• ঢাকা সোমবার
    ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

আত্মহত্যার জঙ্গল

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৪, ২০২২, ০২:১০ এএম

আত্মহত্যার জঙ্গল

অওকিগাহারা জঙ্গল

ফিচার ডেস্ক

হাঁপিয়ে ওঠা মানুষ একটু স্বস্তি খোঁজে। মানসিক প্রশান্তির জন্য নদী-পাহাড়-বনে ঘুরে বেড়ায় প্রতিনিয়ত। নদীর ঢেউয়ে কেউ প্রশান্তি খোঁজে। কেউ আবার পাহাড় কিংবা বন-বাদাড়-জঙ্গলের সান্নিধ্যে মনকে প্রফুল্ল করে।


কিন্তু জাপানে এমন এক জঙ্গল আছে যেখানে মানুষ প্রশান্তির জন্য নয়, যায় মৃত্যকে আলিঙ্গণ করতে। আরেকটু খুলে বললে, মানুষ সেখানে যায় আত্মহত্যা করতে। জাপানের টোকিও শহর থেকে ১০০ মাইল পশ্চিমে মাউন্ট ফুজির পাদদেশে এই জঙ্গল অবস্থিত। নাম অওকিগাহারা।

The Dark Story Of Japan‍‍`s Suicide Forest Will Get You Thinking Twice Before  Going Into The Woods
জাপানে অন্য দেশের তুলনায় আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটে। ২০২০ সালে জাপানে করোনার থেকেও বেশি প্রাণ কেড়েছে একাকিত্ব। ওই বছর অক্টোবর মাসে জাপানে আত্মহত্যা করেছেন দুই হাজার ১৫৩ জন। একই বছরে করোনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন এক হাজার ৭৬৫ জন। ডিসেম্বর থেকে এখনও পর্যন্ত জাপানে আত্মহত্যা করেছেন সাত হাজার ৫০৬ জন।


সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় এই চিত্র উঠে এসেছে। একাকিত্বের জন্য হৃদরোগসহ একাধিক রোগ বাসা বেঁধেছে জাপানবাসীর শরীরে। তথ্য বলছে, জাপানে মহিলাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা পুরুষদের চেয়েও বেশি। শুধু অক্টোবর মাসেই দেশটিতে আত্মহত্যা করেছেন ৮৭৯ জন নারী।
অন্যান্য দেশের তুলনায় জাপানে বিয়ের প্রবণতা কম। কিন্তু সেখানে অধিকাংশ মেয়েদের কোনো সুরক্ষিত জীবিকা নেই। আর এই অর্থনৈতিক নিরাপত্তা মানসিক রোগের একটি অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয়।

Our Journey to Suicide Forest, Aokigahara, Japan
আত্মহত্যার জন্য মানুষ একটি জায়গাকেই বেশি বেছে নেয়। এ স্থানটি হলো অওকিগাহারা। ঘন গাছ-গাছালিতে ভরা নিঝুম জঙ্গল। এই জঙ্গল বিশ্বে ‘সুইসাইড ফরেস্ট’ হিসেবে পরিচিত। এটি ‘সি অফ ট্রিজ’বা গাছের সমুদ্র নামেও পরিচিত। ৩৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই জঙ্গল থেকে প্রতিবছর গড়ে এক শ’জন মানুষের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। বনের সবর্ত্রই ছড়িয়ে থাকে মৃত মানুষের কঙ্কাল, হারগোড়।

japan | Aokigahara Jukai is Infamously Called As The Suicide Forest of  Japan dgtl - Anandabazar
স্থানীয়রা মনে করে, অওকিগাহারা জঙ্গল মানুষকে আত্মহত্যার জন্য প্ররোচিত করে। এখানে কেউ একা প্রবেশ করলে অদ্ভুত এক জাদুকরী শক্তি তাকে বেঁধে ফেলে। যার ফলে জঙ্গল ছেড়ে বের হওয়া সম্ভব হয় না। এরপরই আত্মহত্যায় প্ররোচিত হয় সেই ব্যক্তি।


আবার কারো মতে, ১৯৬০ সালে জাপানি লেখক সেইচো মাতসুমোতোর ‘কুরোই জুকাই’ নামে একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়। সেই গল্পে প্রেমিক-প্রেমিকার বিচ্ছেদের করুণ কাহিনীর সমাপ্তি ঘটে এই অওকিগাহারা জঙ্গলে। উপন্যাসটি সেই সময় জাপানি সংস্কৃতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল।
প্রেমে ব্যর্থ যুবক-যুবতীরা নিজেদের শেষ করতে আশ্রয় নিতে থাকে এই জঙ্গলের মাঝে। কয়েকদিন পরই পাওয়া যায় তাদের নিথঁর দেহ। জাপানি লেখকের গল্পে অনুপ্রাণীত হয়ে প্রথম দিকে কেউ একজন এখানে আত্মহত্যা করেছিল। এরপর থেকে আরও অনেকেই এখানে আসতে থাকে শুধুমাত্র আত্মহত্যা করতে।

Suicide Tourism: A popular tourist destination in Japan with a dark  reputation | Trending
আগ্নেয় শিলার এই জঙ্গলে গাছগাছালির কমতি নেই। এখানে রয়েছে সুন্দর আর ভয়ঙ্করের এক অদ্ভুত মেলবন্ধন। জঙ্গলে ঢোকার মুখেই একটু হোঁচট খেতে হয় একটি নোটিশ বোর্ড দেখে। তাতে আছে সুইসাইড প্রিভেনশন অ্যাসোসিয়েশনের একটি সতর্কতামূলক লেখা, যার ভাবার্থ এমন-
‘পিতা-মাতার কাছ থেকে পাওয়া মহামূল্যবান উপহার তোমার এই জীবন। নিজের ভাইবোন ও পরিবারের অন্য সকলের কথা একবার ভাবো। তাদের সঙ্গে তোমার সমস্যাগুলো নিয়ে একটিবার আলোচনা করো। আত্মহত্যা কোনো সমাধান হতে পারে না।’

Logan Paul controversy: What is Aokigahara, Japan‍‍`s ‍‍`suicide forest‍‍`? - The  Washington Post
অওকিগাহারা জঙ্গলে আত্মহত্যা শুরুর ইতিহাসটা বেশ পুরনো। ১৯৫০ সাল থেকে হিসেব শুরু হয়ে এখনও পর্যন্ত পাঁচ শ’রও বেশি আত্মহত্যার ঘটনা খুঁজে পাওয়া যায়। তবে সবচাইতে বেশি সংখ্যার হিসেব পাওয়া যায় ২০০২ সালে ৭৮টি এবং ২০০৩ সালে ১০৫টি। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, এখন পর্যন্ত এই সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে।

 

সাজেদ/

আর্কাইভ