• ঢাকা রবিবার
    ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বিশ্বের ১০ ভূতুড়ে শহর

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২২, ২০২২, ০২:২০ এএম

বিশ্বের ১০ ভূতুড়ে শহর

ভূতের শহর

ফিচার ডেস্ক

ভূত ও মানুষকে আলাদা করা যায় না। সংস্কৃতে ‘ভূত’ শব্দটির অর্থ অতীত। বাংলায় সাধারণভাবে ভূত হিসেবে অশরীরী প্রেত বা পিশাচকেই মনে পড়ে। ‘মরা মানুষের না-মরা ছাঁচ’কেই ভূত বলা যেতে পারে কি? হঠাৎ ভূতের কথা শুরু হল কোথা থেকে? আসলে আমরা সকলেই ভূতের গল্প পড়তে ভালোবাসি। সে আসছে, সে আসছে ভেবে অন্ধকারে বালিশ বুকে আমাদের ভয়মিশ্রিত আনন্দের শৈশব, সারাজীবন। ভূত আছে কি নেই-এই তর্ক আমাদের যে কোনো আড্ডাকেই এক লহমায় ভিন্নমাত্রা পৌঁছে দেয়।

বাংলাদেশের ভুতুড়ে জায়গা

ঘন ঘন বাড়ির জঙ্গল থেকে এ বাড়িটাকে সহজেই আলাদা করা যায়। সিমেন্ট খসে গিয়ে ইটের দেয়াল দাঁত বের করে হাসে। কার্নিশে গজিয়ে উঠেছে বট। যার শেঁকড় অনেক গভীরে। নামী প্রোমোটারও ভয় পান এ বাড়িকে বিজনেস অপরচুনিটি ভাবতে। লোকে বলে—ভূতের বাড়ি, আত্মাদেরও নাকি অনেকেই দেখতে পেয়েছেন বাড়ির অন্দরে, মাঝে মধ্যে অনেকেই কান্নার শব্দ শুনতে পান। চলেন দেখে আসি এমন কিছু ভূতুড়ে শহর-

কলম্যানস্কোপ (নামিবিয়া) : কোলম্যানস্কোপ, দক্ষিণ নামিবিয়ায় অবস্থিত একটি ভূতুড়ে শহর। লুদেরিটজ সমুদ্রবন্দর থেকে কয়েক কিলোমিটার ভেতরে। ১৯০৮ সালে নামিব মরুভূমিতে মাগনা মাগনা ডায়মন্ড পরে থাকতে দেখে কালা মানুষের মাথা খারাপ হয়ে যায়, সঙ্গে সাদা মানুষগুলো ছোক ছোক স্বভাব মোতাবেক রক্ত চুষতে চলে আসে। মাত্র দুই বছরের ভেতর আকখা মরুভুমির ভেতর একটা জাঁকজমকপূর্ণ শহরের জন্ম হয়। এমন একটা শহর, যেখানে ক্যাসিনো, স্কুল, হসপিটাল ও বিলাসবহুল আবাসিক ভবন ছিল।

নামিবিয়ার ভুতের শহর

কিছুদিন পর প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ফলে ডায়মন্ডের দাম কমে যায়। যা হবার তাই হলো, দাম কমলে কারও দাম থাকে না। তাই এখান থেকে দলে দলে লোক চলে যেতে থাকে। ১৯৫০ সালের ভেতর এই জমজমাট শহরটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। অবশেষে মরুভূমির বালু তার হারানো সাম্রাজ্য ফিরে পায়। এখন মানুষ এই ভাঙা ঘর-বাড়ি ও বালু দেখতে ২৪০০ ডলার খরচ করে।

প্রিপায়াত : প্রিপায়াত হলো উত্তর ইউক্রেনের একটি পরিত্যক্ত শহর, যাকে বলা হয় “জোন অফ অ্যালিয়েনেশন”। এটা ছিল চেরনোবিল পারমানবিক পাওয়ার প্ল্যান্ট কর্মীদের আবাসিক এলাকা, ১৯৮৬ সালে চেরনোবিল দুর্যোগের পর পরিত্যক্ত হয়। দুর্ঘটনার আগে এর জনসংখ্যা ৫০ হাজারের কাছাকাছি ছিল।

Ukraine invasion: What to know as Russian forces target Kyiv | World  News,The Indian Express

এই কিছুদিন আগে পর্যন্ত জায়গাটি কার্যকরীভাবে ছিল একটি জাদুঘর, সোভিয়েত পরবর্তী যুগের দলিল হিসেবে। অ্যাপার্টমেন্ট ভবন, সমস্ত সুইমিং পুল, হাসপাতাল এবং অন্যান্য ভবন বাতিল করে দেয়া হয়। বিল্ডিংয়ের ভেতরের সব রেকর্ড, কাগজপত্র,বাচ্চাদের খেলনা, আসবাবপত্র এবং পোশাকসহ বাকি যা ছিল তা ওভাবেই পরিত্যাগ করা হয়। অধিবাসীদের শুধু একটি স্যুটকেসে নথি, বই ও কাপড় নেবার অনুমতি পেয়েছিল যা কন্টামিনেটেড হয়নি।

তবে ২১ শতকের শুরুতে প্রায় সব অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে যা কিছু ছিল তা সম্পূর্ণভাবে ডাকাতি হয়ে যায়। ডাকাতদল এখন থেকে এমন কি বাথরুমের কমোডের ঢাকনাটাও তুলে নিয়ে যায়। দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ডাকাতির ঘটনা ছিল এটা, ব্যাপ্তিকাল ছিল কয়েকদিন। এখন পর্যন্ত জায়গাটি মানুষ বসবাসের অনুপযুক্ত।

সানঝি : উত্তর তাইওয়ানের এই আধুনিক গ্রামটি ধনীদের বিলাসি অবকাশযাপন কেন্দ্র হিসেবে নির্মাণ করা হচ্ছিল। নির্মাণের সময় এখানে একটি মারাত্মক দুর্ঘটনায় অনেকেই মারা যায়। ফলে নির্মাণকাজ স্থগিত করা হয়। পরে খরচ ও সমন্বয়ের অভাবে নির্মাণকাজ স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হয়। এই অদ্ভুতদর্শন বাড়িগুলো এভাবেই পরে থাকে।

বিশ্বের অনুধ্যুষিত কয়েকটি পরিত্যক্ত স্থান - Pikachu11‍‍`s bangla blog

গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, যারা​ ​মারা গিয়েছিল তাদের ভূত এই শহরে ঘুরে বেড়ায়। পরে এই ভূত কাহিনিই সরকার প্রজেক্ট বাতিলের কাভার আপ হিসেবে ব্যবহার করে। মানে হইল তারা উপর মহলের লোকদের ভয় দেখায়, যদি এই ভবনগুলা ভাঙা হয় তাহলে এই ভূতগুলো তাদের ক্ষতি করবে।

কারকো : ইতালির এটি ব্রাসিলিকাটার বিভিন্ন অঞ্চল। এটি মাটিরা প্রদেশে অবস্থিত টরান্টো উপসাগর থেকে ২৫ কি.মি. ভেতরে। মধ্যযুগীয় এই পাহাড়ি শহর এলাকায় পাহাড়ি গম এবং অন্যান্য ফসল চাষের জন্য আদর্শ ছিল না। ১০৬০ সাল থেকে এই শহরটির মালিকানা আর্চবিশপদের ছিল।

Lost In Time: Akrotiri, Greece - RTF | Rethinking The Future

১৮৯১ সালে কারকোর জনসংখ্যা ২০০০ ছিল, কৃষি উৎপাদনে সমস্যা ও দারিদ্রতার কারণে ১৮৯২ থেকে ১৯২২ সালের মধ্যে ১৩০০ জনের মতো অধিবাসীকে উত্তর আমেরিকা সরানো হয়। দরিদ্রতা, চাষাবাসে সমস্যা, ভূমিকম্প, ভূমিধস এবং যুদ্ধের কারণে ১৯৫৯ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে কারকো ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। ১৯৬৩ সালে অবশিষ্ট বাসিন্দাদের একটি কাছাকাছি উপত্যকায় স্থানান্তর করা হয়। এখন কারকো একটি ভূতের আবাসে পরিণত হয়েছে।

ওরাডার সুর গ্লেন : এটি ফ্রান্সের একটি ছোট্ট গ্রাম, যেখানে সব মিলিয়ে আধিবাসী ছিল ৬৪২ জন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান সেনাবাহিনী এই গ্রামের পাশের গ্রামে আক্রমণের কথা থাকলেও তারা ভুল করে এই গ্রামটিতে আক্রমন করে বসে। দিনটি ছিল ১০ জুন ১৯৪৪। ওই দিনের ভয়াবহ আক্রমনের মধ্যে যারা বেঁচে গিয়েছিল তারা বলে যে, জার্মান সেনাবাহিনী গ্রামের পুরুষদের পায়ে গুলি করে ধীরে ধীরে মৃত্যুবরণের জন্য। আর নারী ও শিশুরা যারা চার্চে আশ্রয় নিয়েছিল তাদের ভেতরে রেখেই আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

বিশ্বের কিছু ভুতুড়ে শহর

আগুনের তাপে যখন তারা বের হয়ে আসে তখন তাদের মেশিনগানের গুলিতে জীবন দিতে হয়। জার্মান বাহিনী ওই গ্রামের সব কিছু আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। ফ্রান্স এই গ্রামটিকে ঠিক ওই ভাবেই সংরক্ষণ করে আসছে স্মৃতি হিসেবে।

গুনকানজিমা : এই দ্বীপ হলো জাপানের ৫০৫টি বসতিহীন দ্বীপের একটি, যা নাগাসাকি থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে। এটি ‘গুনকানজিমা‘ অথবা ‘রণতরী দ্বীপ’ নামেও পরিচিত। ১৮৯০ সাল থেকে এখানে বসতি স্থাপন শুরু হয়, যখন ‘মিত্সুবিশি’ কোম্পানি দ্বীপটি কিনে নেয়। সমুদ্রের নিচ থেকে কয়লা আহরণের জন্য একটি প্রকল্প শুরু করেন। ১৯১৬ সালে তারা একটি বড় কংক্রিট ভবন নির্মাণ করতে বাধ্য হয়, যা শ্রমিকদের আবাসস্থল এবং সামুদ্রিক হারিকেন থেকে তাদের রক্ষা করতে ব্যবহার করা হত।

জাপানের পরিত্যক্ত দ্বীপ হাসিমা

১৯৫৯ সালে প্রতি হেক্টরে জনবসতি ছিল ৮৩৫ জন এবং আবাসিক এলাকায় এর ঘনত্ব ছিল ১৩৯১ জন। তখনকার দুনিয়ার সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ছিল এটি। ১৯৬০ সালে মানুষ কয়লার পরিবর্তে তেল ব্যবহার শুরু করে, ফলে কয়লা খনিগুলো একে একে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৯৭০ সালে “মিত্সুবিশি” কোম্পানি এই কয়লা খনি বন্ধের অফিসিয়ালি ঘোষণা দেয়। এখন সেখানে মানুষ ঘুরতেও যায় না। এর ভিডিওচিত্র পাবেন ২০০৩ সালের ছবি ‘Battle Royale II’-এ এবং এশিয়ান গেম ‘Killer7’-এর ফাইনাল লেভেলে।

ক্যাডিক্চান : যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায় তখন অনেক ছোট ছোট শহরের মতোই এই শহরটিও বিরান ভূমিতে পরিণত হয়। যারা এখানে ছিল তারা মাত্র দুদিন সময় পেয়ে অন্য এলাকায় গিয়ে নতুন ঘর তুলে জায়গা দখল করে। 

জাপানের ফুজিয়ামা কী? - Quora

তা না হলে তারা পানি, স্কুল ও চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হবে এই ঘোষণা দেয়া হয়। এই টিন মাইনিং শহরটিতে ১২০০০ লোক ছিল। তারা এই জায়গা এত তাড়াতাড়ি ছেড়ে গেছে যে, এখনও গেলে তাদের ব্যবহার করা জিনিসপত্র পাওয়া যাবে।

কওলুন ওয়ালেড সিটি : একটা সিনেমা আছে, ‘ডিসট্রিক ১৩‘ । সিনেমা পটভূমি সম্ভবত কওলুন ওয়ালেড সিটি থেকেই অনুপ্রাণিত। এই জায়গাটা ছিল হংকং-এর সামান্য দূরে। এই ঘনবসতিপূর্ণ জায়গাটা আগে ব্রিটিশ শাসিত ছিল, পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানিদের। যুদ্ধের পর চিনারাও এর দায়িত্ব নিতে চায়নি। কারণ ছিল এখানে যারা বাস করত তারা শুধু নিজেদের আইন মানতো আর কাউকে মানতো না।

The Birth of the Day - an artistic installation on the facade - Tubądzin  Design Community

এই ছোট্ট জায়গাটার ভেতর কি ছিল না!! ক্যাসিনো, পতিতালয়, ফুড কর্নার, যেখানে কুকুরের মাংস সার্ভ করত, কোকেইন পার্লার, হিরোইন পার্লার এমন কি গোপন কারখানা! পুরো শহরটাই ছিল এক ছাদের নিচে এবং এটা শুধু উপরের দিকেই বেড়েছে। ফলে এর নিচের ফ্লোরগুলোতে কখনোই সুর্যের আলো পৌঁছাতো না। ১৯৯৩ সালে এটি ভেঙে ফেলা হয়।

ফামাগুস্তা : এই জায়গাটা ছিল এক সময়ের সাইপ্রাসের ট্যুরিস্টের কেন্দ্রবিন্দু। যুদ্ধের ভয়াবহতায় যা এখন বিরান ভূমি।

আগডাম : এটাও যুদ্ধের বলি। এক সময় এখানে প্রায় দেড় লাখ লোক বাস করত। কিন্তু ১৯৯০ সালে এটি ‘the Nagorno Karabakh war‘ পরিত্যক্ত হয়ে যায়। এর ঘর-বাড়িগুলো ধ্বংস হয়ে গেলেও মসজিদগুলো এখনো টিকে আছে। আজারবাইজানে যেতে হবে এই জায়গাটি দেখতে হলে।

Famagusta - Wikipedia

অন্যান্য ভূতুড়ে শহরের মধ্যে স্পেনের জারাগোজা প্রদেশের বেলচি ১৯৩৭ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার বোদিই ১৮৭৯ সালে, তুরস্কের আন্তালিওর কায়াকোয় ১৯২৩ সালে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট এলমো ১৯২২ সালে পরিত্যক্ত হয়। ভূতুড়ে শহরের বদনামের কারণে পরিত্যক্ত হওয়া অন্য দুই শহর ইতালির নেপলসের হারকুলেনিয়াম এবং নিউ মেক্সিকোর চ্যাকো ক্যানিয়ন।

পৃথিবীতে এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেগুলোকে ভৌতিক বা অভিশপ্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ভূতের শহর হিসেবে অনেক শহর পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও রয়েছে। এর কয়েকটা ট্যুরিস্টদের জন্য উন্মুক্ত, কয়েকটি খুবই বিপদজনক আর কয়েকটি জায়গায় যাওয়া অবৈধ।

Private DayTour of Famagusta and Ghost Town From Larnaca 2023 - Viator

বিশ্ব সাহিত্যে ভূতের অস্তিত্ব রয়েছে। হলিউড থেকে টালিউড সব রুপালি পর্দাতেই ভূত নিয়ে অদ্ভুতুড়ে সব কল্পকাহিনী চিত্রায়ন করা হয়েছে। তবে ভূতসাহিত্য কিংবা সেলুলয়েডের পর্দার বাইরে বাস্তব জীবনেও ভূতকে ঘিরে অনেক কিছু ঘটে।

এমন অনেক ভূতুড়ে ঘটনা ঘটে, যার কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায় না। সে কারণেই হয়তো মানুষ ভূতে বিশ্বাস করে। যুগের পর যুগ ধরে মানুষের ভূতের বিশ্বাসের পেছনে বিশেষ কিছু কারণ রয়েছে। তবে বিজ্ঞান ভূতের বিষয়টি মানতে একেবারেই নারাজ। কিন্তু তারপরও অনেকেই ভূতে বিশ্বাস করে।

 

 

সাজেদ/

আর্কাইভ