প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩০, ২০২২, ১১:০৯ পিএম
বৈচিত্র্যময় ও বৈচিত্র্যহীন প্রকৃতির রাশিয়া আয়তনের বিচারে পৃথিবীর বৃহত্তম দেশ। দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ কানাডার চেয়ে এর আয়তন প্রায় দ্বিগুণ। পূর্ব ইউরোপ ও উত্তর এশিয়াজুড়ে রাশিয়া বিস্তৃত। দেশটির সরকারি নাম রুশ ফেডারেশন। রাজধানী মস্কো রাশিয়ার বৃহত্তম শহর। এটি দেশের প্রধান প্রশাসনিক, বাণিজ্যিক, শিল্প ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। রাশিয়ার বর্তমান লোকসংখ্যা ১৪ কোটি ৪৪ লাখ ৩৮ হাজার। রাশিয়ার সরকারি পরিসংখ্যান সংস্থা রোসট্যাটের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর সেখানে আড়াই লাখের বেশি মানুষ কমছে। বর্তমানে সেখানে মৃত্যুহার অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।
পৃথিবীর মোট আবাসযোগ্য জমির আট ভাগের এক ভাগ পড়েছে রাশিয়ায়। আয়তনের বিশালত্বের কারণে দেশটি ৯টি সময় অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। উত্তর থেকে দক্ষিণে তুন্দ্রা, তৈগা, স্তেপ ও অর্ধ-ঊষর মরুভূমি বিস্তৃত। দেশটিতে ৪০টি ইউনেস্কো জীবমণ্ডল সংরক্ষণ এলাকা (Biosphere Reserve) রয়েছে।
বিশ্বের প্রধান শীতলতম দেশ বলে এ দেশে সারা বছর হিমশীতল এবং শৈত্যপূর্ণ থাকে। অতিরিক্ত আর্কটিক বরফাচ্ছন্নের, অতি উচ্চভূমি এবং রুশ প্রকৃতির হেতু দ্বারা শৈত্যপ্রবাহ সৃষ্টি হয় এবং সারা দিন শৈত্যপ্রবাহ চলতে থাকে। এই দেশে বছরে ১০ মাস শৈত্যপ্রবাহ (সেপ্টেম্বর-মে) এবং ৮ মাস বরফাচ্ছন্ন (অক্টোবর-এপ্রিল) হয়ে থাকে। সাইবেরিয়া এলাকায় সারা দিন ঠাণ্ডা ও শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করে। পশ্চিম-দক্ষিণাংশে গরম থাকে। অন্য দেশের মানুষ সেখানে গেলে ঠাণ্ডাকে সহ্য করতে সময় নেয়। রাশিয়া দেশটিতে হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডা, এখানে থাকা খুবই কষ্টকর ও প্রতিকূল।
২০১২ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের নবম জনবহুল দেশ রাশিয়া। এটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য। বিশ্বের পারমাণবিক শক্তিধর শীর্ষ পাঁচটি দেশের অন্যতম এটি।
রাশিয়া একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে দেশটি। সাংবিধানিকভাবে বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক দেশ রাশিয়া।
রাশিয়ার সরকারব্যবস্থা বহুদলীয় গণতন্ত্র। জনগণের সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করা হয়। দেশটির পার্লামেন্টের নাম ডুমা। এটি উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ দুই ভাগে বিভক্ত। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় ভাষা রুশ। প্রায় ৮০ শতাংশ লোক এ ভাষায় কথা বলে। এ ছাড়াও রাশিয়াতে আরও প্রায় ৮০টিরও বেশি ভাষা প্রচলিত। বিভিন্ন অঞ্চলে রুশ ছাড়াও আঞ্চলিকসহ সরকারি ভাষার মর্যাদায় আরও ২৭টি ভাষা প্রচলিত আছে। রাশিয়ার বেশির ভাগ মানুষ খ্রিষ্টান। মুসলমানেরা প্রধানত থাকেন ভলগা তাতারস, বশখিরস ও তাতার অঞ্চলে।
রাশিয়ায় বর্তমানে মুক্তবাজার ব্যবস্থা প্রচলিত। এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ তেল ও গ্যাস উৎপাদনকারী দেশ। দেশটির অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল, কয়লা ইত্যাদির বিশাল ভাণ্ডার। ১৯৯৮ সালের অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে দেশটিকে সহায়তা করে প্রাকৃতিক সম্পদ। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ‘গ্যাজপ্রম’ বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্যাস উৎপাদনকারী ও রফতানিকারী প্রতিষ্ঠান। ইউরোপের ক্রমবর্ধমান গ্যাস চাহিদা মিটিয়ে চলেছে গ্যাজপ্রম। দেশটির মুদ্রার নাম রুবল। রাশিয়ার অর্থনীতি বিশ্বে দশম বৃহত্তম।
পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন পাঁচটি স্বীকৃত দেশের মধ্যে অন্যতম এ দেশটির বিশ্বের বৃহত্তম ধ্বংসাত্মক অস্ত্রভাণ্ডার রয়েছে। রাশিয়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য, জি-৮, জি-২০, দি কাউন্সিল অব ইউরোপ, দি এশিয়া প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা, ইউরেশীয় অর্থনৈতিক কমিউনিটি, ইউরোপ নিরাপত্তা সংগঠন কাউন্সিল (ওএসসিই) ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য।
সাজেদ/