• ঢাকা সোমবার
    ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

পৃথিবীর ভয়ঙ্কর ১০ খুনি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০২২, ১০:৫৫ পিএম

পৃথিবীর ভয়ঙ্কর ১০ খুনি

পৃথিবীর ভয়ঙ্কর ১০ খুনি

ফিচার ডেস্ক

পৃথিবীতে প্রথম খুনী কাবিল। এরপর নাম না জানা কত মানুষ কত মানুষকে খুন করলো, তার হিসাব নেই। খুনীকে মানুষ ঘৃনা করে। এর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড।


তবে খুন করে সবাই খুনি উপাধি পেলেও কেউ কেউ এই  “খুনি” শব্দটিকে একটা আলাদা তকমা দিয়েছে। খুন করা খুব খারাপ হলেও কিছু মানুষের চোখে রীতিমত গৌরবের।  খুনিরা যখন তাদের খুনের সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখন তাদের বলা হয় সিরিয়াল কিলার। একজন সাধারণ খুনি যখন একজন পেশাদার খুনি হন বা সিরিয়াল কিলার হন, তখন তার কাছে খুন করা যেন ধ্যান, জ্ঞান। খুন তাদের চোখে  শিল্প। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অনেক সিরিয়াল কিলার জন্ম নেয়। অনেক ক্ষেত্রে সে মানুষের নজরে আসে, অনেকে আবার আসেনা।  কিছু ব্যাক্তি খুনকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। চলুন ইতিহাসের সেসব কুখ্যাত খুনিদের মধ্যে ১০জন সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক...

খুনের অভিজ্ঞতার বই লিখেছিলেন খুনি, ধরা পড়লেন ২২ বছর পর | 672376 | কালের  কণ্ঠ | kalerkantho

লুইস গারাভিতো:
পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম কুখ্যাত খুনি লুইস গারাভিতো। সন্দেহ করা হয় সে প্রায় ৪০০ জনের বেশি মানুষ খুন করেছে। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে প্রমাণ হয়েছিল ১৩৮ জনের খুনের অপরাধ। গারাভিতোর খুনের মধ্যে বেশির ভাগই ছিল পথশিশু। ১৯৫৭ সালের ২৫ জানুয়ারি কলম্বিয়াতে জন্ম নেয়া এই খুনি ১৯৯০ সালে সবচেয়ে বেশি খুন করে। কলম্বিয়ার আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৩০ বছরের সাজা হয় তার!

The Vile Crimes Of Luis Garavito, The World‍‍`s Deadliest Serial Killer
তাছাড়া সে লাশ শনাক্ত করতে পুলিশকে সাহায্য করায় তার সাজা কমিয়ে ২২ বছর করা হয়। এই সাজায় সারা বিশ্বের গণমাধ্যমে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কলম্বিয়ার জনগণ তার জন্য আলাদা প্রসিকিউশন গঠন করার দাবি জানায়। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয়নি। কলম্বিয়াতে সে La Bestia (পশু) নামে পরিচিত।

জ্যাক দ্য রিপার :
ইতিহাসের অন্যতম ভয়ঙ্কর সিরিয়াল কিলার বলা হয় তাকে। ১৮৮৮-১৮৯১ সাল পর্যন্ত পূর্ব-লন্ডনের হোয়াইট চ্যাপেলের আশপাশ জুড়ে সর্বমোট এগারোটি খুনের ঘটনা ঘটিয়ে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার জ্যাক দ্য রিপার। ছবি তো দূরের কথা, জ্যাক দ্য রিপার নামে কোনো লোক ছিল এ সম্পর্কেও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এই খুন যখন লন্ডনজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা ও আতঙ্কের ঝড় বইয়ে দিল, তখন খুনের দায় স্বীকার করে জ্যাক দ্য রিপারের স্বাক্ষরযুক্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছিল লন্ডনের সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সির কাছে। মূলত এরপর থেকেই মিডিয়ার কাছে ব্যাপক পরিচিতি পায় জ্যাক দ্য রিপার নামটি। এ ঘটনার আগেও অনেক সিরিয়াল কিলারের অস্তিত্ব ছিল ইতিহাসে। কিন্তু এ নামটির মতো আতঙ্ক এর আগে কেউ ছড়াতে পারেনি। তার চেয়েও বড় বিষয় এই খুনি ছিল সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে।

জ্যাক দ্যা রিপার - লন্ডনের রহস্যময় বর্বর এক খুনি - Lekharpata

তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি কখনোই। ম্যালভিল ম্যাকনাগটেন নামের তৎকালীন চিফ কনস্টেবল জ্যাক দ্য রিপার হিসেবে তিনজন ব্যক্তিকে সন্দেহ করেন। এর মধ্যে প্রধান হলেন এম জে ডরুয়িট নামে এক ব্যারিস্টার যিনি পরবর্তীতে শিক্ষকতায় নিয়োজিত হন। দ্বিতীয়জন এরন কসমিনিস্কি নামের এক পোলিশ ইহুদি এবং তৃতীয়জন মাইকেল ওস্ট্রং নামের একজন উন্মাদ লোক। তবে এর কোনো জোরালো প্রমাণ ছিল না। ডিটেকটিভ ফেডারিক এভারলিন জ্যাক দ্য রিপার হিসেবে সন্দেহ করেন সেভেরাইন ক্লোসোস্কি এলিস জিওর্গি চেপম্যানকে। এটিও প্রমাণ করা যায়নি। 

জ্যাক দ্যা রিপারঃ রহস্যময় বিখ্যাত সিরিয়াল কিলার - ইতিবৃত্ত

এছাড়া আরও কয়েকজন ব্যক্তিকে জ্যাক দ্য রিপার হিসেবে সন্দেহ করা হলেও এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি কে এই জ্যাক দ্য রিপার? গত প্রায় ১২০ বছর ধরে জ্যাক দ্য রিপার ও তার হত্যাকাণ্ডগুলোকে ঘিরে রচিত হয়েছে অজস্র গল্প, উপন্যাস, নাটক, সিনেমা এমনকি ভিডিও গেমস। শুধু তাই নয়, জ্যাক দ্য রিপার যেসব স্থানে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটিয়েছিল, সেসব স্থান দেখার জন্য সারা বিশ্ব থেকেই মানুষজন আসেন পূর্ব-লন্ডনে।
জ্যাক দ্য রিপার যাদের হত্যা করেছেন, তাদের বেশিরভাগই ছিল পতিতা। জ্যাক দ্য রিপার যৌন কার্যের সময় ভিকটিমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করত। রিপার উইচপেল খুনি এবং লেদার অ্যাপ্রন নামে পরিচিত। জ্যাক দ্য রিপার সত্যিকার অর্থে কত জন খুন করেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

পেদ্রো লোপেজ : 
ইতিহাসের আরেক ভয়াবহ সিরিয়াল কিলার পেদ্রো লোপেজ। জন্ম ইকুয়েডরে ৮ অক্টোবর, ১৯৪৮। তার  প্রকৃত খুনের হিসাব আজ পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হয় সে ১১০-৩০০টি খুন করেছে। সে সব প্রথম মিডিয়াতে আলোচিত হয় ১৯৮০ সালের ৯ মার্চ। তার বিরুদ্ধে অনেক ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়। অনেকের মতে সে ধর্ষণের পর ভিকটিমকে জবাই করত। তারপর রক্ত দিয়ে হাত ধুতো। সর্বপ্রথম তাকে মিডিয়াতে নিয়ে আসেন রন লেইটন্যার নামের ফ্রি ল্যান্সার। 

Pedro Lopez: Serial Killer‍‍`s Whereabouts Still Unknown

শিকাগোর একটি স্থানীয় পত্রিকায় সর্বপ্রথম তার সাক্ষাৎকার রচিত হয়। দিনটি ছিল ১৩ জুলাই ১৯৮০, রোববার। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তার ষোল বছরের কারাদণ্ড হয়। জেলখানায় ভালো ব্যবহারের জন্য ২ বছরের সাজা মওকুফ করা হয় তার।

রিচার্ড ট্রেনটন সেচ : 
এই আমেরিকান সিরিয়াল কিলারের জন্ম ১৯৫০ সালে। হত্যাকাণ্ডের কারণে তার ডাক নাম ছিল ‘ভ্যাম্পায়ার অব স্ক্রেরামেন্টো’। তার প্রথম শিকার ৫১ বছর বয়সী ইঞ্জিনিয়ার এমব্রোস গ্রিফিন। সেচ গ্রিফিনকে হত্যা করেন ১৯৭৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর। তার দ্বিতীয় শিকার টেরেসা ওয়ালিন ছিল অন্তঃসত্ত্বা। তাকে হত্যার পর তার সঙ্গে মিলিত হয় এবং তার রক্ত দিয়ে গোসল করে।

রিচার্ড ট্রেনটন সেচঃ মানুষের রক্তে স্নানকারী মানুষখেকো এক সিরিয়াল কিলার!

১৯৮০ সালের ৮ মে বিচারে গ্যাস চেম্বারে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়া হয়। কারাগারে অপেক্ষাকালীন সময়ে ১৯৮০ সালের ২৬ ডিসেম্বর সেলে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় তাকে। ধারণা করা হয়, প্রিজন ডাক্তারের প্রদত্ত ওষুধ অতিরিক্ত পরিমাণ খেয়ে সে আত্মহত্যা করে।

জেফরি ডামার : 
ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস খুনি জেফরি ডামার। জন্ম ১৯৬০ সালে। ডামারের শিকার সংখ্যা কমপক্ষে ১৭। ডামার শিকারকে জোরপূর্বক সমকামিতায় বাধ্য করাসহ তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন করে সেই মাংস ভক্ষণ করত। ডামার ১৮ বছর বয়সে প্রথম হত্যাকাণ্ড ঘটায়। ১৯৮৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ১৩ বছর বয়সী একজন বালককে যৌনহয়রানির অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বিচারে তার এক বছর সাজা হলেও সে বিচারকের কাছে দোষ স্বীকার করে এবং তাকে মেন্টাল থেরাপি দেয়ার অনুরোধ করে।

Monster: The Jeffrey Dahmer Story: How Jeffrey Dahmer Was Caught

৫ বছর সন্তোষজনক আচার-আচরণের শর্তে তাকে প্রবেশনে মুক্তি দেয়া হয়। মুক্তির পরপরই সে পুনরায় হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে ডামার পুনরায় পুলিশের কাছে ধরা পড়লে তার ভয়ানক কুকীর্তিগুলো প্রকাশিত হয়ে পড়ে। বিচারে তার ৩৭ বছর জেল হয়। বিচারকালে ডামার কারাবাসের পরিবর্তে সে নিজের মৃত্যুদণ্ড দাবি করে। ১৯৯৪ সালের ২৮ নভেম্বর কারাগারের জিমে কর্মরত অবস্থায় ক্রিস্টোফার স্কেভার নামক অপর একজন কয়েদির মারাত্মক পিটুনিতে নিহত হয়।

জাভেদ ইকবাল মুঘল : 
পুরো নাম জাভেদ ইকবাল মুঘল। ১৯৫৬ সালের ৮ অক্টোবর পাকিস্তানে জন্ম নেয়া এই লোকটিকে উপমহাদেশের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সিরিয়াল কিলার মানা হয়। তার হাতে প্রায় ১০০ শিশুর নৃশংস মৃত্যু হয়েছিল। প্রায় প্রতিটি মৃত্যুর সঙ্গেই যৌন নিপীড়নের যোগসূত্র ছিল। মানুষ হত্যার ক্ষেত্রে বিকৃত রুচির পরিচয় পাওয়া যায় তার। ১৯৯৮ সালে জাভেদের বিষয়টি প্রথম সবার সামনে আসে। তখন এমন ভয়াবহতার কথা কেউ কল্পনাও করেনি। সেবার ২জন বালককে যৌন হয়রানির জন্য জাভেদকে আটক করে পুলিশ।

10 Twisted Facts About Javed Iqbal, The Pakistani Serial Killer - Listverse

কিন্তু আইনের ফাঁক গলিয়ে ঠিক বেরিয়ে যান তিনি।  এরপর তিনি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে।  শুরু করে তার কুকর্ম। তিনি ছিল মিশুক প্রকৃতির। মধুর কথা ও সুন্দর ব্যবহার দিয়ে সহজেই মানুষের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলত। সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পরই স্বরূপে আবির্ভূত হতো সে। সুযোগ বুঝে প্রথমে ধর্ষণ ও পরে ছুরিকাঘাত করে তাদের হত্যা করত। জাভেদের নৃশংসতার এখানেই শেষ ছিল না। হত্যার পর জাভেদ মৃতদেহগুলোকে টুকরো টুকরো করে ফেলত। আর দেহের খণ্ডাংশগুলো কোথাও ফেলে না দিয়ে হাইড্রোলিক এসিডভর্তি ড্রামে ডুবিয়ে রাখত। এতে করে অল্প সময়ের মধ্যেই দেহের খণ্ডাংশগুলো গলে যেত। তখন সেই গলিত দেহাবশেষের তরল স্যুয়ারেজ লাইন কিংবা নদীতে ফেলে দিত।


একসময় জাভেদের বাড়িতে পুলিশ রিপোর্টাররা এসে ভয়ঙ্কর চিত্র আবিষ্কার করে। জাভেদের ভিকটিমের ব্যবহৃত ব্যাগ ও জুতা এবং অনেকগুলো ছবি পাওয়া যায়। এসিডের বোতল ছাড়াও ছুরি এবং আরও রক্তাক্ত জিনিস পাওয়া যায়। তার ঘরের দেয়াল ও মেঝেতে রক্তের দাগ পাওয়া যায়। পুলিশের কাছে ধরা খাওয়ার পর জাভেদ নিজেই গড়গড় করে তার সব অপরাধ বৃত্তান্ত তুলে ধরে। জাভেদের ভাষায়, ‘আমি চাইলে ৫০০ বালককে হত্যা করতে পারতাম। আমি জাভেদ ইকবাল, ১০০ শিশুর হত্যাকারী। আমি এই পৃথিবীকে ঘৃণা করি এবং আমি আমার কাজের জন্য লজ্জিত নই। আমি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত, আমার কোনো অনুশোচনা নেই যে, আমি ১০০ শিশুকে হত্যা করেছি।’

Serial killer Javed Iqbal who sexually abused and killed 100 children in  Pakistan

 হত্যার আগে সব শিশুকে যৌন নিগৃহ করেছে বলে তার লিখিত ডায়েরিতে উল্লেখ করেছে জাভেদ। বিচারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার রায় হয়। বিচারক রায়ে বলেন, যদিও তাকে ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছে কিন্তু আমি চাই তাকে ১০০ বার ছুরিকাহত করে হত্যা করতে এবং ১০০ টুকরো করে এসিডে ডুবিয়ে রাখতে। তার ফাঁসি কার্যকর করার আগে ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর প্রিজন সেলে তাকে ছুরিকাত হয়ে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। কর্তৃপক্ষ জানায়, জাভেদ প্রিজন সেলে আত্মহত্যা করেছে।

গ্যারি রিডওয়ে
জন্ম ওয়াশিংটনে ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৯। তার বিরুদ্ধে ৪৯টি খুনের মামলা আছে। আদালতে স্বীকারোক্তিতে সে স্বীকার করে নিয়েছে এই সংখ্যা ৭১। তবে সন্দেহ করা হয় তার খুনের সংখ্যা ৯০ ছাড়িয়েছে। তার বিচিত্র যৌনতা ছিল। তার তিন স্ত্রীর প্রত্যেকে জানিয়েছে সে দিনে কয়েকবার মিলিত হতে চাইত। এমনকি জনবহুল এলাকায় লোকজনের সামনেও সে এটা চাইত।

Gary Ridgway | Biography, Mother, Childhood, & Murders | Britannica
৩০ নভেম্বর, ২০০১ সালে রেন্টন ছেড়ে যাওয়ার সময় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে চারজন নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ ওঠে। পুলিশ চার নারীর গর্ভে ভ্রুণের ডিএনের টেস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়। তারপর সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তার একের পর এক নারকীয় হত্যার প্রমাণ আসতে থাকে। ২০০১ সালে রিপোর্টার শেরিফ রিচার্ট তার সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রকাশ করার পর বিশ্ব গণমাধ্যমের নজরে আসে সে। আদালত তাকে আজীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে।

ফুলন দেবী : 
তার পরিচিতি দস্যুরানী হিসেবে। কুখ্যাত খুনির তালিকায় তার নামটা না এলেও পারত। কারণ প্রথম জীবনের বঞ্চনা এবং পরের জীবনের বিদ্রোহ তার প্রতি মানুষের একটা সহমর্মিতা তৈরি করে। এরপরও কেবল প্রতিশোধের নেশায় একের পর এক মানুষ হত্যা করে দস্যুরানী ফুলন দেবীকে ইতিহাসের অন্যতম খুনি হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে। তার জন্ম ১৯৬৩ সালে ভারতের এক নিচু পরিবারে। দারিদ্র্য এবং সামাজিক কারণে জীবনের শুরু থেকেই সংগ্রামের মুখোমুখি হয় ফুলন। মাত্র ১১ বছর বয়সে বাবার বয়সী এক লোকের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। ফুলনের গ্রাম এবং আশপাশের একাধিক গ্রামে ঠাকুর বংশের জমিদারী ছিল। আর জমিদারের লোকেরা প্রায়ই গ্রামের দরিদ্র গ্রামবাসীর কাছ থেকে ফসল নিয়ে নিত এবং তাদের ওপর নির্যাতন চালাত।

দস্যু রাণী ফুলন দেবীর গল্প

ফুলন এসবের প্রতিবাদ জানিয়ে দখলকারীদের নেতা মায়াদীনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে। এ অপমানের প্রতিশোধ নিতে ঠাকুররা তাকে ধরে নিয়ে যায় বেমাই নামে প্রত্যন্ত এক গ্রামে। এরপর তার ওপর চলে অমানুষিক নির্যাতন। দুই সপ্তাহ ধরে প্রতি রাতে ঠাকুর ও তার লোকরা ফুলনকে গণধর্ষণ করে। প্রতি রাতেই ফুলন জ্ঞান না হারানো পর্যন্ত চলত এ পাশবিকতা। ১৬ দিনের মাথায় এক রাতে নির্যাতন শেষে তারা ফুলনকে মৃত মনে করে ফেলে রাখে। আর প্রায় মৃত্যুপথযাত্রী ফুলন এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। তখন ফুলনের বয়স ছিল মাত্র সতেরো। পালিয়েও রক্ষা পেলেন না ফুলন। আরেকবার ধরা পড়লেন এক দস্যুদলের হাতে। দস্যুদের নেতা বাবুর নজর পড়ে ফুলনের ওপর। সে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইল ফুলনের ওপর। কিন্তু আরেক দস্যু এতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বাবুকে খুন করে ফুলনকে রক্ষা করে সে। এরপর ফুলনের সঙ্গে বিক্রমের বিয়ে হয় এবং শুরু হয় ফুলনের নতুন জীবন। রাইফেল চালানো শিখে পুরোদস্তুর দস্যু হয়ে ওঠে। ফুলন তার আলাদা বাহিনী নিয়ে প্রথম হামলা চালায় তার সাবেক স্বামীর গ্রামে। নিজ হাতে ছুরিকাঘাতে তার স্বামীকে খুন করে রাস্তায় ফেলে রাখে। 


ফুলন তার সংগঠিত দস্যুদল নিয়ে ক্রমাগত ধনী গ্রাম এবং জমিদার বাড়িগুলোতে আক্রমণ চালাতে থাকে। এর মধ্যেই একদিন ধনী ঠাকুর বংশের ছেলের বিয়েতে সদলবলে ডাকাতি করতে যায় ফুলন। সেখানে ফুলন খুঁজে পান এমন দু’জনকে যারা তাকে ধর্ষণ করেছিল। ক্রোধে  ফুলনদেবী আদেশ করে বাকি ধর্ষণকারীদেরও ধরে আনার। কিন্তু বাকিদের পাওয়া না যাওয়ায় লাইন ধরে ঠাকুর বংশের বাইশজনকে একসঙ্গে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে মেরে ফেলা হয়। বেমাইয়ের এই গণহত্যা ভারতবর্ষে ব্যাপক সাড়া ফেলে। সরকার ফুলনকে ধরার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠে।

যারা তাকে রেপ করেছিল,যারা ছিল সাক্ষী- তাদের গুলি করে মেরেছিলেন ফুলনদেবী, ৩৯  বছর বাদে সেই কেসের রায়|People who gangraped and who were witness Phoolan  Devi killed all ...

আবার ফুলনের পক্ষেও আন্দোলন হয়। শেষ পর্যন্ত ১৯৮৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সরকার সন্ধিপ্রস্তাব করলে ফুলন অনেকগুলো শর্ত দেন। সরকার সেই শর্ত মেনে নিলে ১০,০০০ মানুষ আর ৩০০ পুলিশের সামনে ফুলনদেবী অস্ত্র জমা দেন গান্ধী আর দুর্গার ছবির সামনে। ১১ বছর কারাভোগের পর ফুলন সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দেন এবং ১৯৯৬ এবং ’৯৯-তে পরপর দু’বার লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের ২৫ জুলাই ঠাকুর বংশের তিন ছেলের এলোপাতাড়ি গুলিতে ফুলন দেবী নিহত হন।

আন্দ্রেই চিকাতিলো : 
জন্ম ইউক্রেনে পরবর্তী কালে রাশিয়ান নাগরিক এ সিরিয়াল কিলার বুচার অব রোস্তভ বা রোস্তবের কসাই হিসেবে কুখ্যাত ছিল। তাকে দ্য রেড রিপার নামেও ডাকা হতো। ১৯৭৮ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে ৫৩ জন নারী ও শিশুকে হত্যা করার অপরাধে তাকে অভিযুক্ত করা হয়।  সে যে প্রক্রিয়ায় হত্যাকাণ্ড ঘটাত তা এক কথায় নৃশংস। চিকাতিলো তার প্রথম হত্যাকাণ্ড ঘটায় ১৯৭৮ সালের ২২ ডিসেম্বর। 

Terrifying serial rapist and murderer dubbed ‍‍`The Maniac‍‍` who faced trial  in iron cage - Mirror Online


৯বছর বয়সী একটি মেয়েকে ফুঁসলিয়ে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে গিয়ে কুকর্মে উদ্যত হয়। মেয়েটি চিৎকার চেঁচামেচি করলে সে তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে তার ওপর কামচরিতার্থ ঘটায়। এভাবেই তার বিকৃতকর্ম শুরু। ১৯৯৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি এই কুখ্যাত খুনিকে ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে হত্যা করা হয়।

এরশাদ শিকদার : 
বাংলাদেশের অপরাধীদের মধ্যে সবচেয়ে কুখ্যাত নামটি হলো এরশাদ শিকদার। নৃশংসতা ও ভয়াবহতার দিক থেকে এরশাদ শিকদার সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তার জন্ম ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মাদারঘোনা গ্রামে। ১৯৬৬-৬৭ সালে খুলনায় আসার পর আস্তে আস্তে সেখানে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। পেশায় প্রথম দিকে কুলির সহযোগী ছিল। পরবর্তী সময়ে চুরি-ডাকাতির সঙ্গে জড়িয়ে একসময় রাঙ্গা চোরা নামে পরিচিতি পায়। এরপর জড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ কিলিং মিশনের সঙ্গে। এরশাদ শিকদার যাকে পথের কাঁটা মনে করেছে, তাকে হত্যা করেছে। 

নৃশংস খুনী এরশাদ শিকদারের শুরু ও শেষ

রাজসাক্ষী নূরে আলমের মতে, এরশাদ শিকদার কমপক্ষে ৬০টি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তবে সে ২৪টি হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিল। এরশাদ শিকদারের ছয়টি বিয়ের কথা জানা গেছে। এরশাদ শিকদারের হাতে বহু নারী নির্যাতিত-লাঞ্ছিত হয়েছে। যাকে তার পছন্দ হতো, তাকেই সে ছলে-বলে-কৌশলে তার ডেরায় নিয়ে এসে নির্যাতন করত। ১৯৯৯ সালে গ্রেফতার হওয়ার সময় তার নামে তিনটি মামলা ছিল। পরে এরশাদের নামে আরও ৪৩টি মামলা হয়। নিম্ন আদালতের বিচারে সাতটি হত্যা মামলায় তার ফাঁসির দণ্ডাদেশ হয়। চারটি মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হয়। ২০০৪ সালের ১০ মে মধ্যরাতে খুলনা জেলা কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর হয়।
 

 

সাজেদ/

আর্কাইভ