প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২২, ২০২২, ০২:৩৩ এএম
সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। সুন্দর-অসুন্দর, লম্বা কিংবা খাটো সবই সৃষ্টির পরিবেশগত ও প্রতিবেশের ফল। কোনো একসময় পৃথিবীতে অতি উচ্চতার মানুষ ছিল। এখন মানুষের উচ্চতায় বৈচিত্র্য আছে। লম্বা কিংবা খাটো মানুষ এখন কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়। কাজেই এই বিতর্কে না গিয়ে আজ বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা ১০ মানুষের কথা বলতে চাই। ১৮৩৫ সালের পর থেকে যারা জন্ম নিয়েছেন তাদের নিয়ে এই তালিকা করা হয়েছে।
বিকাশ উপাল : ১৯৮৬ সালে ভারতের হরিয়ানার রোহাটক জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস দ্বারা তার আনুষ্ঠানিক কোনো পরিমাপ করা হয়নি। তাই তার উচ্চতা নিয়ে বিতর্ক আছে। তিনি ৮ ফুট ২ ইঞ্চি লম্বা ছিলেন। আবার কোথাও কোথাও রেকর্ড আছে, তিনি ৮ ফুট ১ ইঞ্চি লম্বা ছিলেন।
তিনি বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা জীবিত ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হতে পারতেন। কিন্তু গিনেস বুক অফ রেকর্ডসগুলোর কঠোর যাচাইয়ের মানদণ্ড থাকায় বিকাশ কখনো ওই পর্যন্ত গিয়ে পরিমাপ করাননি। তিনি ভারতীয় ‘রাঙ দে বাসান্তি’ সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন। বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা এই মানুষটি ২০০৭ সালের ৩০ জুন টিউমার অপসারণ করার সময় অপারেশনের টেবিলেই মারা যান।
ডন কোহেলার : যুক্তরাষ্ট্রের ডেনটানা, মনটানায় জন্মগ্রহণ করেন। তার উচ্চতা ছিল ৮ ফুট ২ ইঞ্চি। ১৯৬৯ সালে তার মৃত্যু পর্যন্ত (১৯৮১) বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন কোহেলার।
ডন কোহেলা স্থানীয় অটো ডিলার জিম মরনের হডসন মোটর গাড়ি কোম্পানিতে কাজ করতেন। জীবনের শেষ দিকে তিনি কাইফোসিস রোগে আক্রান্ত হন। তখন তার মেরুদণ্ড বেঁকে যায়। ১৯৮১ সালে তিনি হার্টের রোগে আক্রান্ত হন। এ বছরেই তিনি মাত্র ৫৫ বছর বয়সে শিকাগোতে মারা যান।
বার্নার্ড কয়েন : লম্বা মানুষের তালিকায় বার্নার্ড কয়েন অন্যতম। তার উচ্চতা ৮ ফুট ২ ইঞ্চি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় কয়েনের উচ্চতা ছিল ৮ ফুট। তবে মনে করা হয় মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৮ ফুট ২ ইঞ্চিরও বেশি। অনেকটা ৮ ফুট ৪ ইঞ্চির কাছাকাছি। যদিও এর কোনো তথ্যপ্রমাণ কোথাও লিপিবদ্ধ নেই।
সুলতান কোসেন : ১৯৮২ সালের ১০ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন সুলতান কোসেন। ১০ বছর বয়স পর্যন্ত অন্যান্য শিশুদের মতো তার উচ্চতার স্বাভাবিক বৃদ্ধিই ঘটেছিল। তার পরিবারের বাবা-মা এবং চার ভাই-বোনসহ সবাই ছিলেন স্বাভাবিক উচ্চতার মানুষ। সুলতানের অস্বাভাবিক উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করে ‘পিটুইটারি গিগ্যান্টিজম’ নামে পরিচিত একটি রোগের কারণে।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুযায়ী, ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা মানুষ হচ্ছে তুরস্কের আঙ্কারার সুলতান কোসেন। যার উচ্চতা ২৫১ সেন্টিমিটার (৮ ফুট ২.৪ ইঞ্চি) মাপের।
অ্যাডওয়ার্ড বিউপরে : ১৮৮১ সালে জন্মগ্রহণ করেন অ্যাডওয়ার্ড বিউপরে। তার উচ্চতা ৮ ফুট ৩ ইঞ্চি। শুধু লম্বাকৃতির জন্যেই সবার কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন, তা নয়। লোকে তাকে একনামে চিনত বার্নাম অ্যান্ড বেইলি সার্কাসের কারণে।
সেখানে নিজের অস্বাভাবিক আকৃতিকে পুঁজি করে সার্কাসের স্ট্রংম্যানসহ আরও নানা কাজ করতেন অ্যাডওয়ার্ড। ১৯০৪ সালে মারা যান অ্যাডওয়ার্ড । মৃত্যুর আগে এবং এখনো পৃথিবীর সবচাইতে লম্বা কুস্তিগীর হিসেবেই পরিচিত অ্যাডওয়ার্ড বিউপরে।
ভ্যায়নো মিলিরিন : ভ্যায়নো মিলিরিনের উচ্চতা ছিল ৮ ফুট ৩ ইঞ্চি। মাত্র ৩০ বছর বয়সেই ২.৫১ মিটার উচ্চতা লাভ করেছিলেন তিনি। ১৯৪০ সালের পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পৃথিবীর জীবিত ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা হওয়ার খ্যাতিটাকে নিজের করে রেখেছিলেন ভ্যায়নো। ১৯৬৩ সালে তিনি মারা যান।
লিওনিড স্টাডনিক : লিওনিড স্টাডনিকের উচ্চতা ৮ ফুট ৫.৫ ইঞ্চি। মাত্র ১২ বছর বয়সে মস্তিস্কে অপারেশনের পর তার উচ্চতা বাড়তে থাকে। তিনি তখন বুঝতে পেরেছিলেন যে, এটা তার জন্য অভিশাপ। অতিরিক্ত উচ্চতার জন্য চলাচলে সমস্যা হতো তার।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুসারে সুলতান পৃথিবীর বর্তমান জীবিত সর্বোচ্চ লম্বা মানুষ হলেও বাস্তবে সেই জায়গাটা লিওনিডের প্রাপ্য। কিন্তু নিজেকে অন্যদের চাইতে আলাদা প্রমাণ করতে না চাওয়ায় গিনেজ বুকের স্বীকৃতি ফিরিয়ে দেন ৮ ফুট ৫.৫ ইঞ্চি উচ্চতার লিওনিড।
জন এফ ক্যারোল : আমেরিকার নিউইয়র্কের বাফেলোতে ১৯৩২ সালে জন্মগ্রহণ করেন ক্যারোল। তার উচ্চতা ৮ ফুট ৭ ইঞ্চি। তার জন্মস্থানের নামানুসারেই চিকিৎসাবিজ্ঞানে বাফেলোর দানব বলে পরিচিত তিনি। পুরোপুরি ঠিকঠাকভাবে না জানা গেলেও মনে করা হয়, ক্যারোলের উচ্চতা শেষ দিকে ৯ ফুটের কাছাকাছি পর্যন্ত পৌঁছায়।
জন রোগান : জন রোগান ছিলেন আমেরিকান নাগরিক। টেনেসির সামার কাউন্টিতে ১৮৬৫ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার উচ্চতা ছিল ৮ ফুট ৮ ইঞ্চি। চিকিৎসাশাস্ত্রে এখন পর্যন্ত ৮ ফুটের চেয়ে বেশি উচ্চতার মোট ১৭ ব্যক্তির মধ্যে ভালোভাবেই জায়গা করে নিয়েছিলেন এই মানুষটি। তবে সেটা বেশিদিনের জন্যে নয়। ১৯০৫ সালে মাত্র ৩০ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়।
রবার্ট ওয়াডলো : ১৯১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি রবার্ট পারসিং ওয়াডলো জন্মগ্রহণ করেন। প্রথম জন্মদিনে তিনি ৪৫ পাউন্ড ও ৩.৫ ইঞ্চি লম্বা ছিল। তার অষ্টম জন্মদিনে তিনি ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি অতিক্রম করেছিলেন। ৭ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতা নিয়ে মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা বয়স্কাউট হিসেবে যোগদান করেন। স্নাতক পাসের সময় তিনি ছিলেন ৮ ফুট ৪ ইঞ্চি লম্বা। তার ইউনিফর্ম তৈরি করার জন্য ৪২ ফুট সমমানের কাপড় প্রয়োজন হত। ডাক্তাররা নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন যে, রবার্টের পিটুইটারি গ্রন্থি হাইপারপ্ল্যাসিয়া দ্বারা আক্রান্ত।
সর্বশেষ পরিমাপে তিনি লম্বায় ৮ ফুট ১১.১ ইঞ্চি ছিলেন। চিকন স্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তার ওজন ছিল ১৯৯ কেজি। ১৯৪০ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে তিনি মারা যান।
সাজেদ/