• ঢাকা রবিবার
    ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ইলন মাস্ক বাঙালির চিরবন্ধু

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২২, ২০২২, ০৩:৪১ এএম

ইলন মাস্ক বাঙালির চিরবন্ধু

ইলন মাস্ক

ফিচার ডেস্ক

বর্তমান বিশ্বে ‘ইলন মাস্ক’ একটি বহুল পরিচিত নাম। ব্লুমবার্গ সূচক অনুযায়ী জেফ বেজোস, বিল গেটসকে পেছনে ফেলে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্বের ধনীর তালিকায় ছিলেন তিনি। তার মোট সম্পদের অর্থমূল্য ১৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। স্পেস-এক্স এবং টেসলারের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কের সম্পদ ও প্রতিষ্ঠানের খবর সবার জানা থাকলেও অজানা আছে অনেক কিছুই।

আজকের প্রতিবেদনে অজানা সেসব তথ্যের ওপরই আলোকপাত করতে চাই। সারা বিশ্বে তার সম্পদের খবর না রাখলেও বহুক্ষেত্রে তার অজানা সম্পদের কথা অনেকেই জানতে চায়। বিশ্বের এই শীর্ষ ধনীর তালিকায় থাকা এই ব্যাক্তির সঙ্গে বাঙালির একটা আত্মার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। অনেকেই তাকে বাঙালির চিরবন্ধু হিসেবেই মনে করেন।

How Elon Musk Solves Problems: 4 Key Frameworks

১৯৭১ সালের ২৮ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়ায় ইলন মাস্ক জন্মগ্রহণ করেন। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তার বাবার নাম এরল মাস্ক। তিনি ছিলেন একজন প্রপার্টি ডেভেলপার। মায়ের নাম মায়া মাস্ক, একজন মডেল।

ইলন মাস্ক ছোটবেলা থেকেই তার বাবাকে অপছন্দ করতেন। বর্তমানে পারিবারিকভাবে বিচ্ছিন্ন আছেন তিনি। তার দাদার পূর্বপুরুষরা ব্রিটিশ এবং পেন্সেলভ্যানিয়া ডাচদের অন্তর্ভুক্ত এবং নানা, ড. জশুয়া হাল্ডম্যান আমেরিকান বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক।

Elon Musk says he ‍‍`rather hates‍‍` being CEO of Tesla | Business News | Sky  News

শৈশব থেকেই বই পড়তে ভালবাসতেন ইলন মাস্ক। তিনি দশ বছর বয়সে কমোডর ভিআইসি-২০ কম্পিউটার ব্যবহার শুরু করেন। এরপর থেকে কম্পিউটারের ওপর তার আগ্রহ জন্মে। তিনি একটি নির্দেশিকা ব্যবহার করে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখেন। বার বছর বয়সে তিনি বেসিক প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে একটি ভিডিও গেম তৈরি করেন, যার নাম ছিল ব্লাস্টার। এই গেমটি ৫০০ ডলারে তিনি পিসি অ্যান্ড অফিস টেকনোলজি ম্যাগাজিনের কাছে বিক্রি করে দেন। ছোট থেকেই ইলন মাস্ক আসিমভের ফাউন্ডেশন সিরিজের বই পড়তেন। যেখান থেকে তিনি শেখেন ‘সভ্যতার বিকাশ, অন্ধকার যুগের সম্ভাবনা ও স্থায়িত্বকাল কমাতে পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ’।

13 Surprising Things You Didn‍‍`t Know About Elon Musk | by Esh | The  Collector | Medium

শৈশবে সহপাঠী ও সমবয়সীদের কাছ থেকে বিরূপ আচরণের শিকার হয়েছিলেন ইলন মাস্ক। এক দল ছেলে তাকে সিঁড়ি থেকে ফেলে দেয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল তাকে। তিনি ওয়াটারক্লুফ হাউজ প্রিপারেটরি স্কুল এবং ব্রায়ানস্টোন হাই স্কুলে লেখাপড়া করেছেন।

বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর হাইস্কুল শেষে তিনি তার মা আর ভাই-বোনকে নিয়ে কানাডায় চলে যান। সেখানে অন্টারিওর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা আর অর্থনীতিতে মাস্টার্স করেন।

A Day In The Life of Elon Musk‍‍`s Billionaire Brother - YouTube

শিক্ষাজীবনের পর ইলন মাস্ক জিপ-টু নামে একটি সফটওয়্যার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৫ সালে পথচলা শুরু হলেও তা সফল হতে বেশ সময় লেগেছিল। সে সময় অ্যাপার্টমেন্টে থাকার খরচ না থাকায় অফিসেই ঘুমাতেন। ১৯৯৯ সালে কমপ্যাক কোম্পানির কাছে ২২ মিলিয়ন ডলারে জিপ-টু বিক্রি করেন তিনি। এরপর টাকা লেনদেনের ডিজিটাল সার্ভিস ‘পেপ্যাল’ চালু করে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে যান।

১৯৯৯ সালে তিনি এক্স.কম নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, যা পরে পেপ্যালের সঙ্গে একত্রিত হয়। ২০০২ সালে ‘ই-বে’র কাছে পেপ্যাল ১.৫ বিলিয়ন ডলারে বিক্রি করে দেন। এই বিক্রি থেকে তার লাভ থাকে ১৬৫ মিলিয়ন ডলার।

Elon Musk: Elon Musk talks Twitter, Tesla and how his brain works — live at  TED2022 | TED Talk

এরপর তার ভাবনার প্রসার ঘটতে থাকে। নতুন নতুন সৃষ্টির প্রতি তিনি ঝুঁকে পড়েন। পরিকল্পনা করেন মঙ্গল গ্রহে একটি শহর স্থাপনের। এ থেকেই ইলন মাস্কের রকেট নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ‘স্পেসএক্স’। এর আগে স্পেসএক্সের তৈরি রকেট ফ্যালকন হেভির সফল উৎক্ষেপণের পর তুমুল আলোচিত হন তিনি। উল্লেখ্য, স্পেসএক্স থেকে ফ্যালকন ১ নামের রকেটটি উৎক্ষেপণ করতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হয়েছিলেন; কিন্তু হাল ছাড়েননি। ২০১৮ সালে পরিকল্পনা করেছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে মঙ্গল গ্রহে একটি পরিপূর্ণ শহর স্থাপনের।

SpaceX Falcon 1 - the first step into space - YouTube

বাংলাদেশের প্রথম ভূ-স্থির যোগাযোগ ও সম্প্রচার উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। যা মহাকাশে পাঠায় ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্স। স্পেসএক্স-এর সবচেয়ে আধুনিক ফ্যালকন রকেটের মাধ্যমে ২০১৮ সালের মে মাসে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো হয়। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী দেশের তালিকায় যোগ হয় বাংলাদেশ। বিশ্বের কাছে তিনি বাংলাদেশকে নতুনভাবে তুলে ধরেন।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ - Bangabandhu-1

অন্যদিকে, টেসলা ও দ্য বোরিং কোম্পানি দিয়েই বিশ্বে ধনীদের তালিকার শীর্ষস্থান দখল করেছেন ইলন মাস্ক। ২০০৩ সালে যখন টেসলা কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন এর সঙ্গে ছিলেন না মাস্ক। পরবর্তীতে ২০০৪ সালে তার বোর্ড অব ডিরেক্টরসে যোগ দিলে কোম্পানিতে আমূল পরিবর্তন আসে। বর্তমানে বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী এবং পণ্য প্রকৌশলী তিনি। প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সাফল্য আর সম্ভানার স্বাক্ষর রেখে এগিয়ে যাচ্ছেন।

Elon Musk Becomes Unlikely Anti-Establishment Hero in GameStop Saga - The  New York Times

২০১২ সালে হাইপারলুপ প্রযুক্তির দৈনন্দিন ব্যবহারে সর্বপ্রথম আগ্রহ দেখান ইলন মাস্ক। হাইপারলুপের জন্য সুরঙ্গ খুঁড়তে তিনি ‘দ্য বোরিং কোম্পানি’ নামক একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। যা ঘণ্টায় এক হাজার কিলোমিটার গতিবেগে চলা হাইপারলুপের প্রথম পরীক্ষা সফল হয়।

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হয়েও বিতর্কের জন্ম দিতে ভালোবাসেন মাস্ক। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে টুইটারে নানা বিতর্কিত টুইট করেন তিনি। কখনো কখনো তিনি নিজের প্রতিষ্ঠানের সহযোগীদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। একবার কমেডিয়ান জো রোগানের সঙ্গে অংশ নেয়া এক ব্রডকাস্টে সরাসরি সম্প্রচারের সময় গাঁজা সেবন করেছিলেন মাস্ক।

Elon Musk‍‍`s Boring Company raises $675M, moves to Pflugerville

২০১৬ সালে মাস্কের প্রতিষ্ঠিত নিউরালিঙ্ক কোম্পানিটি সম্প্রতি একটি ব্রেইন-মেশিন ইন্টারফেস প্রকাশ করেছে। যা মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে কম্পিউটার ও মোবাইল ফোন যুক্ত করবে। এর মাধ্যমে বর্তমান বিশ্বে বেশ আলোচিত হয়েছেন ইলন মাস্ক।

অপর দিকে, ইলন মাস্ক কোম্পানির সিইও হয়েও তিনি বছরে বেতন নেন মাত্র এক ডলার। নিজের অংশীদারিত্ব থাকা বিভিন্ন কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশসহ আরও কিছু সুবিধা পান মাস্ক, যার বেশিরভাগই আসে টেসলা থেকে। বছরে ১ ডলার বেতন নেয়াটা আসলে সিলিকন ভ্যালির একটা ট্রেন্ড।

বাংলাদেশকে ৫৭তম দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিত করলেন ইলন মাস্ক। তিনি তার কোম্পানি স্পেসএস্ক, ফ্যালকন-১ নামের রকেটের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু-১ টেলিকম স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠায়। তিনি হলেন বাংলাদেশের একজন বন্ধু। সেই ইলন মাস্ককে নিয়েই আমাদের বিশেষ প্রতিবেদন।

 

 

সাজেদ/

আর্কাইভ