• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ০৭ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

শীতের পিঠা ও হারানো শৈশব

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০২৩, ১০:৪১ পিএম

শীতের পিঠা  ও হারানো শৈশব

ফিচার ডেস্ক

পৌষ ও মাঘ মাস শীতের প্রজন্ম। শীতে প্রকৃতিকে আমরা নতুন করে চিনি। অদ্ভুত এক আচ্ছন্নতা ঘিরে রাখে প্রকৃতিকে। দিনের সূর্য ঢেলে দিচ্ছে মায়াবী রোদ। কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় জনপদ। পাখপাখালির কিচিরমিচিরে মুখর প্রকৃতি। গ্রামাঞ্চলে শুরু হয়েছে পিঠা-পুলির উৎসব। বাহারি স্বাদের পিঠা বলে দিচ্ছে শীত এসেছে। মনে করিয়ে দিচ্ছে ফেলে আসা শৈশব।

পড়াশোনা এবং বাসস্থান নানাবাড়ি থেকে অনেক দূরে হওয়ায় নানুর হাতের পিঠা শেষ কবে খেয়েছি, মনেও পড়ে না। অর্থনীতির যুগে পিঠাও এখন উঠে এসেছে দোকানে। কিন্তু পিঠার সঙ্গে সম্পৃক্ত আরও অনেক কিছু কি হারাতে বসেছে?

শীতের পিঠা ‍‍`ভাপা‍‍`

ছোটবেলায় অপেক্ষায় থাকতাম শীতকালের জন্য। শীতে জ্যাকেট, হুডি গায়ে জড়ানো যায়, এটা কেন জানি আমার ভালো লাগতো। কিন্তু তার চেয়েও বেশি মজার ছিল শীতের পিঠা।

খুব মনে পড়ে, পৌষ সংক্রান্তির আগে থেকেই শুরু হতো নানির পিঠা বানানোর ধুম। যেসব পিঠায় নারিকেলের প্রয়োজন, সেগুলো তৈরির জন্য নারিকেল কুরিয়ে রাখা, কোরানো নারিকেলের অর্ধেক চিনি, বাকি অর্ধেক গুড় দিয়ে ভাজা হতো।

তবে আমার অবশ্য নারিকেলের পিঠা বানানো পর্যন্ত অপেক্ষার প্রহর গুনতে ভালো লাগতো না। লুকিয়ে লুকিয়ে কত নারকেল কুচি খেতাম তার হিসাব নেই। নানি নিশ্চয়ই টের পেতেন। তবে আদরের ছিলাম বলে হয়তো কিছু বলতেন না।

ঘরেই বানান শীতের পিঠা


আমার সবচেয়ে পছন্দের পিঠা ছিল ভাপা। ফলে ভাপাটাই বেশি তৈরি হতো। সাথে দুধপুলি ও অন্য পিঠাও আমার বেশ পছন্দ ছিল। তেলের পিঠা বা মালপোয়া তেমন পছন্দ ছিল না বলে শুধু নিয়মরক্ষা এবং পদ বাড়ানোর তাগিদেই বানানো হতো।

আমার বড়ভাইয়ের ভাপা তেমন পছন্দের ছিল না। পাটিসাপটা তার পছন্দের। কেন জানি পাটিসাপটা সবচেয়ে পছন্দের পিঠা বলে প্রচার শুরু করলেন তিনি। ফলে পরিবারের বড় নাতি হিসেবে সব দৃষ্টি ঘুরে গেল তার দিকেই। নানুবাড়িতে ভাপা খিলাফতের পতন ঘটলো, শুরু হলো পাটিসাপটার একক রাজত্ব।

এ নিয়ে খুনসুটি হলেও তাতে আমাদের মজাটা কিন্তু কমেনি। এরপর বড় হতে হতে একসময় পড়াশোনার চাপে নানুবাড়ি যাওয়া হয় না বহুদিন। হঠাৎ এক শীতে আবিষ্কার করলাম, রাজধানীর ফার্মগেটে এক খালা লাকড়ির চুলা বানিয়ে বিক্রি করছেন ভাপা আর চিতই পিঠা।

 

শীতের পিঠা পুলি

এ পিঠা এত জনপ্রিয় হলো, কয়েক বছরের মাথায় এখন রীতিমতো দোকান খুলে শত রকমের পিঠা বিক্রি হয়। পিঠা খেতে ঘণ্টা খানেক আগে লাইনে দাঁড়াতে হয়। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোয় খালার সিরিয়াল পাওয়া মুশকিল।

ঢাকা শহরে এখন কিছু দোকান আছে, যেখানে সারাবছরই নানা পদের পিঠা বিক্রি হয়। ফলে বাঙালির পিঠা খেতে না পারার দুঃখ এখন আর নেই।

কিন্তু সবকিছু কর্পোরেট হলে, জোগান ও প্রাপ্তি বাড়লেও আবেগ-অনুভূতিগুলো ক্রমশ দূরে সরতে থাকে। সংক্রান্তি উপলক্ষে গ্রামে যাওয়া, সবার সঙ্গে শীতের আমেজে আনন্দ ভাগাভাগি করা, সেটা তো আর দোকানে সরবরাহ করা সম্ভব নয়।

পিঠা খাওয়ার এইতো সময়...

শীতের পিঠা এখনো আমার কাছে গুড়-নারকেল কুচি চুরি করে খাওয়া, ভাইয়ের সঙ্গে পাটিসাপটা না ভাপা তা নিয়ে ঝগড়া করা, খেতে না চাইলেও জোর করে ‘আরেকটা নাও’ বলে হাতে তুলে দেওয়া নানির ভালোবাসা।

কিন্তু বাণিজ্যিক এ শহরে সবই কিনতে পাওয়া যায়। ফলে এখন কাউকে কষ্ট করে কিছুই বাড়িতে বানাতে হয় না। প্রায় সব পরিবারেই ঘরে তৈরির চেয়ে কিনে আনা পিঠার প্রসার ঘটেছে। দিন যেতে থাকলে এ হার আরও বাড়বে। একসময় হয়তো কোনো বাড়িতে যে রীতিমতো উৎসব করে পিঠার প্রস্তুতি চলতো, তা-ও জানবে না পরবর্তী প্রজন্ম।

 

সাজেদ/

আর্কাইভ