• ঢাকা শনিবার
    ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বাবা এতটা ভালোবাসে জানতাম না

প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০২৩, ০৭:১৭ পিএম

বাবা এতটা ভালোবাসে জানতাম না

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

এখন আষাঢ় মাস, ঘরের চালে বৃষ্টি হচ্ছে। আমার মনে হলো, ঘরের চাল যে রকম ঝড়-তুফান ও রোদ-বৃষ্টি থেকে তার অধিবাসীকে রক্ষা করে, ঠিক তেমন এই জগৎ সংসারের সব কষ্ট-ক্লেশ-ব্যথা নিজের ওপর দিয়ে বয়ে নিয়ে বাবা পরিবারকে দিয়ে যায় নিরাপত্তা আর শান্তি। বাবা আমার মাস্টার মানুষ, কারণে-অকারণে মুখ দিয়ে বের হয় মিষ্টি কথার ফুলঝুরি, কখনো আবার অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠেন।

ছোটবেলায় একটু আগেই অক্ষরজ্ঞান লাভ করি। যতটুকু মনে পড়ে, সারি সারি টেবিলে আব্বার শিক্ষার্থীরা বসে থাকত, তাদের সঙ্গে থেকে শুনে শুনে  অনেকটা আয়ত্ত করে ফেলি বাংলা ভাষা। আব্বার শিক্ষার্থী আমাকে অনেক বেশি সোহাগ করত। প্রাইভেট পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের অনেকের থেকে পেতাম আমার প্রিয় চকলেট। মনের আনন্দে যখন চকলেট খেতাম, আচমকাই আব্বা এসে পড়া জিজ্ঞেস করত। তখন প্রিয় চকলেটটাও তেতো মনে হতো।

তার কাছ থেকেই শিখেছি কারও হৃদয়ে জায়গা করার জন্য অনেক টাকা-পয়সা বা যশ-খ্যাতির দরকার হয় না। হাসিমুখে মিষ্টি কয়েকটা বুলি পাওয়ার জন্যই দুনিয়ার মানুষ ব্যাকুল থাকে। আব্বার বহু গুণগ্রাহীর ভিড়ে আমি নেহাতেই ছোট্ট একটা মানুষ। তাই মুখ ফুটে কখনো মনের অব্যক্ত কথাগুলো বলতে পারিনি।


তবে ছোটবেলায় সবার মতো আমারও ধারণা ছিল, তিনি আমাকে ভালোবাসেন না, যেমনটি আমার অন্য ভাইদের ভালোবাসে। কিন্তু এসব ধারণা তাসের ঘরের মতো ভেঙে গিয়েছিল আজ থেকে ছয় বছর আগে। একটু খুলে বলি, তখন আমাকে তিনি প্রথম দূরে এক মাদ্রাসায় ভর্তি করাতে নিয়ে যান। যেদিন তিনি হুজুরের হাতে আমাকে তুলে দেন, দেখলাম হঠাৎই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন, আর বলতেছিলেন হুজুরকে, একটু দেইখা রাইখেন, আমার খুব আদরের ছেলে কোনোদিন মা-বাবা ছাড়া থাকেনি। আমি অপলকভাবে তাকিয়ে ছিলাম সেদিন, আমার জন্যই তিনি কাঁদছেন! তাহলে এতদিনের ধারণাগুলো কি আসলেই ভুল ছিল? সেদিন খুব অনুতপ্ত হয়েছিলাম।

বাবার মায়াভরা মনের ওপর যে পাতলা শাসনের আবরণ ছিল তখন তা বুঝেছি। কারণ পিটুনির পরেই বাবা খুব আত্মপীড়ায় ভুগত। আর আমার মনে পড়ল "শাজাহান" নাটকের সেই বিখ্যাত লাইন ’ পিতা যখন পুত্রকে শাসন করে, পুত্র ভাবে পিতা কী নিষ্ঠুর কিন্তু সে জানে না, পিতার উদ্যত বেতের অর্ধেক খানি পড়ে সে পিতার পৃষ্ঠেই।’


এডিএস/

আর্কাইভ