• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
বাংলাদেশের

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের জন্ম কথা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৩, ২০২২, ১১:০৩ পিএম

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের জন্ম কথা

ফিচার ডেস্ক

ছোটবেলা থেকেই আমরা জানি, বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদের নাম ‘বায়তুল মোকাররম’। আর রাজধানী ঢাকাকে ‘মসজিদের নগরী’ বলা হয়। পৃথিবীর ১০ম বৃহত্তম মসজিদ হিসেবে বিখ্যাত বায়তুল মোকাররম মসজিদ। এর আয়তন ২ হাজার ৬ শ ৯৪ দশমিক ১৯ বর্গমিটার।

মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬০ সালের ২৭ জানুয়ারি। মসজিদটি প্রথম পর্যায়ে দোতলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়। ১৯৬০ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান মসজিদটির নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। সে অনুযায়ী ১৯৫৯ সালে বায়তুল মোকাররম মসজিদ সোসাইটি গঠনের মাধ্যমে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। পুরনো ঢাকা ও নতুন ঢাকার মিলনস্থলে মসজিদটির জন্য ৮ দশমিক ৩ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। স্থানটি নগরীর প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র থেকেও ছিল নিকটবর্তী। সে সময় মসজিদের অবস্থানে একটি বড় পুকুর ছিল। যা পল্টন পুকুর নামে পরিচিত ছিল। পুকুরটি পরবর্তীতে ভরাট করা হয়।

বায়তুল মোকাররম: পারিবারিক উদ্যোগে তৈরি হয়ে যেভাবে বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ  হয়ে উঠলো - BBC News বাংলা

বায়তুল মোকাররম মসজিদের প্রধান স্থপতি ছিলেন আব্দুল হোসেইন এম. থারিয়ানি অ্যান্ড কোম্পানির স্বত্বাধিকারী মি. আব্দুল হোসেইন মোহাম্মদ থারিয়ানির পুত্র মো. সেলিম থারিয়ানি । ১৯৬৩ সালের ২৫ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো এ মসজিদে নামাজ পড়া হয়। ১৯৬৪ সাল হতে বায়তুল মোকাররম মার্কেট চালু হয়। পরবর্তিতে ১৯৬৮ সালে এ কাজ সম্পূর্ণ হয়।

Abdulhusein M. Thariani - Wikipedia

১৯৭৫ সালের ২৮ মার্চ থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এই মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে। বর্তমানে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদটি ৮তলা। নিচতলায় রয়েছে বিপণিবিতান ও একটি বৃহত্তর অত্যাধুনিক সুসজ্জিত মার্কেট কমপ্লেক্স। দোতলা থেকে ছয়তলা পর্যন্ত প্রতি তলায় নামাজ পড়া হয়। ২০০৮ সালে সৌদি সরকারের অর্থায়নে মসজিদটি সম্প্রসারিত করা হয়। পূর্বে ৩০ হাজার মুসল্লি একত্রে নামায পড়লেও বর্তমানে এই মসজিদে একসঙ্গে ৪০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। এ মসজিদের শোভাবর্ধন এবং উন্নয়নের কাজ এখনও অব্যাহত রয়েছে।

বায়তুল মোকাররম মসজিদ নির্মাণের ইতিকথা

মসজিদের অভ্যন্তরে অজুর ব্যবস্থাসহ নারীদের জন্য পৃথক নামাজের কক্ষ ও পাঠাগার রয়েছে। মসজিদটির ১ম তলার আয়তন ২৬ হাজার ৫১৭ বর্গফুট, দ্বিতীয় তলা ১০ হাজার ৬৬০, তৃতীয় তলা ১০ হাজার ৭২৩, চতুর্থ তলা ৭ হাজার ৩৭০, পঞ্চম তলা ৬ হাজার ৯২৫ এবং ষষ্ঠ তলার আয়তন ৭ হাজার ৪৩৮ বর্গফুট। পুরুষদের অজুখানার জন্য ব্যবহৃত হয় ৬ হাজার ৪২৫ বর্গফুট। নারীদের অজুখানার জন্য ব্যবহৃত হয় ৮৮০ বর্গফুট।

রাজধানীর যেসব স্থানে নারীদের নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে

এ ছাড়া, নারীদের জন্য ৬ হাজার ৩ শ ৮২ বর্গফুটের নামাজের জায়গা রয়েছে, যা মসজিদের তিনতলার উত্তর পাশে অবস্থিত।

মসজিদের প্রবেশ পথটি রাস্তা থেকে ৯৯ ফুট উচুতে অবস্থিত। তাই মসজিদটি বেশ উচু। এর প্রধান ভবনটি আট তলা এবং মাটি থেকে ৯৯ ফিট উচু। প্রধান ভবনটির রং সাদা। 

মূল নকশা অনুযায়ী মসজিদের প্রধান প্রবেশপথ পূর্ব দিকে হওয়ায় পূর্ব দিকের সাহানটি ২ হাজার ৬ শ ৯৪ দশমিক ১৯ বর্গ মিটারের। এর দক্ষিণ ও উত্তর পার্শ্বে ওযু করার জন্য জায়গা রয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ দিকে মসজিদে প্রবেশ করার বারান্দার উপর দুটি ছোট গম্বুজ নির্মাণের মাধ্যমে প্রধান ভবনের ওপর গম্বুজ না থাকার অভাব ঘোচানো হয়েছে।

বায়তুল মোকাররম মসজিদ | Porjotonlipi | জাতীয় মসজিদ

মসজিদে প্রবেশ করার বারান্দাগুলিতে তিনটি অশ্বক্ষুরাকৃতি খিলানপথ রয়েছে, যার মাঝেরটি পার্শ্ববর্তী দুটি অপেক্ষা বড়। দুটি উন্মুক্ত অঙ্গন (ছাদহীন ভিতরের আঙিনা) প্রধান নামাজ কক্ষে আলো ও বাতাসের চলাচলকে নিয়ন্ত্রণ করে। তিন দিকে বারান্দা দ্বারা ঘেরা নামাজের প্রধান কক্ষের মিহরাবটির আকৃতি আয়তাকার। সমগ্র মসজিদ জুড়েই অলংকরণের আধিক্যকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে বেড়াতে গেলে - Roar বাংলা

বায়তুল মোকাররমের অবকাঠামো কাবাঘরের মতো। এই মসজিদটিতে মোগল স্থাপত্যশৈলীর ঐতিহ্যগত বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি বেশ কিছু আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শনও রয়েছে। কাবার আদলে নির্মিত অংশবিশেষ বায়তুল মোকাররমকে বিশেষ বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করেছে। মসজিদের বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে বাগান। বাগানটি মোগল শৈলীতে নকশা করা।

 

 

সাজেদ/

আর্কাইভ