• ঢাকা শনিবার
    ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

শায়েস্তা খানের শাহী মসজিদ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৩, ১০:৩০ পিএম

শায়েস্তা খানের শাহী মসজিদ

ছবিঃ সংগৃহীত

ফিচার ডেস্ক

রাজধানী পুরান ঢাকার একটি আদি ঐতিহ্যবাহী নাম ‘শাহী মসজিদ’। বর্তমানে ‘চক মসজিদ’ নামেই এটি পরিচিত। মসজিদটির কেন্দ্রীয় প্রবেশপথের ওপর স্থাপিত একটি ফার্সি শিলালিপিতে লেখা আছে সুবেদার শায়েস্তা খান ১৬৭৬ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি নির্মাণ করেন। 
ঢাকার চকবাজারের কেন্দ্রস্থল  চক সার্কুলার রোডে কয়েক’শ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে ‘চকবাজার শাহী মসজিদ’। একাধিকবার এর সম্প্রসারণ করা হয়েছে। তবে এই কাজের সময় আদি ভবন অক্ষত রাখা হয়েছে। চক মসজিদ ঘিরে চকবাজার সম্প্রসারিত হওয়ার প্রমাণ মেলে মসজিদের চারপাশে তাকালে।


তখনকার যুগে চক মসজিদ ঢাকার কেন্দ্রীয় মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ঢাকার নায়েবে নাজিমরা চকবাজার জামে মসজিদে ঈদের নামাজ পড়তেন। ‘তাওয়ারিখে ঢাকা’ গ্রন্থে এই বিবরণ দিয়েছেন মুন্শী রহমান আলী তায়েশ। সেই সময় মাইক না থাকায় আজান দেয়া হতো উঁচু মিনার থেকে। আশপাশের অন্যান্য মসজিদের মুয়াজ্জিনরা চক মসজিদের আজান শুনেই আজান দিতেন। 
রমজান বা ঈদের চাঁদ দেখা গেলে এই মসজিদের সামনে থেকে তোপধ্বনি দেয়া হতো। রমজান মাসে তারাবির নামাজের সময় মসজিদের ভেতরের অংশ ঝাড়বাতির আলোয় আলোকিত করা হতো। ইফতারির সময় বিভিন্ন বাড়ি ও দোকানপাট থেকে ইফতারি আসত মসজিদে।


বর্তমানে চক মসজিদের উত্তর দেয়াল ভেঙে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। আর পূর্বদিকের বাড়তি অংশে তৈরি হয়েছে বহুতল ভবন। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটির গম্বুজ ভেঙে আরেকটি তলা নির্মাণ করা হয়েছে। দোতলা ছাদের ওপর নতুন তিনটি গম্বুজ তৈরি করা হয়েছে।

File:চকবাজার শাহী মসজিদ 0002.jpg - Wikimedia Commons
মোগল রীতি অনুযায়ী এক সময়ে চক মসজিদের দেয়াল ছিল অনেক পুরু। প্রবেশদ্বারের খিলানগুলো ছিল চওড়া আর প্রশস্ত। মোগল আমলে মসজিদগুলো সাধারণত মাটি থেকে উঁচু প্লাটফর্মের ওপর তৈরি করা হতো। চক মসজিদটির প্লাটফর্ম ছিল মাটি থেকে ১০ ফুট উঁচুতে। আদিতে এর দৈর্ঘ্য ছিল ৫০ ফুট আর প্রস্থ ২৬ ফুট।


এর দুইপাশে দুটি আর মাঝখানে ছিল চারটি খিলান। চারকোণে চারটি প্রান্ত বুরুজের ওপর ছোট ছোট মিনার ছিল। মসজিদের উত্তর-পূর্ব কোণে ছিল সুউচ্চ মিনার। এই মিনারের নিচে ছিল মসজিদের প্রধান প্রবেশদ্বার। দক্ষিণ দিক দিয়েও এখানে প্রবেশ করা যেত। বর্তমানে এর উচ্চতা আরও বাড়ানো হয়েছে।

ঢাকার বুকে নান্দনিক মসজিদ | ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
এই মসজিদে এখন দুটি মিনার আছে। একটিতে রয়েছে সিরামিকের ভাঙা টুকরোর কারুকাজ। এটি আয়তনে ছোট। বড় মিনারটি লালরঙা। মসজিদের মূল ভবনের বাইরের দেয়ালে রয়েছে কালো রঙের একটি ফলক।
এক সময় চক মসজিদের সামনে একটি খোলা আঙিনা ছিল। সেই আঙিনাকে বাড়িয়ে এখন মসজিদের আয়তন আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রবেশ পথের সামনে চমৎকার নকশা শোভিত একটি অর্ধগম্বুজ ভল্ট রয়েছে। মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করার জন্য পূর্ব দিকে তিনটি প্রবেশ পথ রয়েছে।

চক মসজিদ, ঢাকা - বাংলাপিডিয়া
এই প্রবেশপথের সমান্তরালে পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে তিনটি মেহরাব। মেহরাবগুলোর আদিরূপ আগেই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তাই নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় মেহরাবটি আগের মতোই অর্ধ অষ্ট কোণাকৃতি করা হয়েছে। বাকি দুটো আয়তকার। মেহরাবগুলো আধুনিক টাইলসে মোড়ানো।
মোগল আমল থেকেই ঢাকা ‘মসজিদের নগরীতে’ পরিণত হয়। গায়ে ঢাকার ইতিহাস নিয়ে কালের সাক্ষী হয়ে সগৌরবে আজো দাঁড়িয়ে আছে শায়েস্তা খানের এই ঐতিহ্যবাহী ‘চকবাজার শাহী মসজিদ’।

 

সাজেদ/এএল

আর্কাইভ