প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২২, ২০২২, ১১:৩৭ পিএম
নদীর পানি এতো স্বচ্ছ যে যাতে কোনো শ্যাওলা বা ময়লা-আবর্জনা নেই। প্রবহমান জলে কোনো পাথর বা কংকরে শ্যাওলা জমে সবুজ হয় না। পৃথিবীর অন্য সব নদ-নদীর চেয়ে এই নদী অনেকটাই আলদা; নদীটি বেশ বৈশিষ্ট্যমন্ডিত।
বলা হচ্ছে, নীলনদের কথা। এটি বিশ্বের দীর্ঘতম নদ। এটি আফ্রিকা মহাদেশের একটি নদী। নীলের উত্তরাংশ সুদানে শুরু হয়ে মিসর পাড়ি দিয়ে প্রায় পুরোটাই প্রবাহিত হয়েছে মরুভূমির মধ্য দিয়ে।
নীলনদের নামকরণ নিয়ে বহু মিথ প্রচলিত আছে। নীলনদকে প্রাচীন মিশরীয় ভাষায় বলা হয় ইতেরু। নীল শব্দটি সেমেটিক শব্দ নাহাল থেকে এসেছে বলে ধারণা করেন অনেকে, যার অর্থ নদী। কারো কারো ধারণা অনুযায়ী, গ্রিক শব্দ নেলস থেকে এসেছে, যার অর্থ উপত্যকা।
নীলনদ বয়ে গেছে ৩৪ লাখ বর্গকিলোমিটার অববাহিকায়। এর রয়েছে দুটি উপনদী- একটি শ্বেত নীল নদ, অপরটি নীলাভ নীল নদ। শ্বেত নীল নদ দীর্ঘতর। আফ্রিকার মধ্যভাগের হৃদ অঞ্চল হতে উৎপত্তি লাভ করেছে। এর সর্ব দক্ষিণের উৎস হলো দক্ষিণ রুয়ান্ডায়। সেখান থেকে উত্তর দিকে তাঞ্জানিয়া, লেক ভিক্টোরিয়া, উগান্ডা ও দক্ষিণ সুদানের মধ্য দিয়ে নদীটি প্রবাহিত হয়েছে।
বিশাল ব-দ্বীপ সৃষ্টি করে ভূমধ্যসাগরে গিয়ে মিশেছে নীলনদ। এর স্বচ্ছ পানির কারণেই এ রকম হয়ে থাকে। এছাড়াও আর সব নদ-নদীর পানি যখন কমে যায়, এর পানি তখন বৃদ্ধি পায়। আর অন্যসব নদীর পানি যখন বৃদ্ধি পায়, এর পানি তখন কমে যায়। পৃথিবীর সব নদ-নদী উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত হলেও নীল নদ দক্ষিণ থেকে উত্তরে প্রবাহিত হয়।
নীলনদের অববাহিকায় গড়ে ওঠা মিসরীয় সভ্যতাও রীতিমতো স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ আছে ইতিহাসের পাতায়। দেশটির সভ্যতা প্রাচীনকাল থেকেই নীলের ওপর নির্ভরশীল। জনসংখ্যার অধিকাংশ এবং বেশিরভাগ শহরের অবস্থান আসওয়ানের উত্তরে নীলনদের উপত্যকায় অবস্থিত। প্রাচীন মিসরের প্রায় সমস্ত সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও এর তীরেই গড়ে উঠেছে।
নীলাভ নীল নদ ইথিওপিয়ার তানা হৃদ হতে উৎপন্ন হয়েছে। এটি পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে সুদানে প্রবেশ করেছে। এর দুটি উপনদী মিলিত হয়েছে সুদানের রাজধানী খার্তুমের নিকটে।
নীলনদের ব-দ্বীপে প্রায় চার কোটি মানুষের বসবাস। খ্রিস্টপূর্ব ৩১০০ অব্দ থেকে এ নদী অববাহিকার বিস্তৃতি বেড়েছে ১১টি দেশের ওপর দিয়ে। এগুলো হলো- মিসর, সুদান, দক্ষিণ সুদান, বুরুন্ডি, রুয়ান্ডা, কঙ্গো, তানজানিয়া, কেনিয়া, ইথিওপিয়া, ইরিত্রিয়া ও উগান্ডা।
নীলনদের তীরে ফলানো হতো প্রধান প্রধান শস্য। এর মধ্যে যব, রুটির জন্য গম এবং বিয়ারের জন্য বার্লি। একজাতীয় শনগাছ থেকে তৈরি হতো কাপড় ও দড়ি তৈরির উপকরণ। প্যাপিরাস নামক একটি গাছের চাষ হতো, যার মূল খেতো মানুষ। আর উপরের অংশ দিয়ে তৈরি হতো মাদুর ও নৌকা। এছাড়া বানানো হয়েছিল পৃথিবীর প্রথম কাগজ। এগুলো রপ্তানিও করা হতো।
নীলনদের তীরবর্তী বাসিন্দাদের জীবনাচরণের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কুমিরের কথা। অনেক অভিযানও ব্যর্থ হয়েছিল কুমিরের আক্রমণে। এখানকার কুমিরগুলো চার মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। অন্য প্রাণীর মধ্যে ছিল বেবুন, কাছিমসহ প্রায় ৩০০ প্রজাতির পাখি। এর মধ্যে ঈগল, আইবিস ও সানবার্ড উল্লেখযোগ্য। এ পর্যন্ত দুবার নীলনদ জমে বরফ হয়েছিল, ৮২৯ ও ১০১০ সালে।
মিসরীয়রা একসময় পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করত নীলনদকে। তারা পিরামিডের পাথর নিয়ে যেতো এই নদী দিয়ে। ১৯৭০ সালে এই নদের ওপর আসওয়ান হাই নামের একটি বাঁধ নির্মাণ করে বন্যার পানি জমিয়ে রাখা হতো। যা পরবর্তীকালে ব্যবহার করা হতো কৃষিকাজের জন্য। প্রাচীন মিসরের লোকজন হাপিকে নীলনদের দেবতা হিসেবে ধারণা করত।
সাজেদ/