প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২২, ২০২২, ১০:৪৪ পিএম
দেশের ৪৫টি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার একটি রাখাইন সম্প্রদায়। মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে ১৭৮৫ সালে পালিয়ে এসেছিল বাংলাদেশে। তাদের মাতৃভাষাও ‘রাখাইন’। কিন্তু নিজস্ব কিংবা সরকারি উদ্যোগ না থাকায় বিলুপ্তির পথে এই ভাষাটি।
পৃথিবীতে সাত হাজারেরও বেশি ভাষা রয়েছে। কিন্তু অর্ধেকেরও বেশি ভাষা এখন বিলুপ্তির ঝুঁকিতে। ঔপনিবেশিক প্রভুদের ভাষা ভূ-খণ্ডের ওপর চাপিয়ে দেয়ার কারণেই ভাষার বিলুপ্তির একটি অন্যতম কারণ। এতে ওই জনগোষ্ঠীর ভাষার নিজস্ব স্বকীয়তা ও সংস্কৃতির বিলুপ্তির ঘটে। সারাবিশ্বে এমন উদাহরণ ভুরি ভুরি।
দেশের বিভিন্ন স্থানে এখন ৯০ হাজারের মতো রাখাইন জাতির বসতি রয়েছে। এর মধ্যে ৫০ হাজারেরও বেশি বাস করেন কক্সবাজার জেলায়। অন্যরা পটুয়াখালী, বরগুনা, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও চট্টগ্রাম মহানগরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসবাস করছেন। চর্চার অভাবে দেশের অন্যতম এই ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সদস্যরা মাতৃভাষা হারাতে বসেছে। বলতে জানলেও রাখাইন ভাষায় লিখতে ও পড়তে জানেন, এমন লোক পাওয়া মুশকিল।
রাখাইনদের নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের মধ্যেও নেই এই ভাষার চর্চা। তাদের প্রায় কেউই মাতৃভাষায় লিখতে ও পড়তে জানে না। কেউ কেউ ভালো বলতেও পারে না। পাকিস্তান আমলে সীমিত আকারে কিছু এলাকার বিদ্যালয়ে রাখাইন ভাষা পড়ানো হত। পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষকের অভাবে বর্তমান কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে । এই নিয়ে উদ্বিগ্ন রাখাইন নাগরিক সমাজের সদস্যরা।
মাতৃভাষার বিলুপ্তি রাখাইনদের অস্তিত্ব সংকটে ফেলবে; এর প্রভাব পড়ছে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির ওপরও। হারিয়ে যাচ্ছে নানা গল্প। ভাষা বিলুপ্ত হওয়ার বিষয়টি প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ভাষা ও প্রথাগত জ্ঞানের মধ্যে একটি মৌলিক সম্পর্ক বিদ্যমান। যা জীববৈচিত্র্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। রাখাইন ভাষা হারিয়ে যাওয়া মানে হলো এই জনগোষ্ঠীর বিশাল এক জ্ঞানের ভাণ্ডারের ক্ষয়সাধন। এতে তাদের আত্মপরিচয় সংকটের মুখে পড়ছে।
উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে আদি জনগোষ্ঠীর জন্য নিজ ভাষাচর্চা ও প্রয়োগ এবং তাদের শিশুদের ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করা সময়ের দাবি। এর জন্য দরকার জাতীয়ভাবে নীতিমালা সংরক্ষণের। এর গুরুত্ব বোঝানোর জন্য সচেতনতা সৃষ্টি, বিপন্ন ভাষাগুলোর বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে এগুলো চালু রাখার প্রক্রিয়া, মিডিয়ায় তথ্য ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভাষাগুলোর ব্যবহারের ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
একটি ভাষা সংকটের অর্থ হলো ইতিহাস, মূল্যবোধ, সাহিত্য, আত্মিক ও জ্ঞানের ভাণ্ডারও সংকটাপন্ন হওয়া। একটি ভাষা বিলুপ্ত হলে তার সঙ্গে চলে যায় তাকে নিয়ে গড়ে ওঠা সংস্কৃতি।
সজিব/এএল