েই থাকবে। যা হোক নিজেকে নানাভাবে প্রবোধ দেই। আমার আর টেনিস খেলা হবে না। ডান হাত আদৌ সোজা হবে কি না আল্লাহ জানেন। তার ওপর ফরেন বডি নামক অস্থি দূর ভবিষ্যতে কোন খেল দেখাবে কে জানে। সবকিছুই অনিশ্চিত। 

তবুও আমি অনেক ভাগ্যবান। কারণ পাশের রাজনগর উপজেলায় সিআরপির একটা শাখা পেয়ে গেলাম। যেন সিআরপি কর্তৃপক্ষ জানত যে ‘একদা আমার হাত ভাঙিয়া যাইবে’। নিয়মিত রাজনগর যাতায়াত চলছে। প্রথম দিকে চলল সোজা করার কাজ। এরপর কব্জি ঘোরানো চলল কিছু দিন। একসময় সব ঠিক হয়ে গেল। হাতে চিকন দাগ ছাড়া বাকি সব মুছে গেল একদিন। 

কদিন আগের খবর। হাত ভাঙার সঙ্গে নাকি প্রাপ্তিযোগ আছে। সেটা পদোন্নতি প্রাপ্তি। ঘটনাটা খুলে বলি। আমার সহধর্মিণী গোপন সূত্রে একদিন মহা উত্তেজক সংবাদ নিয়ে এলো। 
বলল, 
–ঘোড়া থেকে পড়ে হাত ভাঙলে নাকি আইজিপি হওয়া যায়। পুলিশ অ্যাকাডেমিতে জাবেদ পাটোয়ারী ভাইয়ের নাকি ভেঙেছিল। 
এরকম সংবাদে যেকোনো সুস্থ লোক উত্তেজিত হবেই। বললাম,
–তোমাকে যিনি এ সংবাদ দিয়েছেন তার কাছ থেকে একটু জেনে দ্যাখো তো বেনজীর স্যারেরও হাত ভেঙেছিল কি না। 

অপেক্ষায় আছি, কিন্তু আজ পর্যন্ত পাকা খবর দিতে পারেনি। তা ছাড়া স্যারের ভাঙলেও আমার তেমন কোনো আশা ছিল না। কারণ আমার হাত পুলিশ অ্যাকাডেমিতে নয়, মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে ভেঙেছিল। সেক্ষেত্রে আমার ‘স্ক্রিনড আউট’ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এই ভাবনা মনে আসা মাত্র খুব শান্ত হয়ে গেছি। 

লন টেনিস বাদ গেলেও ব্যাডমিন্টন, ফুটবল খেলেছি বহুদিন। এখন মাঝে মধ্যে জিমে যাই। কদিন আগে জিম আমাকে সেই পুরনো দিনে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। আমাদের পাঁজরের পেছনে এক ধরনের মাসল আছে যার নাম ল্যাটিসিমাস ডরসি (Latissimus Dorsi)। যে যন্ত্র দিয়ে এই মাসলের ব্যায়াম করা হয় তার নাম ল্যাট পুল-ডাউন (Lat pull-down)। একটি বার (Bar) দুই হাতে টেনে বুকের কাছে এনে আবার ছেড়ে দিতে হয়। সাধারণত ওই বারটি একটা হুকের সঙ্গে লাগানো থাকে। হুক থেকে খুলে এক্সারসাইজ করতে হয়। ঘটনার দিন সেই বার হুকের সঙ্গে লাগানো থাকলেও কোনো কারণে তা লক্ষ করিনি। বেখেয়ালে আচমকা টান দিতেই ডান হাত জুড়ে ব্যথা নেমে এলো। জিম থেকে অগত্যা বাসায় চলে এলাম। ভাবলাম দু-এক দিনে ব্যথা সেরে যাবে। দিন যায় কিন্তু ব্যথা আর কমে না। এতদিন বাদে হঠাৎ ফরেন বডির কথা মনে হলো। ভাবলাম, সেই ‘ফরেন বডি’ স্থানচ্যুত হয়ে কোনো নার্ভে আঘাত করেনি তো? এ ভাবনা আসতেই বেজায় ভয় পেয়ে গেলাম। ভয় আমায় সেন্ট্রাল পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে গেল। 

অর্থোপেডিকসের ডা. রিয়াজ স্ক্যান করে দেখতে চাইলেন। এই প্রথম আমার ফরেন বডির ত্রিডি দেখতে পেলাম। রিয়াজ বলছেন, 
–আপনার ফরেন বডি এইতো এখানটায় স্যার। এটা নার্ভের ওপর কোনো চাপ দিচ্ছে না। ফিমার বোনের পজিশনও ঠিক আছে। আমার মনে হচ্ছে মাসলে টান লেগেছে। 
বলেই পেইন কিলার লিখতে শুরু করলেন। তাকে বাধা দিয়ে আমি বললাম,
–ওই সিরিজের পেইন কিলার আমি খাই না।
–স্যার, তাইলে শুধু প্যারাসিটামল। 
প্যারাসিটামলের ‘প্যারা’ শেষ পর্যন্ত বেশি দিন সইতে হয়নি। ভালো হয়ে গেছি। আলহামদুলিল্লাহ। 

মেডিকেল রেসিডিউ হিসেবে উনিশ বছর আগেই এই ফরেন বডির ডাস্টবিনে যাওয়ার কথা ছিল। অথচ শল্যবিদের ‘বদান্যতায়’ কী সুন্দরভাবে আমার সঙ্গে লেপ্টে রয়েছে। এখন আমি বাথরুম থেকে বাল্টিমোর— যেখানেই যাই এ ‘মাল’ আমার সর্বক্ষণের সঙ্গী। সমাধিস্থ না হওয়া অব্দি ফরেন ‘অস্থি’ হতে নিস্তার নেই। মেনে নিয়েছি। 

আমি আবার আগের মতোই স্যালুট দিতে এবং নিতে পারি। বহু আগেই ভুলে গেছি যে আমাকে একবার সার্জনের ছুরির নিচে যেতে হয়েছিল। এই ভাঙা হাত ও হাড় আমার জীবনের অনিবার্য অনুষঙ্গ। না চাইলেও এমন অনেক অসম্পূর্ণতা নিয়েই আমরা জীবন সাজাই। আসল বিষয় হলো অ্যাডজাস্টমেন্ট। জীবন আপনাকে অনেক কিছু দেবে, আবার দেবে না। এসব নিয়ে না ভেবে জীবনের পথে এগিয়ে যাওয়াই নিয়ম। শুধু একটা বিষয় সবাই মনে রাখলে ভালো। 

সেটা হলো, কোনো ‘ভাঙচুর’ যেন আমাদের রুখতে না পারে। কোনোমতেই যেন না পারে। কারণ,
মৃত্যু আর জীবনের কালো আর সাদা
হৃদয়ে জড়িয়ে নিয়ে যাত্রী মানুষ
এসেছে এ পৃথিবীর দেশে;
কঙ্কাল অঙ্গার কালি— চারিদিকে রক্তের ভেতরে
অন্তহীন করুণ ইচ্ছার চিহ্ন দেখে
পথ চিনে এ ধুলোয় নিজের জন্মের চিহ্ন চেনাতে এলাম;
কাকে তবু?
পৃথিবীকে? আকাশকে? আকাশে যে সূর্য জ্বলে তাকে?
ধুলোর কণিকা অণুপরমাণু ছায়া বৃষ্টি জলকণিকাকে?
নগর বন্দর রাষ্ট্রজ্ঞান অজ্ঞানের পৃথিবীকে? 
(জীবনানন্দ দাশ, সাতটি তারার তিমির)

টিআর/এএমকে
আর্কাইভ