প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৪, ২০২২, ০২:১০ এএম
হাঁপিয়ে ওঠা মানুষ একটু স্বস্তি খোঁজে। মানসিক প্রশান্তির জন্য নদী-পাহাড়-বনে ঘুরে বেড়ায় প্রতিনিয়ত। নদীর ঢেউয়ে কেউ প্রশান্তি খোঁজে। কেউ আবার পাহাড় কিংবা বন-বাদাড়-জঙ্গলের সান্নিধ্যে মনকে প্রফুল্ল করে।
জাপানে অন্য দেশের তুলনায় আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটে। ২০২০ সালে জাপানে করোনার থেকেও বেশি প্রাণ কেড়েছে একাকিত্ব। ওই বছর অক্টোবর মাসে জাপানে আত্মহত্যা করেছেন দুই হাজার ১৫৩ জন। একই বছরে করোনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন এক হাজার ৭৬৫ জন। ডিসেম্বর থেকে এখনও পর্যন্ত জাপানে আত্মহত্যা করেছেন সাত হাজার ৫০৬ জন।
আত্মহত্যার জন্য মানুষ একটি জায়গাকেই বেশি বেছে নেয়। এ স্থানটি হলো অওকিগাহারা। ঘন গাছ-গাছালিতে ভরা নিঝুম জঙ্গল। এই জঙ্গল বিশ্বে ‘সুইসাইড ফরেস্ট’ হিসেবে পরিচিত। এটি ‘সি অফ ট্রিজ’বা গাছের সমুদ্র নামেও পরিচিত। ৩৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই জঙ্গল থেকে প্রতিবছর গড়ে এক শ’জন মানুষের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। বনের সবর্ত্রই ছড়িয়ে থাকে মৃত মানুষের কঙ্কাল, হারগোড়।
স্থানীয়রা মনে করে, অওকিগাহারা জঙ্গল মানুষকে আত্মহত্যার জন্য প্ররোচিত করে। এখানে কেউ একা প্রবেশ করলে অদ্ভুত এক জাদুকরী শক্তি তাকে বেঁধে ফেলে। যার ফলে জঙ্গল ছেড়ে বের হওয়া সম্ভব হয় না। এরপরই আত্মহত্যায় প্ররোচিত হয় সেই ব্যক্তি।
আগ্নেয় শিলার এই জঙ্গলে গাছগাছালির কমতি নেই। এখানে রয়েছে সুন্দর আর ভয়ঙ্করের এক অদ্ভুত মেলবন্ধন। জঙ্গলে ঢোকার মুখেই একটু হোঁচট খেতে হয় একটি নোটিশ বোর্ড দেখে। তাতে আছে সুইসাইড প্রিভেনশন অ্যাসোসিয়েশনের একটি সতর্কতামূলক লেখা, যার ভাবার্থ এমন-
‘পিতা-মাতার কাছ থেকে পাওয়া মহামূল্যবান উপহার তোমার এই জীবন। নিজের ভাইবোন ও পরিবারের অন্য সকলের কথা একবার ভাবো। তাদের সঙ্গে তোমার সমস্যাগুলো নিয়ে একটিবার আলোচনা করো। আত্মহত্যা কোনো সমাধান হতে পারে না।’
অওকিগাহারা জঙ্গলে আত্মহত্যা শুরুর ইতিহাসটা বেশ পুরনো। ১৯৫০ সাল থেকে হিসেব শুরু হয়ে এখনও পর্যন্ত পাঁচ শ’রও বেশি আত্মহত্যার ঘটনা খুঁজে পাওয়া যায়। তবে সবচাইতে বেশি সংখ্যার হিসেব পাওয়া যায় ২০০২ সালে ৭৮টি এবং ২০০৩ সালে ১০৫টি। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, এখন পর্যন্ত এই সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে।
সাজেদ/