প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৯, ২০২২, ১২:৪১ এএম
বদলে যাচ্ছে ঢাকা। বদলে যাচ্ছে দেশ। নতুন আদলে রূপসী হয়ে উঠছে সোনার বাংলাদেশ। আর কদিন পর যানজটের ছোবল থেকে বেরিয়ে আমরা রাজধানী ঢাকায় চলব মেট্রোরেলে। নদী পারাপারে নৌকা থাকবে না। ঠিক সেই আদলে বদলে নেয়া হচ্ছে বাংলাদেশের অবয়ব।
প্রতিনিয়তই বদলে যাচ্ছে যানজটের চিরচেনা নগরী ঢাকা। একের পর এক ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, অত্যাধুনিক শপিংমল, বিনোদন কেন্দ্র, সিনেপ্লেক্সসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে পাল্টে যাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ শহর ঢাকা।
২০৩০ সালের আগেই যানজট নিরসনে নেয়া ৪ মেগা প্রকল্প মেট্রোরেল, বিআরটি, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ইসিবি চত্বর থেকে কালশী রুটে ফ্লাইওভার বাস্তবায়ন হবে। এরপর বিশ্বমানের নগরীতে পরিণত হবে রাজধানী ঢাকা। উদয় হবে নতুন এক বাংলাদেশের। এরই মধ্যে আকাশ ছুঁয়েছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। পতাকা ওড়ালেই ট্রেন ছুটবে কক্সবাজার অভিমুখে। শুধু ঢাকা নয়- সমগ্র বাংলাদেশের হবে একই চেহারা।
এই লক্ষ্যে সরকার আগামী ১৯ বছরে যানজটমুক্ত নগরী আর উন্নত নগর জীবনের পরিকল্পনা নিয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার প্রায় ৩ লাখ ৫১ হাজার কোটি টাকার যেসব প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সেগুলো বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ঢাকা শহর স্বপ্নের শহরে রূপ নেবে। রিভাইজড স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানের (আরএসটিপি) আওতায় তৈরি হচ্ছে ৬টি মেট্রোরেল লাইন, দুটি দ্রুতগতির বাস রুট এবং ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার নতুন রাস্তা। যা বর্তমান সড়ক নেটওয়ার্কের দ্বিগুণ। এ ছাড়া সড়ক নেটওয়ার্কের আওতায় ৬টি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং ৩টি রিং রোড অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ঢাকা মহানগর এলাকায় ৪০ বছরে জনসংখ্যা প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে। বর্তমানে ঢাকা বিশ্বের ১১তম বড় শহর। ২০৩০ সাল নাগাদ এটি বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ শহরে পরিণত হবে। তখন ঢাকার জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ। ২০১৭ সালে ঢাকায় প্রতিদিন নতুন মুখ যুক্তের হার ছিল ১ হাজার ৭০০ জন। গ্রাম ও জেলা শহর থেকে যারা আসছেন তারা স্থায়ী হয়ে যাচ্ছেন এই শহরে। এতে বাড়ছে ঢাকা ও আশপাশের এলাকার (মেগাসিটি) জনসংখ্যা। পৃথিবীর মেগাসিটিগুলোর মধ্যে ঢাকার জনঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৪ হাজার ৫০০ মানুষ বাস করেন। আবার ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ অনেক এলাকায় এই আয়তনের মধ্যে প্রায় ৫৯ হাজার মানুষের বসবাস। অথচ ঘনবসতিপূর্ণ শহরের তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের মুম্বাই। সেখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করে ৩২ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ। প্রতি বছর বিভিন্ন শহরের মানুষ বৃদ্ধি পায়।
ঢাকা সিটি নেইবারহুড আপগ্রেডিং প্রজেক্টের মাধ্যমে বদলে যাচ্ছে পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি ঘরবাড়ি, যানজট, রাস্তায় আবর্জনা, সরু রাস্তাঘাট, মিল-কারখানা, গুদাম, দোকান, বাসাবাড়ির চেহারা। ফিরে এসেছে আভিজাত্য ও সৌন্দর্য। ডিএসসিসির ও ডিএনসিসির মাস্টার প্ল্যানে সড়ক ও ফুটপাত এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থার হয়েছে ব্যাপক উন্নয়ন, ফুটওভার ব্রিজের উন্নয়ন ও সংস্কার। ফুটওভার ব্রিজ সাজানো হয়েছে সবুজে, সব সড়কে বসেছে এলইডি লাইট। সরিয়ে ফেলা হয়েছে সব বিলবোর্ড ও সাইনবোর্ড। যত্রতত্র ব্যানার-ফেস্টুন-পোস্টার রয়েছে বিধি-নিষেধ। উদ্ধার হয়েছে খেলার মাঠ ও পার্ক। এ ছাড়া রাস্তার পাশে শুকনা বর্জ্য ফেলার জন্য বসানো হয়েছে ওয়েস্টবিন। নগরীর প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অত্যাধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে।
আজ ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন ও উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হয়েছে মেট্রোরেল। অলিগলির রাস্তা প্রস্থে বাড়ানো হচ্ছে। ঢাকা শহরের কয়েক কিলোমিটার দূরে পূর্বাচলে গড়ে উঠেছে আধুনিক শহর। সেখানে থাকবে ১১১ তলা টাওয়ার। আরও দুটি নান্দনিক ৫২ ও ৭১ তলা টাওয়ার থাকবে এই আধুনিক শহর পূর্বাচলে। থাকবে সৌন্দর্য বিকাশে দীর্ঘ লেক। শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের এ যুগে বিশ্বে যেমন সবকিছু দ্রুত বদলে যাচ্ছে তেমনি বদলে যাচ্ছে আমাদের চিরচেনা ঢাকা শহর। শিক্ষা-দীক্ষা, মানুষের চিন্তা-চেতনা, আচার-অনুষ্ঠান ও রাজনীতি-সবকিছুতেই পরিবর্তন হচ্ছে। পরিচিতি পাচ্ছে সারা পৃথিবীতে। ইতোমধ্যে ক্রিকেটে বিশ্বজোড়া পরিচিতি এসেছে। বাংলাদেশের ঝুলিতে। ঢাকা হয়ে উঠেছে বিশ্বের অন্য দেশের বড় শহরের একটি। রাজধানী ঢাকাকে সিঙ্গাপুরের মতো সৌন্দর্যময় একটি মহানগরীতে পরিণত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ক্ষমতাসীন সরকারের একাগ্রতা ও সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা লক্ষ্যণীয়। করোনা মহামারির এই দুঃসময়েও থেমে নেই এই মহা-পরিকল্পনায় গৃহীত প্রকল্পসমূহের কাজ।
রাজধানী ঢাকাকে উন্নয়নের দ্বারপ্রান্তে নিতে একের পর এক মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করছেন শেখ হাসিনা। পুরো অবকাঠামো খাতে আমূল পরিবর্তন এসেছে গত এক দশকে। ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে নেয়া হয়েছে মেগা প্রকল্প। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ত্বরান্বিত হবে দেশের অর্থনীতি। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বাড়বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও। অর্থনৈতিক উন্নয়নে যোগাযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এসব প্রকল্প শেষ হলে অর্থনীতিতে বড় প্রভাব পড়বে। রাজধানী ঢাকাকে সিঙ্গাপুরের চেয়েও উন্নত এক মহানগরীতে পরিণত করার স্বপ্ন তখন বাস্তবে রূপ নেবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধমে তলাবিহীন ঝুড়ির পরিবর্তে বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হবে বাংলাদেশ।
সাজেদ/