• ঢাকা রবিবার
    ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

পোড়াবাড়ির চমচম

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৯, ২০২২, ০২:৪৫ এএম

পোড়াবাড়ির চমচম

পাঁচআনি বাজারের পোড়াবাড়ির চমচম

ফিচার ডেস্ক

টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচমের নাম বিশ্বজোড়া। টাঙ্গাইল বললেই জিভে পানি আসে। সুস্বাদু একটা দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আর এই ঐতিহ্যবাহী চমচম স্বাদে, গন্ধে ও তৃপ্তিতে অতুলনীয়। বহু বছরের নাম-ডাক পোড়াবাড়ির চমচমের। নানা রঙের মিষ্টি। চমচম সবাইকে চমকিয়ে দেয়। বড় বড় অনুষ্ঠানের শেষ ভাগে জায়গা করে নিয়েছে এই পোড়াবাড়ির চমচম।

সময়ের ঘূর্ণায়মান স্রোতে এ মিষ্টির রং বদলেছে। আকার বদলেছে। বদলেছে বৈশিষ্ট্যও। মিষ্টির রাজা বলে খ্যাত পোড়াবাড়ির চমচমের স্বাদ আর স্বাতন্ত্র্যেও ভিন্নতা রয়েছে। চমচম সুস্বাদু ও লোভনীয়। চমচম মিষ্টির জন্য টাঙ্গাইলের খ্যাতি দেশ থেকে সারা বিশ্বে। এই ঐতিহ্য প্রায় ২শ’ বছরের প্রাচীন। ব্রিটিশ আমল থেকে অবিভক্ত ভারতবর্ষসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পোড়াবাড়ির চমচম টাঙ্গাইলকে পরিচিতি করেছে। নিজেও চমচম সেরা হয়ে সারা বিশ্বে স্থান করে নিয়েছে।

ভারতবর্ষ তথা গোটা পৃথিবীতে এর সুনাম রয়েছে। মিষ্টি জগতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী চমচমের বৈশিষ্ট্য অতি চমৎকার। কারণ এর ভেতরের অংশ থাকে রসালো, নরম ও কিছুটা ফাঁপা। লালচে পোড়া ইটের রংয়ের এই সুস্বাদু চমচমের উপরিভাগে চিনির গুড়ো কোষ থাকে কড়া মিষ্টিতে ভরা। মুখে দিলেই মিলিয়ে যাওয়া এ চমচমের গুণগত মান আর স্বাদ মূলত পানি, খাঁটি দুধ ও কারিগরের হাতের কৌশলের ওপরই নির্ভরশীল। দেশের অনেক জায়গা থেকে টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম তৈরির কারিগর নিয়ে চমচম তৈরির চেষ্টা করেছে।

পোড়াবাড়ি হলো ছোট্ট একটি গ্রামের নাম। টাঙ্গাইল শহর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরের পথ। ছোট্ট শান্ত এই গ্রামকে ঘিরেই চমচমের সৃষ্টি। আর তার প্রধান অনুসঙ্গ ধলেশ্বরী নদী। এই নদীর পানিই ব্যবহার করা হয় মিষ্টি তৈরিতে। চমচমের প্রথম কারিগর কে তা আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, যশোরথ হালই নামে একজন কারিগর এই চমচমের স্রষ্টা। যারা চমচম এবং তৈরির সঙ্গে জড়িত তাদেরকেই হালই বলা হয়। হালই ছাড়াও এই গ্রামের ঘোষ আর পাল বংশের লোকেরা বংশানুক্রমে মিষ্টি তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। প্রায় শত বছর ধরে। পোড়াবাড়ি বাজার থেকে একটু পশ্চিমেই ধলেশ্বরী নদী। এটি যমুনার একটি শাখা।

মিষ্টি তৈরি করতে হলে প্রথমে চুলায় গরুর খাঁটি দুধ জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হয় ছানা। পাঁচ কেজির মতো ছানার সঙ্গে মেশানো হয় ২৫০ গ্রাম ময়দা। এবার খুব ভালো করে মেখে মিষ্টির আকার দেয়া হয়। কিছু সময় পর লম্বা আকারের ছানাগুলো ফুটন্ত কড়াইয়ে চিনির সিরায় প্রায় ৪৫ মিনিট ভাজা হয়। ক্রমশ পোড়া ইটের মতো রং ধারণ করে লম্বা মিষ্টিগুলো। ঠাণ্ডা হওয়ার পর গোল মিষ্টি ক্ষীরের মধ্যে গড়িয়ে তৈরি হয় রসালো পোড়াবাড়ির চমচম।

খাঁটি মানের চমচম পাবেন টাঙ্গাইলের পাঁচআনি বাজারের মিষ্টির দোকানগুলোতে। এর মধ্যে খোকা ঘোষের জয়কালী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, গোপাল মিষ্টান্ন ভাণ্ডার অন্যতম। তবে এখন আরও কিছু মিষ্টির দোকান রয়েছে। যেখানে পোড়াবাড়ির চমচম বলেই চালিয়ে দেয়া হয়।

বর্তমানে পোড়াবাড়ির অবস্থা করুণ। নানা সমস্যায় জর্জরিত ছোট এই বাজারে মাত্র ৪-৫টি জরাজীর্ণ মিষ্টির দোকান শত বছরের সাক্ষী হয়ে আছে। তবে বাজারের আশপাশের ৬-৭টি বাড়িতে এখনও মিষ্টি তৈরি হয় এবং তারা ঢাকা, ময়মনসিংহ, যশোর, বগুড়াসহ বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করছে। এ ছাড়া শহরের পাঁচআনি বাজারে কয়েকজন মিষ্টি ব্যবসায়ী ঢাকার শতাধিক দোকানসহ প্রায় দেশের ৫ শতাধিক মিষ্টি ব্যবসায়ীদের কাছে এই মিষ্টি সরবরাহ করে থাকেন।

টাঙ্গাইল শহরের পাঁচআনি বাজারের মিষ্টান্নের বিভিন্ন দোকানে শোভা পায় লালচে চমচম। দেশ ছাড়িয়ে সারা বিশ্বেই সুনাম রয়েছে এই মিষ্টির। নেই কোনো ভেজাল। গরুর একবারে খাঁটি দুধ আর নির্ভেজাল সব উপাদান দিয়ে তৈরি।

পোড়াবাড়ির চমচম পেতে হলে আপনাকে টাঙ্গাইল জেলার পাঁচআনি বাজারে যেতে হবে। আপনি ঢাকা থেকে গাড়িতে করে অথবা বাসে চড়ে টাঙ্গাইলে যেতে পারেন। সেখান থেকে হালুই পট্টি বা মিষ্টি পট্টি যাবেন (পাঁচআনি বাজার)। সেখানে আপনি পাবেন টাঙ্গাইলের সবচেয়ে বিখ্যাত মিষ্টি পোড়াবাড়ির চমচম।

 

সাজেদ/

আর্কাইভ