প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০২২, ১০:৩৬ পিএম
প্রখ্যাত রোমান সেনাপতি ও শাসক জুলিয়াস সিজার। তীক্ষ্ণ মেধা, শক্তি ও সাহস দিয়ে জয় করেছিলেন বহু অঞ্চল। ছোট্ট নগর রাষ্ট্র থেকে তিনি গড়ে তুলেছিলেন বিশাল রোমান প্রজাতন্ত্র।
জুলিয়াস সিজারের পুরো নাম-গাইও জুলিও কায়েসার। ১২ জুলাই (মতান্তরে ১৩ জুলাই) খ্রিষ্টপূর্ব ১০০ অব্দে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। প্রাচীন রোম সাম্রাজ্যের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে তার জন্ম। তার পিতা গাইয়াস জুলিয়াস সিজার। তিনি ছিলেন একজন ম্যাজিস্ট্রেট ও এশিয়া অঞ্চলের শাসক। মায়ের নাম ছিল অউরেলিয়া কোট্টা। তার বাল্যকাল সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না।
অল্প বয়সে অতি সাধারণ বংশের এক মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন সিজার। এ কারণে রোম ছেড়ে এশিয়ার মাইনরে গিয়ে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন তিনি। সেখানে যুদ্ধরত একটি দলের সঙ্গে যোগ দিয়ে নিজের সামরিক নৈপুণ্য প্রমাণ করেন তিনি। এরপর ফিরে আসেন রোমে।
রোমে ফিরেই তিনি মিলিটারি ট্রাইবান হিসেবে নিযুক্ত হন। এটিই তার রাজনৈতিক জীবনের প্রথম ধাপ। খ্রিষ্টপূর্ব ৬৯ অব্দে তিনি বিচারক পদে আসীন হন। ওই বছরই তার স্ত্রী কার্নেলিয়া মারা যান। এরপর তিনি এক সম্পদশালী মেয়েকে বিয়ে করেন।
খ্রিষ্টপূর্ব ৬১ অব্দে একটি স্ক্যান্ডালে জড়িয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। বিচ্ছেদের পর স্পেনে চলে যান তিনি। সেখানে হিসপানিয়া অঞ্চলের শাসক নির্বাচিত হন। ওই অঞ্চলের সরকারবিরোধী নৃ-গোষ্ঠিদের দমন করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন এবং একটি সৈন্য বাহিনী গঠন করেন। পুরস্কার হিসেবে তিনি কনসুল পদে উন্নীত হন।
উচ্চ মর্যাদা নিয়ে দেশে ফিরে পম্পেই ও ক্র্যাসাসের সঙ্গে একটি রাজনৈতিক চুক্তি করেন তিনি। এর ফলে তিনি ট্রায়ামভ্যারেট (ত্রয়ী শাসকের একজন) নিযুক্ত হন। এরপর এক প্রভাবশালী সিনেটরের মেয়েকে বিয়ে করেন তিনি। যার নাম ছিল ক্যালপুর্নিয়া।
সরকারি পদে থাকাবস্থায় জুলিয়াস সিজার অর্থ আয়ের উৎস খুঁজেন। তিনি বুঝতে পারেন রাজ্য জয় ছাড়া অর্থ আয় করা সম্ভব নয়। তাই দ্রুত সৈন্য বাহিনী নিয়ে রোম ত্যাগ করেন সিজার।
খ্রিষ্টপূর্ব ৫৪ অব্দে পার্থিয়ানদের সাথে যুদ্ধে ক্র্যাসাস নিহত হন। এদিকে তার কনসুল পদের মেয়াদও শেষ হয়। ক্র্যাসাস নিহত হওয়ার পর রোমের একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে ওঠেন পম্পে। গলে সিজারের শাসনকালের সমাপ্তি ঘোষণা করেন পম্পে এবং তাকে সাধারণ নাগরিক হিসেবে রোমে ফিরতে নির্দেশ দেন। জুলিয়াস সিজার বুঝতে পারেন কনসুল হিসেবে তার কাজের জন্য তিনি অভিযুক্ত হতে পারেন। তাই পম্পের আদেশ অনুযায়ী না ফিরে সিজার তার সৈন্য বাহিনী নিয়ে রুবিকন নদী পার হয়ে শহরে প্রবেশ করেন। তখন যুদ্ধের আভাস পেয়ে পম্পে রোম ছেড়ে পালিয়ে স্পেনে যান এবং পরে গ্রীসে যান। ওখানেই সিজারের চেয়ে ক্ষুদ্র বাহিনী নিয়ে যুদ্ধে পরাজিত হন পম্পে। মিশরে পালিয়ে যান এবং মিত্র বাহিনীর খোঁজ চালান পম্পে সেখান থেকে।
এদিকে জুলিয়াস সিজারের জয়ের খবর মিশরে ছড়িয়ে পড়ে। পম্পে মিশরে কোনো সহযোগিতা পান না। উল্টো মিশরীয়রা তাকে মৃত্যুর পথ বেছে নিতে বাধ্য করেন।
সিজার পম্পের পিছু নিয়ে মিশরে চলে যান। পম্পেকে হত্যার দায়ে সেখানে মার্শাল আইন জারি করেন এবং রাজ প্রসাদ দখল করে নেন। এরপর তিনি ক্লিওপেট্রাকে ডেকে পাঠান (অনেকের মতে তিনি নিজেই এসেছিলেন)। কারণ টলেমীর সাথে ক্লিওপেট্রাও রাজ সিংহাসনের অধিকারী ছিলেন কিন্তু টলেমী তাকে সিংহাসন থেকে বিতাড়িত করেন। প্রথমবার সিজার ক্লিওপেট্রাকে দেখে প্রেমে পড়ে যান। সিজার ক্লিওপেট্রাকে তার সিংহাসন ফিরিয়ে দিতে চাইলে টলেমী রাজি হননি। ফলে মিশরীয় বাহিনীর সাথে তার যুদ্ধ হয় এবং সিজার জয় লাভ করেন।
ক্লিওপেট্রার সাথে সেখানে ৯ মাস থাকেন। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৭ অব্দে ক্লিওপেট্রা একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেয়। তার নাম রাখা হয় টলেমী সিজার। সে তার ছেলেকে রাজ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। তিনি ক্লিওপেট্রার হাতে শাসন ভার দিয়ে সৈন্য বাহিনী নিয়ে এশিয়ার মাইনরের দিকে অগ্রসর হন। পথে বহু অঞ্চল দখল করে রোমের শত্রুদের দিকে নজর দেন। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬ অব্দের জুলাই মাসে বিজয়ী হিসেবে রোমে প্রবেশ করেন জুলিয়াস সিজার।
রোমে ফিরে জুলিয়াস সিজার তার প্রোপৌত্র গাইয়াস অক্টাভিয়াস থুরিনাসকে তার উত্তরাধিকরী মনোনীত করেন। এরই মধ্যে তিনি রোমের বিভিন্ন সংস্কার কাজে হাত দেন। তিনি ট্যাক্স তুলে দেন। পুলিশ বাহিনী গঠন করেন। দরিদ্রদের ভূমি বন্টন করেন। ধীরে ধীরে তিনি রোমে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। ফলে সিনেট সদস্য ও বিরোধী দলীয়রা মনে করেন এক সময় সিজার রাজা হিসেবে একক শাসন প্রতিষ্ঠা করবে।
সাজেদ/