প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২৩, ১১:০২ পিএম
পড়াশোনাটা ধ্যান জ্ঞান পুনমের। কিন্তু পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতার অভাব। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পড়াশোনাটা হয়ে উঠছিল না। কিন্তু হাল ছাড়ার পাত্রী নন ভারতের মোহালির বাসিন্দা পুনম। পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য একটা চাকরিও জুটিয়েছিলেন। ডেন্টাল ক্লিনিকের চাকরিতে এত বেশি সময় দিতে হতো যে, পড়াশোনা হয়ে উঠছিল না। তাই তো চাকরিটা এক সময় ছেড়েই দিয়েছিলেন।
চাকরি ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পড়াশোনা শিকেয় ওঠার অবস্থা পুনমের। ফলে নতুন করে আবার শুরুর প্রতিজ্ঞা। এবার আর পরাধীন চাকরি নয়, স্বাধীন ব্যবসা। আর তাতেই স্বপ্ন পূরণের পথে পুনম। সন্ধ্যাবেলায় মোহালির রাস্তায় ফুচকা বিক্রি করেন, দিনে পড়াশোনা করেন।
ফুচকার ব্যবসা পুনমের। সঙ্গে পাপড়ি চাট, আলু টিক্কি, দধি ভল্লা। ঠেলা গাড়িতে সুন্দর করে সাজিয়ে অপেক্ষায় থাকেন খরিদ্দারের। বিক্রিবাট্টা মন্দ নয়। তবে প্রত্যেক দিন যে বেশি বেশি বিক্রি হয় তা নয়, কোনো কোনো দিন বিক্রি বাট্টা কম হয়। তাতে কিন্তু পুনমের মুখের হাসিতে ভাটা পড়ে না। স্থানীয়দের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় পুনমের দোকান। বিক্রি বাট্টা ভালো হওয়ায় পড়াশোনার খরচ নিয়ে আর দুঃশ্চিন্তা করতে হয় না তাকে। তাইতো কোনো কিছুতেই আক্ষেপ নেই পুনমের।
বেশ কিছুদিন আগে একজন ব্লগার পুনমের দোকানে ফুচকা খেয়েছিলেন। পুনমের ফুচকা তার এতটাই ভালো লাগে যে, তিনি পুনমের গল্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরেন। তারপরেই পুনমের পরিচিতি বেড়ে যায় কয়েক গুন। ব্লগারের সঙ্গে আলাপাচারিতায় পুনম বলেন, আমি কারো কাছ থেকে এটা শিখিনি। যা শিখেছি তা নিজে নিজেই।
ভিডিওতে এক জায়গায় লেখা ছিল `নিজের পড়াশোনা চালাতে ফুচকা বিক্রি করছেন মোহালির মেয়ে’। সেটি দেখেছিলেন প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ। পছন্দ করেছিলেন সাত লক্ষেরও বেশি মানুষ। পুনমের কঠোর পরিশ্রম আর সততায় মুগ্ধ হয়েছিলেন বহু মানুষ। প্রথমে পুনমের ফুচকা বিক্রির বিষয়টি পরিবার একেবারেই মেনে নেয়নি। আপত্তি জানিয়েছিল। বলেছিল, চাকরি খোঁজার কথা। পরে পুনম তাঁদের বোঝান যে, কোনও কাজই ছোট নয়।
শেষ পর্যন্ত বিষয়টি বুঝতে পারে পরিবার। বুঝতে পারে, সৎপথে থেকে অর্থ উপার্জনে কিছু খারাপ নেই। তা সে ফুচকা বিক্রি করেই হোক। এখন ফুচকা বিক্রি করেই পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছেন।
এর আগে আরও এক ফুচকা বিক্রেতার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। ২২ বছরের সেই যুবক হোটেল ম্যানেজমেন্ট পাশ করে রাস্তায় ফুচকার দোকান খুলেছিলেন। স্যুট, টাই পরে মোহালির রাস্তায় ফুচকা, চাট বিক্রি করেন তিনি। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘‘হোটেলে ম্যানেজমেন্টে আমার ডিগ্রি রয়েছে। তা মানুষকে বোঝানোর জন্যই স্যুট-টাই পরি।’’
যুবককে সাহায্য করেন তাঁর ভাই। তিনি জানিয়েছেন, সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠে রান্নার জোগাড় করেন। দোকান বন্ধ করে রাত ১২টায় ঘুমোতে যান তাঁর ভাই। হোটেলে চাকরি না করে স্বাধীন ভাবে নিজের দোকান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যুবক। ইচ্ছা রয়েছে, ভবিষ্যতে একটি চাটের দোকান খোলার। চললে সংখ্যা বাড়াবেন। পুনম যদিও সে রকম কোনও ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেননি।
সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন