প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২১, ০৬:১০ পিএম
অনেকেই জিজ্ঞাসা করেন- আচ্ছা, বই পড়ে কি
উদ্যোক্তা হওয়া যায়? এ
প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে আমিও একটি
প্রশ্ন করতে চাই- আচ্ছা
বলুন তো, বই না
পড়ে কি উদ্যোক্তা হওয়া
যায়?
এবার
আসি মূল আলোচনায়। বই
পড়ে উদ্যোক্তা হওয়া যায় কি
না; এ বিষয় সিদ্ধান্ত
নেয়ার দায়িত্ব আপনাদের হাতে রেখে, চলুন
কথা বলি উদ্যোক্তা হতে
গেলে কেন বই পড়তে
হবে।
বই
মানেই তথ্য
বর্তমান
সময়ে বই মানে যদি
মলাটবদ্ধ ছাপার পাতায় কিছু শব্দগুচ্ছ বোঝেন,
তাহলে বোকার স্বর্গে বাস করছেন। এখন
বইয়ের সংজ্ঞা পাল্টে গেছে। এখন বই মানে
ই-বুক, বই মানে-
অনলাইন পত্রিকা, বই মানে- ভালো
ভালো লেখকের ব্লগ, বই মানেই- এমন
একটি দুনিয়া; যেখানে আপনি সারা দিন
ব্যয় করলেও পড়ে শেষ করতে
পারবেন না। আপনি যত
বেশি পড়ার মধ্যে থাকবেন
তত বেশি তথ্য সংগ্রহ
করতে পারবেন। এক সময় বলা
হতো ‘knowledge is
power’, এখন বলা হয় ‘information is power’। আর এই
ইনফরমেশন ছাড়া আপনি সত্যিকার
অর্থে উদ্যোক্তা হতে পারবেন না।
নতুন
প্রযুক্তির সন্ধান
আপনি
যত বেশি পড়বেন তত
বেশি নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে
জানতে পারবেন। যত বেশি নতুন
নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে পারবেন, তত বেশি আপনার
সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে।
পাশাপাশি জানতে পারবেন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার
করে কীভাবে পুরনো ব্যবসাকে নতুন উদ্যোগে রূপান্তর
করা যায়। ছোট্ট একটি
উদাহরণ দিই-
কম-বেশি সবাই পাঠাও-এর নাম শুনেছেন।
যারা বাংলাদেশে প্রথম মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিংয়ের ব্যবসা
শুরু করে মোবাইল অ্যাপসের
মাধ্যমে। এই যে মোটরসাইকেল
রাইড শেয়ারিং, এটা কি পাঠাও-এর আগে বাংলাদেশে
ছিল না? অবশ্যই ছিল।
আপনি মাওয়া ফেরিঘাট পার হলেই দেখতে
পাবেন এখনও শত শত
মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং করছে।
পাঠাও নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে
সেই ব্যবসাটিকে উপস্থাপন করে। এমনকি পাঠাও-এর এই প্রযুক্তি
বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও ব্যবহার হয়েছে। পাঠাও-এর উদ্যোক্তা সেসব
তথ্য সংগ্রহ করে বাংলাদেশে এটি
বাস্তবায়ন করেছেন। এখন সিদ্ধান্ত আপনার
বই পড়বেন, নাকি পিছিয়ে থাকবেন।
আউট
অব দ্য বক্স চিন্তা
করা
আমরা
বেশির ভাগ মানুষই একটি
নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে (বক্স) বসবাস করি। যখন কোনো
উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাই তখন
সেই গণ্ডির মধ্য থেকেই ব্যবসার
চিন্তা-ভাবনা আসতে থাকে। ফলে
অনেকাংশেই সেগুলো হয় গতানুগতিক। কিন্তু
আপনি যখন বই পড়তে
শুরু করবেন তখন অটোমেটিক আপনার
বক্স, অর্থাৎ চিন্তার পরিধি বড় হতে শুরু
করবে।
মাল্টিটাসকিং
সম্পর্কে জানা
একজন
উদ্যোক্তাকে অবশ্যই একসঙ্গে অনেকগুলো কাজ করতে হয়।
যেমন- পণ্য উৎপাদন, মার্কেটিং,
সেলস, ক্রেতা সন্তুষ্টি, টিম বিল্ডিং, টিম
ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে একজন উদ্যোক্তাকে ন্যূনতম
ধারণা রাখতে হবে। এসব বেসিক
জিনিস জানার জন্য আপনাকে অবশ্যই
বই পড়তে হবে।
ফেইলর
ইনিশিয়েটিভ সম্পর্কে পড়া
আপনি
যখন কোনো উদ্যোগ নিতে
যাবেন, তখন আপনার পরিচিতরা
দুই ভাগে ভাগ হয়ে
যাবে- এক ভাগ লোক
আপনাকে উৎসাহ প্রদান করবে। আরেক ভাগ আপনাকে
নিরুৎসাহিত করবে। কিন্তু কেউ আপনাকে উদ্যোগটি
কী কী কারণে ফেইল
করতে পারে, সে বিষয়ে কোনো
ধারণা দেবে না। কারণ
আমরা একটি সফল উদ্যোগের
ঘটনা যত উৎসাহ নিয়ে
বলি, ঠিক তেমনি অসফল
ঘটনাগুলো লুকিয়ে রাখি। আপনি যদি আপনার
উদ্যোগ শুরু করার আগে
আপনার উদ্যোগের রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো ধরতে না পারেন,
বুঝতে না পারেন; তাহলে
আপনার উদ্যোগটিও ফেইল করতে পারে।
আর এই রিস্ক অ্যানালাইসিস
করার একটি সহজ প্রক্রিয়া
হলো বিভিন্ন ফেইল উদ্যোগ নিয়ে
পড়াশোনা করা এবং অ্যানালাইসিস
করা। আপনি যত বেশি
ফেইলর উদ্যোগ নিয়ে অ্যানালাইসিস করবেন
তত বেশি রিস্ক ম্যানেজমেন্ট
সম্পর্কে জানতে পারবেন। যা একটি নতুন
উদ্যোগের জন্য বাধ্যতামূলক।
এ
ছাড়াও অনেক কারণে বই
পড়া উচিত। তবে একটি বিষয়
খেয়াল রাখতে হবে, সেটি হলো
শুধু বই পড়লেই হবে
না, সঙ্গে হাতে-কলমে পুরো
বিষয়টি বুঝতে হবে।
এতক্ষণ
আলোচনার মধ্যে দিয়ে ‘বই পড়ে কি
উদ্যোক্তা হওয়া যায়’ এ প্রশ্নটির উত্তর
দেয়ার চেষ্টা করেছি। সিদ্ধান্ত নেয়ার পালা এবার আপনাদের।
তারিক/এম. জামান