• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

রমজানে দুবাই

প্রকাশিত: মার্চ ২৭, ২০২৩, ১০:০৩ পিএম

রমজানে দুবাই

সেলিনা আক্তার লিনা

রমজান মাস এলেই দুবাই অপরূপ সাঁজ নেয় নিজ অঙ্গে। 
ঠিক যেমন সাজে কোনো আরব বেদুইন নারী। মাথায়, কপালে, হাতে, গলায়, কানে, নাকে দেয় সোনার জমকালো অলংকার। কিন্তু লাস্যময়ীর রূপ একটুও ঢাকা পরে না, আরও বেড়ে যায় , ঠিক তেমনি দুবাইর সাজেও তার জৌলুস বেড়ে যায়। 
কেমন করে ? যেমন ধরুন- খাবারের দোকানে, জিনিষপত্রে দোকান পরিপূর্ণ থাকে, দাম- তাও নাগালের মধ্যে। চাল, ডাল, তেল, চিনি, খেজুরসহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসে ৫০% পর্যন্ত মূল্য ছাড় থাকে। মরুভূমির দেশ হলেও সব ধরনের ফলমূল থাকে, দামেও বেশ ছাড় থাকে। পানীয়, দুগ্ধ জাতীয় জিনিষে থাকে বিশেষ মূল্য হ্রাস।

দর্জির দোকানে বেশ ভিড় হয় তবে দেশের মতো হুড়োহুড়ি হয় না, সবার কাজ হয়ে যায়। 
শাড়ি-পান্জাবীর দোকানে বা স্থানীয়দের কাপড়ের শো’রুমে প্রচুর ভীড় হয় তবে দাম নাগালের মধ্যেই থাকে, উল্টো আরও ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়। ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানী শো’রুমগুলোতে ভীড় থাকে বেশি। 
তবে সোনার দোকানে এ সময় কোনো ডিসকাউন্ট থাকে না, দামও থাকে অন্য সময়ের চেয়ে বেশি। ‘সোনা বলে কথা’ দাম তো থাকবেই।

সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা প্রচুর চ্যারিটি করে। রোজার দরকারি জিনিসপত্র প্যাকেজ করে বিভিন্ন লেবার ক্যাম্প ও পাহাড়ি অনুন্নত এলাকায় বিলি করা হয়। 

 

মানুষ ধর্মকর্ম করে একাগ্র চিত্তে। মেয়েরাও মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েন। মসজিদগুলো সত্যি একটা শান্তির জায়গা মনে হয়। 
স্কুলগুলোর সময় কমিয়ে দিয়ে দুপুরের আগেই ছুটি হয়। 
অফিসের সময়ও কমিয়ে দেয়া হয়। তবে নন মুসলিমদের একটু বেশি কাজের চাপ পড়ে। ওরাও তা মেনে নেয়। 
রোজার মাস আর মনোহরি ইফতার হবে না তা কি হয়? 
ঘরে ঘরে ও হোটেল রেস্টুরেন্টে বাহারি ইফতার ও সেহেরি করা হয়। 
বাঙালি সমাজে প্রচুর ইফতারির দাওয়াত থাকে। অফিস ও বিভিন্ন সংস্থা ইফতারির আয়োজন করে।

আমিরাতে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও মনোমুগ্ধকর হলো মসজিদগুলোতে ইফতারির আয়োজন। প্রায় সব মসজিদেই হয় তবে আমি উল্লেখ করব আবুধাবির শেখ যায়েদ গ্রান্ড মস্কয়ের ইফতারির কথা। 
যারা এখনো এই মসজিদের ইফতারির জন্য যাননি, অভিজ্ঞতার জন্য একবার হলেও যাওয়া উচিত। যারা রোজার মাসে আমিরাতে বেড়াতে আসবেন, একদিন সময় করে অবশ্যই যাওয়া উচিত, শুধুমাত্র আয়োজন ও তার বিশালতা এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা দেখার জন্য। 
১৫/২০ টা তাবু খাটানো হয়(বেশিও হতে পারে)। প্রতিটিতে ৩০০ থেকে ৫০০ লোক বসতে পারে(বেশিও হতে পারে, আমার ঠিক মনে নেই, অনেক ভিডিও আছে, দেখে নিতে পারেন)। যে কোনো ধর্মের লোকজন যেতে পারে তবে মাথা পা শরীর ঠিক মতো ঢাকতে হবে। গরিব-ধনী সবাই এক কাতারে বসে খায়। সব তাবুতে এসি আছে ও ধপধপে সাদা বিশাল বিশাল চাদর বিছানো হয়। আশপাশে কোনো রকম ময়লা থাকে না। 

 
যে কেউ স্বেচ্ছাশ্রম দিতে পারে। প্রচুর ইউরোপ আমেরিকানরা আসে ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করতে। 
আবুধাবির বেশ বড় বড় কয়েকটি খাবার কোম্পানি এখানে স্পন্সর করে তাদের খাবার। মেন্যুতে থাকে দুই/তিন ধরনের ফল, খেজুর, সালাদ, লেবনেহ বা জুসের ছোট বোতল, ছোট পানির বোতল এবং বিরিয়ানী-বাসুমতি চাল ও একটা মুরগীর অর্ধেকটা।

জেলে বা হাজতে অনেকে ছোটখাটো অপরাধে সাজা পেয়ে কারাবাস করে। রোজা বা ঈদে এ রকম ছোট অপরাধীদের কারামুক্ত করে দেয় সরকার।

রাতের দুবাই এমনিতেই সুন্দর। রমজান উপলক্ষে তা আরও ঝলমল করে। সৈকতগুলোতে সারা রাত লোকজনের সমাগম থাকে। প্রতিটি জায়গা খুবই নিরাপদ। অনেক লোকজন ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমাতে যায়। আর যারা অফিস করে তাদের নিয়মের মধ্যেই থাকতে হয়। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে সবাই নিয়মের কিছুটা ব্যতিক্রম ঘটায়। 
সবাইকে রমজানুল মুবারক।

 

এএল/

আর্কাইভ